তুরস্কের মধ্যাঞ্চলের দিগন্তজোড়া ফসলি মাঠ এখন যেন কোনো এক অপার্থিব যুদ্ধের ক্ষতবিক্ষত রণক্ষেত্র। সেখানে শান্ত মাটির বুক চিরে হঠাৎ করেই জেগে উঠছে দানবীয় সব গহ্বর বা সিঙ্কহোল। কোথাও গভীর অতল খাদের মতো, আবার কোথাও ফসলি জমির মাঝখানে বিশালাকার গর্ত। প্রকৃতির এই রহস্যময় আচরণ স্থানীয় কৃষক ও পরিবেশবিদদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের এক ভয়াবহ সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। খবর রয়টার্সের।

কোনিয়া প্রদেশের কারাপিনার অঞ্চলে এখন মাইজ, গম আর চিনি বিটের ক্ষেতে পা ফেলার আগে শতবার ভাবছেন কৃষকরা। পাহাড়ি এলাকায় যেসব প্রাচীন সিঙ্কহোল একসময় টলটলে পানিতে ভরা থাকত, আজ সেগুলো ধূ ধূ মরুভূমি। কোনিয়া টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ফেতুল্লাহ আরিক জানান, এই অববাহিকায় সিঙ্কহোলের সংখ্যা এখন ৭০০ এর কাছাকাছি।
অধ্যাপক আরিকের মতে, ২০০০ সালের পর থেকে বিশ্বজুড়ে যে খরা ও জলবায়ু পরিবর্তন শুরু হয়েছে, তারই চরম মূল্য দিচ্ছে এই অঞ্চল। তিনি বলেন, “বৃষ্টির অভাব আর তীব্র খরার কারণে প্রতি বছর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নেমে যাচ্ছে।” আগে যেখানে প্রতি বছর পানির স্তর মাত্র আধা মিটার নামত, এখন তা ৪ থেকে ৫ মিটারে গিয়ে ঠেকেছে।
পানির এই তীব্র সংকট মেটাতে কৃষকরা বাধ্য হয়ে হাজার হাজার অবৈধ গভীর নলকূপ খুঁড়ছেন। বর্তমানে এই অববাহিকায় মাত্র ৪০ হাজার বৈধ কূপের বিপরীতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার অবৈধ নলকূপ রয়েছে। পানির এই অতিরিক্ত উত্তোলন মাটির ভেতরের ভারসাম্য নষ্ট করে বিশাল গহ্বর তৈরির পথ প্রশস্ত করছে।
যদিও এখন পর্যন্ত এই গহ্বরগুলো কোনো প্রাণহানি ঘটায়নি, তবে এদের হঠাৎ আবির্ভাব বাসিন্দাদের জীবন ও সম্পদকে চরম ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
কারাপিনারের কৃষক মুস্তাফা সিকের ফসলি জমিতে গত দুই বছরে দুটি বিশাল সিঙ্কহোল তৈরি হয়েছে। মুস্তাফা জানান, ২০২৪ সালের আগস্টে যখন দ্বিতীয় গহ্বরটি তৈরি হয়, তখন কাছেই কাজ করছিলেন তার ভাই। হঠাৎ এক বিকট গগনবিদারী শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো মাঠ, যেন মাটি নিজেই কিছু গিলে খাওয়ার জন্য মুখ হা করেছে।
ভূতাত্ত্বিক জরিপে দেখা গেছে, মুস্তাফার জমিতে আরও দুটি স্থান সিঙ্কহোল তৈরির অপেক্ষায় রয়েছে। তবে মাটির নিচের এই মরণফাঁদ ঠিক কখন উন্মুক্ত হবে, তা পৃথিবীর কোনো বিজ্ঞানের পক্ষেই আগে থেকে বলা সম্ভব নয়।
তুরস্কের এই সবুজ ভূখণ্ড এখন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে, যেখানে পায়ের নিচের মাটিই হয়ে উঠছে সবচেয়ে বড় আতঙ্ক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



