স্পোর্টস ডেস্ক : যুক্তরাজ্যে নারীদের প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলায় ‘ট্রান্সজেন্ডারের’ অংশগ্রহণ নিয়ে বিতর্ক চলছেই। বেশ কিছু ফেডারেশন ইতোমধ্যে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রতিযোগিতায় ট্রান্সজেন্ডার খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেছে। যুক্তরাজ্য সরকারও এটার পক্ষে। তারা দেশটির ফুটবল সংস্থা (এফএ) ও ক্রিকেট বোর্ডকে (ইসিবি) ট্রান্সজেন্ডার খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার আহব্বান জানিয়েছে।
মঙ্গলবার দেশটির সংস্কৃতি মন্ত্রী লুসি ফ্রেজার এফএ ও ইসিবিকে নারীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রতিযোগিতায় ট্রান্সজেন্ডার খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার আহব্বান জানিয়েছেন।
লুসি স্কাই নিউজকে বলেছেন, ‘আমি মনে করি নারীরা কেবল নারীদের বিপক্ষেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম হয়। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি তখনই সহজাত একটি অন্যায় হয় যখন আপনি জৈবিকভাবে একজন নারী না হয়েও নারীদের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পান।’
‘আমরা দেখেছি ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ফেডারেশন এটিকে খুব সিরিয়াসলি দেখেছে এবং এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, নারীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রতিযোগিতায় জৈবিকভাবে নারী নয় এমন কারও অংশগ্রহণ যথোপযুক্ত নয়।’
‘এমন সিদ্ধান্ত নিতে আমরা রোয়িংয়ে দেখেছি, সাঁতারে দেখেছি। এখন আমি এফএ এবং ইসিবি-সহ অন্যান্য ক্রীড়া সংস্থাকে এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে আহব্বান জানাচ্ছি।’
শুধু সাঁতার কিংবা রোয়িংয়ে নয়- ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের অ্যাথলেটিক্স, সাইক্লিং ও রাগবিতেও ট্রান্সজেন্ডারদের অংশগ্রহণ একপ্রকার নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে। তাদের কোনো প্রতিযোগিতায় ট্রান্সজেন্ডারা অংশগ্রহণ করতে পারেন না।
তবে দেশটির ফুটবল ও ক্রিকেটে কিছু ট্রান্সজেন্ডারের অংশগ্রহণ আছে। সেটাও অবশ্য নির্দিষ্ট ও বিশেষ ক্রাইটেরিয়া মেনে। যুক্তরাজ্যে নারীদের ফুটবল ট্রান্সজেন্ডাররা কেবল টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নির্দিষ্ট মাত্রায় কমিয়ে অংশ নিতে পারেন।
অন্যদিকে ইসিবি’র গাইডলাইন্স অনুযায়ী ক্রিকেটে ট্রান্সজেন্ডাররা তাদের দাবিকৃত লিঙ্গ অনুযায়ী অংশ নিতে পারেন। তবে বড় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় ট্রান্সজেন্ডারদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে লিখিত ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হয়।
বর্তমানে এফএ ও ইসিবি তাদের চলমান এই পলিসি রিভিউ তথা পুনঃমূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যুক্তরাজ্য সরকারের ২০২৩ সালের নীতিমালা অনুযায়ী নারীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক খেলাধুলায় ট্রান্সজেন্ডার খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ কঠোরভাবে নিরুসাহিত করা হচ্ছে এবং নিষিদ্ধের দিকে নির্দেশ করছে। পলিসি অনুযায়ী- টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে অংশ নিলেও ট্রান্সজেন্ডাররা নারীদের প্রতিযোগিতায় বায়োলজিক্যাল সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শুধু যুক্তরাজ্য সরকারই নয়, বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ফিফাও তাদের অভ্যন্তরীণ ওয়ার্কিং গ্রুপের মাধ্যমে নারীদের ফুটবলে ট্রান্সজেন্ডারের অংশগ্রহণের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এ বিষয়ে ফিফার কাজ চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে ফিফার মহাসচিব (ভারপ্রাপ্ত) মাতিয়াস গ্রাফস্ট্রোম স্কাই নিউজকে বলেছেন, ‘আসলে আমরা চাই ফুটবলের পরিবেশটা নিরাপদ ও সর্বব্যাপী থাকুক। এটাই আমাদের অগ্রাধিকার। তবে নির্দিষ্ট এই বিষয়ে (ট্রান্সজেন্ডার) উদ্ভুত পরিস্থিতি মাথায় রেখে বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। যদিও এটা একটা জটিল বিষয়।’
এদিকে যুক্তরাজ্যের ট্রান্সজেন্ডার খেলোয়াড়রা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক খেলাধুলায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের অংশ নিতে না দেওয়াটা একপ্রকার বৈষম্য। খেলাধুলা থেকে তাদের নিবৃত্ত করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ট্রান্সজেন্ডার সাইক্লিস্ট এমিলি ব্রিজেস প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক খেলাধুলায় তাদের অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি মানতে রাজি নন। তাকে সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে না দেওয়াটাকে তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন।
তথ্যসূত্র: স্কাই নিউজ, টেলিগ্রাফ ও ইনসাইড স্পোর্ট
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।