আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে যে অসুখগুলো আমাদের ঘরে ঘরে নিঃশব্দে হানা দিচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন। কর্মক্ষেত্রের চাপ, খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম ও বিশ্রামের অভাব—এই তিন আক্রমণে রক্তচাপের কাঁটা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে থাকে।
চিকিৎসকরা একে ‘নীরব ঘাতক’ বলেন। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই এর নির্দিষ্ট কোনো উপসর্গ থাকে না। অথচ শরীরের ভেতরে হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক বা কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করে হয়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ ও ওষুধপত্র এই রোগ মোকাবেলার প্রধান হাতিয়ার।
তবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, শুধু ওষুধের ওপর ভরসা না করে জীবনযাত্রায় কিছু সাধারণ পরিবর্তন আনলে এবং রান্নাঘরের সহজলভ্য কয়েকটি উপাদানের সাহায্য নিলে রক্তচাপকে বশে রাখা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
লবণকে না : উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইড খাওয়া কমানো।
শুধু রান্নায় কম লবণ দেওয়াই যথেষ্ট নয়, বিপদ লুকিয়ে থাকে বাইরের কেনা খাবারেও। চিপস, নোনতা বিস্কুট, চানাচুর, আচার, পাঁপড় ও বিভিন্ন ধরনের সস—এই ধরনের খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে লবণ থাকে। তাই এগুলো বর্জন করা জরুরি।
পটাশিয়ামের সঙ্গে বন্ধুত্ব : শরীরে সোডিয়ামের প্রভাব কমাতে পটাশিয়াম অপরিহার্য।
এই খনিজটি রক্তনালিকে শিথিল রাখতে এবং অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে। তাই খাদ্যতালিকায় নিয়মিত রাখুন কলা, ডাবের পানি, পালং শাক, মিষ্টি আলু, টমেটো ও বিনসের মতো পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার।
মহৌষধ রসুন : অনেক আগে থেকেই হৃদরোগের সমস্যায় রসুনের ব্যবহার হয়ে আসছে। রসুনের মধ্যে থাকা অ্যালিসিন নামক যৌগ নাইট্রিক অক্সাইডের উৎপাদন বাড়িয়ে রক্তনালিকে প্রসারিত করে। ফলে রক্তচাপ কমে।
চিকিৎসকদের একাংশের মতে, প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় উপকার মিলতে পারে।
শরীরচর্চা আবশ্যক : জিমে গিয়ে ভারী ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুতগতিতে হাঁটা, সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানোর মতো অভ্যাস গড়ে তুলুন। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে হৃদযন্ত্র শক্তিশালী হয়। হৃদযন্ত্র শক্তিশালী হলে সেটি সহজেই সারা দেহে রক্ত সঞ্চালন করতে পারে, যা ধমনীর ওপর চাপ কমায়। ফলে রক্তচাপও কমে যায়।
মানসিক চাপ : দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপের কারণে শরীরে এমন কিছু হরমোন নিঃসৃত হয়, যা সাময়িকভাবে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘমেয়াদি ভাবে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত ধ্যান, প্রাণায়াম বা গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের অভ্যাস করুন। পছন্দের গান শোনা বা বই পড়ার মতো শখও মন শান্ত রাখতে পারে।
তবে মনে রাখা জরুরি, এই ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো কোনোমতেই চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধের বিকল্প নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই রক্তচাপের ওষুধ বন্ধ করা উচিত নয়। জীবনযাত্রায় শৃঙ্খলা, সুষম আহার এবং চিকিৎসকের নিয়মিত পর্যবেক্ষণের ত্রিবেণী সঙ্গমেই এই ‘নীরব ঘাতক’কে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
সূত্র : আজকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।