আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিনিয়োগবান্ধব নীতি, ভিসা ও কর সুবিধাসহ নানা সংস্কারের জন্য বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউইএ)। বিশেষ করে দুবাই, আবুধাবি ও শারজার মতো চাকচিক্যময় শহরগুলো প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চমক নিয়ে হাজির হচ্ছে। এমন সময়ে ‘বিশ্বের সবচেয়ে স্থিতিশীল অর্থনীতি’র তকমা দেশটিকে কৌশলগতভাবে সামনে এগিয়ে দিল। খবর অ্যারাবিয়ান বিজনেস।
সম্প্রতি ব্র্যান্ড মূল্যায়নবিষয়ক স্বাধীন প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ড ফাইন্যান্সের জরিপে ইউএইর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি অন্য অর্জনগুলো উঠে এসেছে। এছাড়া বৈশ্বিক ‘সফট পাওয়ারের’ তালিকায় দশম স্থান অর্জন করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। কয়েক দিন আগে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার জন মেজরের নেতৃত্বে বিশ্বনেতা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয় বার্ষিক গ্লোবাল সফট পাওয়ার সামিট। তখনই এ ঘোষণা আসে।
সফট পাওয়ার সূচকের জন্য জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি ব্যক্তির ওপর জরিপ পরিচালনা করে ব্র্যান্ড ফাইন্যান্স। সেখানে সফট পাওয়ার হিসেবে ইউএইর নাম উঠে আসে শীর্ষ ১০-এ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাষ্ট্র, করপোরেশন, জনসাধারণকে আকর্ষণ বা প্রভাবিত করার ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে সফট পাওয়ার নির্ধারণ করা হয়। যার সঙ্গে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
সংযুক্ত আরব আমিরাত কয়েক বছর ধরে ব্র্যান্ড ফাইন্যান্স সফট পাওয়ার সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এর মাধ্যমে বৈশ্বিক মঞ্চে দেশটির প্রভাব ও খ্যাতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতার ইঙ্গিত দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘শক্তিশালী ও স্থিতিশীল অর্থনীতি’র সূচকে প্রথম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। মূলত টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বৈচিত্র্যকরণ মডেলের ওপর ভিত্তি করে এ মর্যাদা দেয়া হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইউএইর অর্থনীতিতে একাধিক কার্যকর কৌশল ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের সফল বাস্তবায়ন দেখা গেছে। এসব কারণে দেশটি করস্বর্গ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন খাতের আন্তর্জাতিক কোম্পানি ও উঠতি সংস্থাগুলোর কার্যালয় রয়েছে ইউএইর প্রধান শহরগুলোয়।
পর্যটন, প্রযুক্তি, পুনরায় নবায়নযোগ্য শক্তি ও আর্থিক পরিষেবার মতো সর্বাধুনিক খাতগুলোর বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে আসছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। এসব খাতে প্রণোদনার পেছনে রয়েছে প্রাথমিক আয়ের উৎস হিসেবে জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস। এক্ষেত্রে দেশটি সফল রয়েছে। একসময় জ্বালানি তেলের দামের ওঠানামার ওপর নির্ভর করলেও বৈচিত্র্যকরণ নীতি অর্থনীতিকে দেশটির স্থিতিশীলতা দিয়েছে, যা প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতির নতুন পথের পথ প্রশস্ত করেছে।
২০২৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্বালানি তেল-বহির্ভূত বৈদেশিক বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিশ্বব্যাপী মন্দা থাকা সত্ত্বেও সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনীতি মাইলফলক ৯৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের অভূতপূর্ব স্তরে পৌঁছেছে।
‘আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত নেতৃত্বের’ সূচকে ১০তম স্থানে রয়েছে ইউএই, যা আমিরাতের ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতিকে প্রতিফলিত করে। এছাড়া ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা’ সূচকে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। এটি উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়নসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দেশটির কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। এটি বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও দক্ষ ব্যক্তিদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে অবস্থানকে শক্তিশালী করে।
এছাড়া সফট পাওয়ার ইনডেক্সের ‘উদার’ সূচকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইউএই। ব্র্যান্ড ফাইন্যান্স রিপোর্ট ২০২৪ অনুসারে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ‘কূটনৈতিক প্রভাবশালী’ সূচকে অষ্টম এবং ‘ব্যবসা ও বাণিজ্য’ সূচকে বিশ্বব্যাপী ১০তম স্থান অর্জন করেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেশন ব্র্যান্ডের মূল্য তিন বছরের মধ্যে ৭০ হাজার কোটি ডলার থেকে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চলে সবচেয়ে মূল্যবান জাতীয় ব্র্যান্ড হিসেবে দেশটির অবস্থানকে দৃঢ় করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।