জুমবাংলা ডেস্ক : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর প্রায় ২০ দিন অতিবাহিত হলেও কোনো ডিম আমদানি করা হয়নি। কবে নাগাদ আমদানির অনুমতি পাওয়া ১০ কোটি পিস ডিম দেশে আনতে পারবে- সেই নিশ্চয়তাও দিতে পারছে না আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। অনুমতি পাওয়া দশটি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত ডিম আমদানি করে তা দেশে নিয়ে আসার জন্য তাগাদা দিচ্ছে সরকার। খুচরা বাজারে ডিমের দাম কমছে না, বিক্রি হচ্ছে আগের মূল্যে। বর্তমান খুচরা বাজারে প্রতিহালি ডিম মানভেদে ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ডিম বিক্রি হলে প্রতিহালি ডিম ভোক্তারা ৪৮ টাকায় কিনতে পারতেন। প্রতিটি ডিমের দাম হতো ১২ টাকা।
জানা গেছে, ডিম আমদানির বিষয়ে অনীহা বাড়ছে অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর। নানা অজুহাতে এখন তারা ডিম আমদানি করতে চাচ্ছে না। আমদানি ট্যাক্স কমানোর আশায় সময়ক্ষেপণ করার কৌশল নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ডিম উৎপাদনকারী দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে এখন তারা আমদানির প্রক্রিয়া থেকে সরে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নজরে আসলে অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত আমদানি করে ডিম দেশে নিয়ে আসার বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, ডিম আমদানির বিষয়ে অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আর তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অথচ কয়েকশ’ প্রতিষ্ঠান ডিম আমদানির অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। এরমধ্য থেকে যাচাই-বাছাই শেষে দশটি প্রতিষ্ঠানকে আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও তারা এখন ডিম আনছে না। বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নজরে আসায় এ বিষয়ে তাদের মৌখিক তাগাদা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে ডিম আমদানির অনুমতি পত্র (আইপি) দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলে এখন পর্যন্ত আটটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আইপি নেওয়া হয়েছে। অথচ গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে দুদফায় দশটি প্রতিষ্ঠানকে দশ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- চিজ গ্যালারি, পপুলার ট্রেড সিন্ডিকেট, এমএস রিপা এন্টারপ্রাইজ, এসএম করপোরেশন, বিডিএস করপোরেশন, মেসার্স জয়নুর ট্রেডার্স, মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্স, টাইগার ট্রেডিং ও অর্ণব ট্রেডিং লিমিটেড। অনুমতি পাওয়ার পর প্রায় ২০ দিনের মাথায় একটি ডিমও আমদানি করতে পারেনি এসব প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাগাদা দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যাও চাওয়া হতে পারে। তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের চাওয়া এ মুহুর্তে চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে দশ কোটি ডিম আমদানি করা হোক। এ কারণে অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সচিবের দপ্তর থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। এদিকে, প্রথমবার ডিম আমদানির অনুমতির সঙ্গে চারটি শর্ত দিয়েছে সরকার। প্রথমত, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লুমুক্ত দেশ থেকে ডিম আমদানি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমদানি করা ডিমের প্রতিটি চালানের জন্য রপ্তানিকারক দেশের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের দেওয়া এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু ভাইরাস ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ামুক্ত সনদ দাখিল করতে হবে।
এছাড়া নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি করা যাবে না এবং সরকারের অন্যান্য বিধিবিধান প্রতিপালন করতে হবে। ডিম আমদানির ক্ষেত্রে এসব শর্ত বহাল রেখেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ডিম আমদানির বিষয়ে সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সচিবালয়ে বলেন, সরকারের লক্ষ্য দেশের বাজারে ডিমের দাম কমিয়ে আনা। সে জন্য আমদানির অনুমতি দেওয়া শুরু হয়েছে। ডিমের দাম না কমা পর্যন্ত এটা অব্যাহত রাখা হবে। অন্যদিকে, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দাবি করেছে, বাংলাদেশের আমদানির খবরে ইতোমধ্যে ভারতে ডিমের দাম বেড়ে গেছে। ভারতে প্রতিটি ডিমের দাম এখন ৫.৭০ রুপির আশপাশে, যা আমদানির অনুমতি পাওয়ার আগে ছিল ৪.৮০-৪.৯০ রুপি করে। আমদানিকারকরা বলছেন, প্রতিটি ডিম বাংলাদেশে আসতে খরচ পড়বে কমপক্ষে ১০ টাকা। কারণ হিসেবে বলছেন, একদিকে ভারতে ডিমের দাম বেড়েছে, অন্যদিকে প্রতিটি ডিমের ওপর সরকারকে অন্তত ২ টাকা করে ট্যাক্স প্রদান করতে হবে। প্রতিটি ডিমে দুই টাকা করে শুল্ক থাকায় বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করা নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ডিমের বাজারের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রতিটি ডিমের খুচরা মূল্য ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। যদিও আমদানির অনুমতি পাওয়ার পরপরই প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, প্রতিটি ডিম সর্বোচ্চ ৯-১০ টাকায় ক্রেতারা কিনতে পারবেন। প্রতিদিন দেশে প্রায় চার থেকে সাড়ে চার কোটি পিস ডিমের চাহিদা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে হঠাৎ করেই ডিমের দাম বাড়তে শুরু করে। ১৪৫-১৪৮ টাকা ডজন হিসেবে বিক্রি হওয়া প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৭০ টাকায় উঠে যায়। পিস হিসেবে কোথাও কোথাও প্রতিটি ডিম বিক্রি হয় ১৫ টাকায়। প্রায় সপ্তাহখানেক এই অবস্থা চলার পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ প্রকাশ করে ১০.৫০ টাকা এবং খুচরায় ১২ টাকার বেশি দামে ডিম বিক্রি হলে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়। ওই সময় ডিম উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, লোকসানে পড়ে খামার বন্ধ করে দেওয়ায় ডিমের উৎপাদন কমে গেলেও চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বাজারে সরবরাহ স্বল্পতার কারণে সে সময় ডিমের দাম বেড়ে যায়। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ডিমের উৎপাদন ৪.৫-৫ কোটি পিস হলেও অস্থিরতার সময়ে তা চার কোটি পিসের নিচে নেমে আসে। বাজারে হঠাৎ অস্থিরতা তৈরি হওয়ার কারণ জানতে প্রতিযোগিতা কমিশন একটি তদন্ত দলকে সরেজমিন অনুসন্ধানে পাঠায়।
একই সঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর একটি তদন্ত প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও প্রতিযোগিতা কমিশনকে প্রদান করে। এই দুটি প্রতিবেদনেই ডিমের বাজারে অস্থিরতা তৈরির পেছনে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের কারসাজি ধরা পড়ে। প্রতিযোগিতা কমিশনের অনুসন্ধানে উঠে আসে, মোট ১০টি কোম্পানি ও তাদের সমিতিগুলো পারস্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে বাজারে ডিমের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেয়। একইসঙ্গে বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতায় বিঘœ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারে বলে সুপারিশ করে ভোক্তা অধিদপ্তর। কমিশনের সভাতেও সিদ্ধান্ত হয় ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর কথিত সিন্ডিকেট প্রতিরোধে কার্যকর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।