জুমবাংলা ডেস্ক : ঢাকার আশপাশের নদ-নদী ও খাবার পানিতে উচ্চমাত্রার বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পিফাসের (পার অ্যান্ড পলি ফ্লুরোঅ্যালকাইল সাবস্ট্যানসেস) উপস্থিতি পাওয়া গেছে। প্রায় সব নমুনায় এই বিষাক্ত রাসায়নিক পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) এবং বৈশ্বিক জনস্বার্থ সংস্থা আইপেনের যৌথ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত করা এ গবেষণার তথ্য গতকাল বুধবার এসডোর লালমাটিয়ার কার্যালয়ে তুলে ধরা হয়।
গবেষকরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানা থেকে নির্গত হচ্ছে এসব বিষাক্ত কেমিক্যাল। এই পানি ব্যবহারে বা পান করার ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। ক্যান্সার ও লিভার নষ্টের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বলেন, বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের বিভিন্ন পণ্যে পিফাসের উপস্থিতি রয়েছে। পিফাসযুক্ত পণ্য পানি, তেল এবং দাগ-প্রতিরোধ করতে পারে বলে বৈশ্বিকভাবে এ রাসায়নিকের প্রায় ৫০ শতাংশই ব্যবহার করে পোশাকশিল্প।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ অন্যতম। কিন্তু এই খাত থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক নির্গমন জনগণকে উচ্চ ঝুঁকিতে ফেলছে। আমাদের নদী-নালা ও নলকূপের পানিতে পিফাস দূষণ ঘটছে। তাদের বাজার বিশ্বব্যাপী হতে পারে, কিন্তু দূষণ স্থানীয় পর্যায়ে বেশি হচ্ছে। এ কারণে শিল্পকারখানাকে এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। স্টকহোম কনভেনশনের সদস্য দেশ হিসেবে পিফাস নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক মান বাস্তবায়ন করা জরুরি।
এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, পিফাস পরিবেশে জমা হয়ে থাকে বলে এটি চিরস্থায়ী রাসায়নিক হিসেবে পরিচিত। এটি মানুষের উর্বরতা, ভ্রূণ বিকাশ এবং থাইরয়েড হরমোন ফাংশনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া কিছু পিফাস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, লিভার নষ্ট করে এবং ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। ইতোমধ্যে পিফাসের কিছু ধরন স্টকহোম কনভেনশনের মাধ্যমে সারাবিশ্বে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং আরও কিছু নিষিদ্ধ করতে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে পিফাস নিয়ে নির্দিষ্ট আইন নেই। তাই এ গবেষণার ফলাফল ইউরোপীয় ইউনিয়ন, নেদারল্যান্ডস এবং যুক্তরাষ্ট্রের মানদণ্ডে তুলনা করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, ৩১টি পৃষ্ঠের পানির নমুনার মধ্যে ২৭টিতেই পিফাস পাওয়া গেছে। ১৮টি নমুনায় নিষিদ্ধ পিফাস রাসায়নিক পিএফওএ, পিএফওএস অথবা পিএফএইচএক্সএস পাওয়া গেছে এবং ১৯টি নমুনায় প্রস্তাবিত ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রক সীমা (৪.৪ এনজি/এল) অতিক্রম করেছে।
২০১৯ সালে কর্ণফুলী নদীর পানিতে সর্বোচ্চ পিফাস শনাক্ত করা হয়, যা প্রস্তাবিত ইউরোপীয় সীমার চেয়ে ৩০০ গুণ। সেই নমুনায় দুটি নিষিদ্ধ পিফাসের উপস্থিতিও ছিল, যা বর্তমান ডাচ সীমার চেয়ে ১ হাজার ৭০০ গুণ থেকে ৫৪ হাজার গুণ বেশি। ২০২২ সালে হাতিরঝিল লেক থেকে নেওয়া নমুনায় পিএফওএ এবং পিএফওএস উভয়ের উপস্থিতিই ছিল ডাচ সীমার চেয়ে ১৮৫ গুণ। উচ্চ পিফাস পাওয়া নমুনাগুলোর বেশির ভাগই পোশাক শিল্পকারখানার কাছাকাছি এলাকার। ২০২২ সালে দুটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ঢাকা ও আদমজী ইপিজেড) কাছাকাছি জলপথের আপস্ট্রিম ও ডাউনস্ট্রিমের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। যেখানে ডাউনস্ট্রিমের নমুনায় উচ্চ পিফাস ঘনত্ব পাওয়া যায়। ২০১৯ সালের চারটি নলকূলের পানির নমুনার মধ্যে তিনটিতেই পিফাস পাওয়া যায়।
গবেষণায় বাংলাদেশের পোশাকও পরীক্ষা করা হয়েছে। পাঁচটি স্যাম্পল পোশাকের সবক’টিতেই পিফাস পাওয়া গেছে এবং একটি জ্যাকেটে নিষিদ্ধ রাসায়নিক পিএফওএ পাওয়া গেছে।
এসডোর গবেষণার প্রধান শাহরিয়ার হোসেন বলেন, নদী, লেক, কলের পানি এবং পোশাকে পিফাস আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করে। তবে শিল্পকারখানা ও নীতিনির্ধারকরা সাড়া দিচ্ছেন না। এ রাসায়নিকগুলো একে একে নিয়ন্ত্রণে কয়েক দশক সময় লাগবে, যা আমাদের সন্তানদের ঝুঁকিতে ফেলবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।