আন্তর্জাতিক ডেস্ক : একরোখা উচ্চমূল্যস্ফীতি ও উচ্চ ঋণ খরচ যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে মন্দার দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি’স। জি২০ অর্থনীতিজুড়ে প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী পূর্বাভাসে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয় আটলান্টিকের উভয় দিকের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক সুদহার বৃদ্ধি চলতি বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যখন সুদহার বৃদ্ধি করে, তখন তা মুদ্রানীতির কঠোরতাকেই নির্দেশ করে। তাছাড়া উচ্চ সুদহার ঋণ গ্রহণকে ব্যয়বহুল করে তোলে। ফলে ভোক্তাব্যয় ও ব্যবসায়িক বিনিয়োগ কমে। এভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থরতার পতিত হয়, কারণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ঋণ গ্রহণ ও ব্যয় কমিয়ে দেয়। মুডি’সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আমরা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে হালকা মন্দা এবং ফ্রান্স ও ইতালিতে স্থবির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ প্রধান উন্নত অর্থনীতির দুর্বল প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা করছি।
মুডি’সের বিবৃতিটি ইউরোজোনজুড়ে মূলত একটি মিশ্র অর্থনৈতিক চিত্র তুলে ধরে এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ইসিবি) চ্যালেঞ্জের ওপর আলোকপাত করে। তবে ফ্রান্সের মূল্যস্ফীতি এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। ইতালির মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিও সন্তোষজনক। মে মাসে ফ্রান্সের বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার প্রত্যাশিত ৬ শতাংশের নিচে নেমে আসে, এটি এপ্রিলের ৬ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কম। ইতালির মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিও বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, যা এক মাস আগের ৮ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে মে মাসে ৮ দশমিক ১ শতাংশ হয়।
জার্মানির মূল্যস্ফীতি স্তরও ইতিবাচক, প্রত্যাশিত ৬ দশমিক ৩ শতাংশের নিচে, যা এক মাস আগে ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্পেনের মূল্যস্ফীতিও নিম্নমুখী। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর ইউরোজোনজুড়ে দ্রব্যের উচ্চমূল্যের লাগাম টানা সম্ভব হতে পারে।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ ররি ফেনেসি বলেন, ‘জার্মানি ও ফ্রান্সের মূল্যস্ফীতি বিস্ময়করভাবে কমেছে। মে মাসে ইউরোজোনে মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশার তুলনায় বেশি কমেছে, যা এপ্রিলের ৭ শতাংশ থেকে কমে মে মাসে ৬ শতাংশের কাছাকাছি আসতে পারে। জুনে মূল্যস্ফীতির হার যদি নিম্নমুখী থাকে, তাহলে জুলাইয়ের তা বৃদ্ধির সম্ভাবনাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।’
গত সপ্তাহে প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি এককভাবে উচ্চস্তরে। কারণ পরিবারগুলো বর্তমানে খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপে হিমশিম অবস্থায়। তবে জি৭ অর্থনীতির মধ্যে যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতির সর্বোচ্চ হার বিদ্যমান, যা মার্চে ছিল ১০ দশমিক ১ শতাংশ, যদিও এপ্রিলে কিছুটা কমে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ব্রিটেনের একরোখা উচ্চমূল্যস্ফীতি সম্ভবত ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সুদহারকে ৫ শতাংশের ওপরে ঠেলে দিতে পারে।
এদিকে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাব্যয় কিছুটা নিম্নমুখী। এপ্রিলে বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার নেমেছে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে। তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ মূল্যস্ফীতির হার হ্রাসের লক্ষ্যে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সময় ধরে সুদহার উচ্চস্তরে রাখতে বাধ্য হতে পারে।
চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে কিংবা ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র মন্দার মধ্যে পড়বে হবে কিনা তা নিয়ে অবশ্য অর্থনীতিবিদরাও দ্বিধাবিভক্ত। তবে কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছেন, মন্দায় আক্রান্ত না হয়েও দেশটি টেকসই অবস্থায় পৌঁছতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।