বিনোদন ডেস্ক : উদ্ধারকাজ চলতে চলতে হঠাৎ সবাইকে চুপ থাকার নির্দেশ দিলেন উদ্ধারকর্মীরা। কান পেতে শুনছেন কোনো জীবিত মানুষের গোঙানির শব্দ পাওয়া যায় কিনা, সেই আশায়। কারণ উদ্ধারকারী দলটি জানতে পেরেছে, এ ধ্বংসস্তূপের নিচে মারভি ও ইরেম নামে দুই বোন আটকা পড়ে আছেন।
কোনো দিকে কোনো সাড়া না পেয়ে উদ্ধারকর্মী মুস্তফা ওজতুর্ক তাদের নাম ধরে চিৎকার করে ডাকতে থাকেন। কিন্তু সেখানেও কোনো সাড়া আসছে না। সবার ধারণা, ভেতরে আটকা পড়া সবাই ঠান্ডায় জমে আছে।
উদ্ধারকর্মী মোস্তফা আবারও ডাকতে থাকেন, ‘ইরেম, আমি আপনার খুব কাছে আছি। আপনি আমাকে শুনতে পারছেন, হ্যাঁ।’ এই ডাকে অন্যরা কোনো সাড়া শুনতে না পেলেও মুস্তফা নিশ্চিত হয়েছেন যে ভেতর থেকে কেউ সাড়া দিচ্ছেন। আসলে সাড়া দিয়েছেন মারভে। উদ্ধারকারী দলটির সঙ্গে দুই বোন মারভে ও ইরেমের একটি বন্ধু দলও আছে।
মারভির বয়স ২৪ বছর আর তার বোন ইরেমের বয়স ১৯। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় আন্তাকিয়ায় তাদের পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্ট ছিল। ভূমিকম্পে তা ধসে গেছে। সেই ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে দুই বোন। ইতিমধ্যে আটকে থাকার দুই দিন কেটে গেছে। কিন্তু দুই বোনের কাছে ওই দুই দিন যেন এক সপ্তাহের মতো দীর্ঘ মনে হয়েছে।
ভেতর থেকে কথা শুনে মুস্তফা বলতে থাকেন, ‘আজ বুধবার। না! আপনি ১৪ দিন ধরে আটকে ছিলেন না। আমাদের পাঁচ মিনিট সময় দেন। আপনাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হচ্ছে।’
মুস্তফা আবারও দুই বোনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমরা দ্রুত আপনাদের কাছে কম্বল পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।’ ওপাশ থেকে জবাব আসছে, ‘আরেহ না, আমাদের নিয়ে কোনো চিন্তা করার দরকার নেই। আমরা ক্লান্ত নই আর আমাদের ঠান্ডাও লাগছে না।’
এ ঘটনার ৩০ মিনিট পর মুস্তফাসহ চারজন উদ্ধারকর্মী আবারও ওই ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে যেখানে গর্ত খোঁড়ার চেষ্টা করছিলেন, সেখানে যান। আবারও গর্ত খোঁড়া শুরু হয়েছে। আলো নিভে গেছে, এখন পুরো অন্ধকার। দুই বোন মুস্তফার টর্চ থেকে আসা আলো দেখতে পান কি না, তা দেখার জন্য কংক্রিটে একটি ছোট্ট গর্ত করা হয়েছে। মুস্তফা বলতে থাকেন, ‘মারভি! ইরেম! আপনারা কি আলো দেখতে পারছেন? ঠিক আছে! আমি একটি ছোট্ট ক্যামেরা পাঠাচ্ছি। এটি দেখা থাকলে আমাকে বলুন। এরপর কী করতে হবে তা আমি বলে দেব।’
মারভি ও ইরেম ক্যামেরাটি নিতে পেরেছেন। উদ্ধারকারী দলের নাইটভিশন ক্যামেরার সঙ্গে ওই ক্যামেরাটি যুক্ত। উদ্ধারকারীরা এখন দুই বোনকেই স্ক্রিনে দেখতে পারছেন। ইরেম হাসছেন। ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়লেও ভেতরে তাদের দুজনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে। সবার মুখেই স্বস্তির হাসি।
কিন্তু মারভির কথায় দ্রুত উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে উদ্ধারকারী দল। কারণ, মারভে তাদের বলেছেন, এখন তার খুব ঠান্ডা লাগছে এবং পায়ে ভারী কিছু আটকে আছে। এ কথা শুনে চিকিৎসকেরাও চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাহলে কি মারভের পায়ে গ্যাংগ্রিন আছে নাকি হাইপোথার্মিয়ার প্রথম লক্ষণ?
ভোর পাঁচটা নাগাদ যতটুকু গর্ত খোঁড়া হয়েছে, তা একজন পাতলা উদ্ধারকারীর হামাগুড়ি দিয়ে ভেতরে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। উদ্ধারকারীরা কয়েক মুহূর্তের জন্য ইরেমের হাতের কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরছিলেন। তারা ইরেমের হাতও ধরে রেখেছিলেন।
উদ্ধারকারীদের ইরেম জানিয়েছেন, ‘আমাদের মায়ের শরীর থেকে দুর্গন্ধ আসা শুরু হয়েছে। আমরা ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছি না।’ এর অর্থ হলো মারভি ও ইরেম কয়েক দিন ধরেই তাদের মায়ের মরদেহের পাশে আটকা পড়ে আছেন।
সকাল সাড়ে ছয়টা। চিকিৎসকেরা থার্মাল কম্বল ও স্ট্রেচার নিয়ে প্রস্তুত। গর্ত দিয়ে প্রথম ইরেমকে বের করে আনা হয়। বাইরে বের হয়ে তিনি একই সঙ্গে হাসছেন ও কাঁদছেন। তিনি এবার মারভিকে উদ্ধার করে আনার জন্য অনুরোধ করতে থাকেন। কিন্তু তাকে বের করে আনতে আরও ৩০ মিনিট সময় বেশি লেগে যায়। কংক্রিটের নিচ থেকে তার পা মুক্ত করে একটি সার্জারি করা হয়। তাকে যখন উদ্ধার করা হয় তখন, আনন্দে সবাই হাততালি দিতে থাকেন। ব্যথায় চিৎকার করতে করতে মারভি বলছেন, ‘আমি কি সত্যি সত্যি বেঁচে আছি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।