জুমবাংলা ডেস্ক : জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষাস্তর অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করার ঘোষণা ছিল ২০১৮ সালের মধ্যে। তবে আরও ছয় বছর কেটে যাচ্ছে নীতিমালার বাস্তবায়ন পরিকল্পনায়। সুনির্দিষ্ট কোনো সময়ের লক্ষ্যে না গিয়ে ঢিমেতালে চলছে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করার উদ্যোগ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষাস্তর অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীতকরণের ক্ষেত্রে একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই বিদ্যালয়ে। আবার এই স্তরের পাঠদানের জন্য শিক্ষক সংকট আছে। নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, সেজন্য প্রয়োজন পদ সৃজন। যদিও এটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। এরপর আছে প্রাইমারির বিদ্যমান শিক্ষক প্রশিক্ষণ হালনাগাদ করে নতুন মডিউলে উন্নীতস্তরের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। এসব কারণেই এখনো কোনো নির্দিষ্ট সময়বেঁেধ জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যেতে পারছে না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও এই নীতি বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। এই দুই মন্ত্রণালয়ের আগ্রহ-অনাগ্রহের দোলাচলে পেরিয়ে যাচ্ছে নীতি প্রণয়নের ১৪ বছর।
জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী, শিক্ষার স্তর হবে তিনটি। তা হচ্ছে- প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক এবং এরপর উচ্চশিক্ষা স্তর। বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নিম্নমাধ্যমিক, নবম-দশম শ্রেণি মাধ্যমিক, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি উচ্চ মাধ্যমিক এবং তার পরে শুরু উচ্চশিক্ষা।
এ প্রসঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে বলা আছে প্রাথমিক শিক্ষা হবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। এটি পর্যায়ক্রমে হবে। এটি আসলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের ব্যাপার। এখানে পলিসি মেকিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের সিদ্ধান্তে আমরা ৬৯৫টি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি চালু করেছি। এক সময় সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার কারণে নতুন বিদ্যালয় অন্তর্ভুক্ত করিনি।
সচিব আরও বলেন, সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের সমন্বয় সভায় ধারাবাহিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত এবং শতভাগ অবৈতনিক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, ৬৫ হাজার ৫৬৬টি স্কুলের মধ্যে পাঁচ হাজারের কাছাকাছি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করতে পারি। ২৩ হাজারের কাছাকাছি নিম্ন মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। এসব বিদ্যালয় যদি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক করতে পারে, তাহলে সরকারের এ সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কবে নাগাদ সব বিদ্যালয়ে পুরোপুরি অষ্টম শ্রেণি চালু হবে- জানতে চাইলে প্রাথমিকের সচিব বলেন, এটা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।
ফরিদ আহাম্মদ আরও বলেন, সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তথ্য-উপাত্ত নিয়েছি। এতে দেখা গেছে আরও ১৫৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় অষ্টম শ্রেণি চালু করার জন্য প্রস্তুত আছে এবং আগামী তিন বছরের মধ্যে আরও এক হাজার বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করার মতো অবকাঠামো আছে। তবে এটা করতে হলে কয়েকটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন- অবকাঠামো, শিক্ষক নিয়োগ ও পদ সৃজন এবং তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। কারণ, শুধু পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে- ‘প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বৃদ্ধি করে আট বছর অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। এটি বাস্তবায়নে প্রয়োজন অবকাঠামোগত আবশ্যকতা মেটানো এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপযুক্ত শিক্ষকের ব্যবস্থা করা। প্রাথমিক পর্যায়ের সব শিক্ষকের জন্য শিক্ষাক্রম বিস্তারসহ শিখন-শেখানো কার্যক্রমের ওপর ফলপ্রসূ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয় পুনর্বিন্যাস বাড়াতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার এই পুনর্বিন্যাসের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ের সব বিদ্যালয়ের ভৌত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ানো হবে। যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে আট বছরব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন ২০১৮ সালের মধ্যে ছেলে-মেয়ে, আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং জাতিসত্তা নির্বিশেষে পর্যায়ক্রমে সারাদেশের সব শিশুর জন্য নিশ্চিত করা হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।