জনদুর্ভোগ বিবেচনায় নিয়ে এবং বিদ্যুৎ উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের আশ্বাস পেয়ে গণছুটি কর্মসূচি স্থগিত করেছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক মাহবুবুর রহমান। তিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের প্রতি আস্থা রেখে দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের কর্মস্থলে যোগদানের জন্য অনুরোধ করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পিবিএস) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আন্দোলন শুরু করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও পিবিএস সংস্কারের মাধ্যমে গ্রাম ও শহরের বিদ্যুৎ বৈষম্য দূর করে মানসম্মত ও নিরবচ্ছিন্ন সেবার লক্ষ্যে একটি টেকসই বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণ। কিন্তু দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বিভিন্ন সময়ে একাধিক কমিটি গঠন করলেও আরইবির অসহযোগিতার কারণে তা বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের অভিযোগ, আরইবির দুঃশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই শুরু হয় মামলা, চাকরিচ্যুত, বরখাস্ত, সংযুক্তসহ নানা ধরনের দমন-পীড়ন। গত ২১ মে থেকে শহীদ মিনারে ১৬ দিনব্যাপী আন্দোলনের পর বিদ্যুৎ বিভাগের লিখিত আশ্বাসে ৫ জুন কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ জুন বিদ্যুৎ বিভাগ দুটি কমিটি গঠন করে। কিন্তু কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না করে আরইবি সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দমন-পীড়নের মাধ্যমে হয়রানি এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
মাহবুবুর রহমান জানান, আন্দোলনের কারণে এখন পর্যন্ত ১৭২ জনের নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা, ২০ কর্মকর্তাকে দীর্ঘদিন জেল খাটানো, ৪০ জনকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত, ৮৭ জনকে বরখাস্ত ও সংযুক্ত এবং ৬ হাজার ৫০০ জনকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। গত ১৭ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আটজনকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত এবং ২৮ জনকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করে বরখাস্ত করা হয়েছে।
সংকট সমাধানের লক্ষ্যে চার দফা দাবিতে গত ৩১ আগস্ট থেকে পাঁচ দিন শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। তারপরও দমন-পীড়ন বন্ধ না করা এবং সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ না নেওয়ায় বাধ্য হয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে গণছুটি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় বলে মাহবুবুর রহমান জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন করে পেশাগত বৈষম্য দূর করতে প্রায় দুই বছরের আন্দোলনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং গ্রাহকসেবা বন্ধ রাখেনি। গণছুটি কর্মসূচিতে ৮০টি সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে প্রায় ৩৩ হাজার কর্মী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে উপকেন্দ্রগুলো চালু রাখা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে সমিতির সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ না থাকায় আরইবি থেকে বারবার ভুল তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগকে বিভ্রান্ত করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা উপেক্ষা করে সমিতির কর্মীদের দেশবিরোধী শক্তি, নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্রকারী ইত্যাদি ট্যাগ বা তকমা দেওয়া হচ্ছে, যা অপ্রত্যাশিত। যারা রোদ, ঝড়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ১৪ কোটি মানুষের ঘর আলোকিত করেন, তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেশবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করা অনভিপ্রেত।
মাহবুবুর রহমান বলেন, সমিতির কর্মীরা যে দেশবিরোধী শক্তি নন সেটি গণছুটি কর্মসূচি প্রত্যাহার ও সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রমাণের জন্য বিদ্যুৎ উপদেষ্টা আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের বিষয়ে উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে আশ্বস্ত করা হয়েছে। তাই দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট ও জনদুর্ভোগ বিবেচনায় এবং সংকটের সুষ্ঠু সমাধানে সরকার তথা উপদেষ্টার প্রতি আস্থা রেখে চলমান গণছুটি কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এই আস্থার প্রতিফলন দেখা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন মাহবুবুর রহমান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।