জুমবাংলা ডেস্ক : কপোতাক্ষ নদের পাড়েই ছোট-বড় হরেক রকমের গাছপালা। এসব গাছের মধ্যে বহু পুরোনো একটি রেইনট্রির ডালে ডালে উল্টো হয়ে ঝুলে আছে শত শত বাদুড়। দেখলে মনে হবে এ যেন বাদুড়ের সাম্রাজ্য! অসংখ্য বাদুড় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চিঁ চিঁ শব্দে মুখরিত করে রাখে জায়গাটি। যশোরের ঝিকরগাছা পারবাজার গরুর হাট প্রাঙ্গণে এ দৃশ্য প্রতিদিনের।
বাদুড়ের বসবাসের কারণে জায়গাটির নাম হয়ে গেছে বাদুড়তলা। এদের দেখতে দুর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসে মানুষ। স্থানীয়দের দাবি, এদের এখনই সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
উঁচু গাছের ডালে ডালে বাদুড়ের ঝুলে থাকা একসময় ছিল গ্রামগঞ্জের স্বাভাবিক দৃশ্য। তবে এখন গ্রাম ঘুরে আগের মতো আর দেখা মেলে না উড়তে সক্ষম একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণীটির। বসবাসের জন্য উপযুক্ত গাছপালা কমে যাওয়া এবং খাবারের অভাব বাদুড়দের এই সংকটের কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
পাখির মতো উড়লেও আকৃতির কারণে এবং নানা কল্প-কাহিনির আতঙ্ক সৃষ্টিকারী প্রাণী হিসেবে উপস্থাপিত হওয়ায় বাদুড়ের কদর নেই। তবে প্রতিকূলতার মধ্যেও যশোরের ঝিকরগাছা পৌর শহরের গরুর হাট প্রাঙ্গণের ওই রেইনট্রিতে নির্ভয়ে আবাস গড়ে তুলেছে এসব বাদুড়। নদীতীরবর্তী গাছটিতে বাসা বেঁধেছে শত শত বাদুড়। গাছের শাখা-প্রশাখায় হুকের মতো পা আটকে ঝুলতে দেখবেন বাদুড়দের। সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিশাচর এই প্রাণী খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। ভোরের আলো ফোটার আগেই ফিরে আসে নীড়ে।
ঝিকরগাছা মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইলিয়াস উদ্দিন জানান, এখন যে রেইনট্রিতে বাদুড়গুলোর আবাসস্থল হয়েছে; এর পাশেই বিশাল এক তেঁতুলগাছ ছিল। আগে সেখানে এই প্রাণীদের আবাসস্থল ছিল। গাছপালা আগের মতো না থাকায় বাদুড়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তবে এই গাছে যেন পাতার চেয়েও বেশি বাদুড় আছে!
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সেবা’র সভাপতি আশরাফুজ্জামান বাবু বলেন, বাদুড়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তবে এটা গর্বের বিষয়; সেই বাদুড় ঝিকরগাছায় প্রচুর পরিমাণ রয়েছে। আমরা আনন্দিত, এই বাদুড়তলায় বাদুড়ের ডাক শোনা যায়। পূর্বপুরুষদের মুখ থেকে শুনে আসছি বাদুড়তলার গল্প। আমরা আশা করব, বন্যপ্রাণী অধিদপ্তর এই বাদুড়গুলোকে সংরক্ষণে ভূমিকা রাখবে।
স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ বাসিন্দা নজরুল মুন্সী বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাদুড়গুলোর চিঁ চিঁ শব্দে মুখরিত থাকে গাছতলা। এ প্রাণীগুলো দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে সব বয়সের মানুষ ছুটে আসে।
আব্দুল খালেক নামে এক দর্শক জানান, ‘গরুর হাটে গরু কিনতে এসেছি। এই হাটে এলেই বাদুড় দেখতে আসি। আমার জীবনে এত বাদুড় একসঙ্গে কখনো দেখিনি। এভাবে বাদুড়দের ঝুলে থাকতে দেখে অনেক সুন্দর লাগছে।’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বিভাগীয় কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল বলেন, ডানাবিশিষ্ট উড়তে সক্ষম একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী বাদুড়। খুলনা ও যশোর অঞ্চলে ১২ প্রজাতির বাদুড় রয়েছে।
ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, শতবর্ষী গাছে শত শত বাদুড় ঝুলে রয়েছে। যেন মনে হচ্ছে; পাতার চেয়ে বাদুড় বেশি। আগে অনেকেই বাদুড় ধরত। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাদুড় এখন আর ধরে না। বাদুড়ের নিরাপদ আবাসস্থলগুলো ধরে রাখতে উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে বলে জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।