ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তে শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নিহত তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রাইসা মনির (৯) জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকাল সোয়া ৯টার দিকে জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া দক্ষিনপাড়া ঈদগাহ ময়দানে জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে বাজড়া শামসুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানা গোরস্থানে মরদেহের দাফন সম্পন্ন করা হয়। জানাজায় আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল, সেনাবাহিনী ও গ্রামবাসী অংশ নেন।
জানা যায়, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের পর থেকে নিখোঁজ ছিল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রাইসা মনি (৯)। দুর্ঘটনার পর থেকে রাইসাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শিশুটির মুখমণ্ডলের অংশবিশেষ দেখে রাইসা হিসেবে দাবি করেন বাবা শাহাবুল শেখ (৪৪)। বাবার দাবির প্রেক্ষিতে সিএমএইচ থেকে মঙ্গলবার বিকেলে মরদেহের ডিএনএ সংগ্রহ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
ডিএনএ রিপোর্টে রাইসার মরদেহ শনাক্ত হলে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাত ১১টার দিকে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। শুক্রবার সকালে রাইসার মরদেহ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া গ্রামে পৌঁছালে শোকে আশপাশের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সকাল থেকেই নিহত রাইসার বাড়িতে আত্মীয় স্বজন ও গ্রামবাসীর কান্না এবং মাতম চলছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রাইসা মনি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া গ্রামের শাহাবুল শেখ ও মীম আক্তারের মেয়ে। পরিবার পরিজন নিয়ে রাইসার বাবা শাহাবুল শেখ ঢাকার উত্তরা নয়ানগরে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। শাহাবুল একটি গার্মেন্টস এক্সেসরিস প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী।
রাইসা মণিরা দুই বোন ও এক ভাই। বোনের মধ্যে রাইসা মেজো। সে ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। বড়ো বোন সিনথিয়া (১৪) একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ভাই রাফসান (৪) সবার ছোট।
রাইসা মনির বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল ছেলে-মেয়েকে ভালো স্কুলে পড়ানোর। উচ্চশিক্ষায় সুশিক্ষিত করে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে তাকে ভর্তি করেন।
রাইসার চাচা ইমদাদুল শেখ বলেন, এ দুর্ঘটনার পর থেকে রাইসা নিখোঁজ ছিল। আমরা তাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বিভিন্ন স্থানে ও হাসপাতালে খোঁজখবরের পর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) গত মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে তার মরদেহের সন্ধান পাই। তার বাবা পুড়ে যাওয়া মুখমণ্ডল দেখে নিখোঁজ মেয়ে রাইসার বাবা শনাক্ত করেন। গত রাতে বাড়িতে এসেছি। আজ শুক্রবার সকাল সোয়া ৯টায় জানাজা সম্পন্ন করে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
গোপালপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ওবায়দুর রহমান বলেন, রাইসা মনির অকাল মৃত্যুতে পুরো এলাকার মানুষ শোকে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে। তার মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর পর হৃদয়-বিদারক দৃশ্যের তৈরি হয়। এমন কোনো মানুষ নেই যে মেয়েটির জন্য কেউ কাঁদেনি।
জানাজায় উপস্থিত আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল বলেন, উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দূর্ঘটনায় রাইসা মনি মারা যায়। এ শোক সইবার মত না। আল্লাহ পাক যেন তার মা-বাবাকে মেয়ের শোকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দেন। আমরা উপজেলা প্রশাসন রাইসা মনির পরিবারের পাশে আছি। আমরা সবাই তার জন্য দোয়া করব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।