খান রফিক : ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ওই দিনই ভারতে চলে যান বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল। সশরীরে ভারতে থাকলেও এই আওয়ামী লীগ নেতার নিয়ন্ত্রণে বরিশাল। সেখানে বসেই তিনি এখানকার মৎস্য সেক্টর জিম্মি করে রেখেছেন। জানা গেছে, তাঁর পাঁচটি লাইসেন্সের মাধ্যমে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ইলিশ রপ্তানির সরকারি দর প্রতি কেজি ১ হাজার ১৯০ টাকা হলেও বরিশাল থেকে এলসি সাইজের (৯০০ গ্রাম) ইলিশ কেনা হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ টাকায়। ভারত বসে টুটুল এসব কলকাঠি নাড়াচ্ছেন।
বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, ‘কোথা থেকে কী হয়, এটা জানা নেই। এ বিষয়ে আমাদের কোনো তদারকিও নেই।’ সরকারি দর ১ হাজার ১৯০ টাকা সত্ত্বেও বরিশাল থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায় প্রতি কেজি ইলিশ কিনে কীভাবে ব্যবসা করে রপ্তানিকারকেরা—এমন প্রশ্নে বলেন, বিষয়টি অস্বাভাবিক।
নগরের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ উঠেছে প্রচুর। দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ মণ ইলিশ বেচাকেনা হয় এই মোকামে। মোকামের ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘মঙ্গলবার (গতকাল) এলসি সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১ হাজার ৭০০ টাকা। এক কেজি সাইজের ইলিশ ১ হাজার ৮৫০ টাকা এবং ১ হাজার ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১ হাজার ৯৫০ টাকা। বেশি দামে কিনে কী করে কম দামে মাছ রপ্তানি করে, তা জানা নেই।’
স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, রপ্তানিযোগ্য ইলিশ এবারও টুটলের প্রতিষ্ঠান এলসি করছে। রপ্তানির জন্য প্রচুর ইলিশ মজুত করেছেন তাঁর অনুসারীরা। টুটুলের পাঁচটি লাইসেন্সের বিপরীতে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ, মাহিমা এন্টারপ্রাইজ, এআর এন্টারপ্রাইজ, তানিশা এন্টারপ্রাইজ ও মাসফি এন্টারপ্রাইজ।
পোর্ট রোডের একাধিক মৎস্য ব্যবসায়ীর অভিযোগ, টুটুলের লোকজনের দৌরাত্ম্যে মাছের দাম বেড়ে গেছে। বিগত সময়ে টুটুল-সাদিকের প্রভাবে জেলেদের কম দামে ইলিশ বিক্রিতে বাধ্য করায় বরিশাল পোর্ট রোডে ইলিশের বোট আসা অনেকাংশে কমে গেছে। তাঁর দাপটে অন্য ব্যবসায়ীরা ইলিশ রপ্তানি করতে পারতেন না। তাঁরা জানান, বরিশাল নগর বিএনপির অফিস পোড়ানো মামলার আসামি টুটুল। অথচ ভারতে বসে নিয়ন্ত্রণ করছেন ইলিশ ব্যবসা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টুটুল তাঁর মামা বাবর সিকদারের মাধ্যমে মৎস্য ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে বাবর বলেন, এ বছরও টুটুলের পাঁচটি লাইসেন্সের বিপরীতে ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দিয়েছে সরকার। এসব বিষয়ে জানতে টুটুলের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।
রপ্তানিকারক সেভেন স্টার গ্রুপের মৎস্য ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রকিত আলী সাংবাদিকদের জানান, প্রতিযোগিতার কারণে বাংলাদেশে মাছের দাম বেশি। ব্যবসায়িক সম্পর্ক ধরে রাখতেই তাঁরা লোকসান দিয়ে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতে রপ্তানিকারক একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার বলেন, হুন্ডির মাধ্যমে ইলিশ রপ্তানি হয়। এই অনৈতিক পন্থা সবাই জানেন। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে আনেন না।
বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস জানান, এ পর্যন্ত বরিশাল থেকে প্রায় ২০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। সূত্র : আজকের পত্রিকা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।