আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইয়েমেনভিত্তিক হাউছি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের হামলার প্রেক্ষাপটে ধারণা করা হচ্ছে যে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্ঘাত ছড়িয়ে পড়বে। হাউছিরা এসব হামলার প্রতিশোধ গ্রহণের কথা জানিয়েছে। ইরান-সমর্থিত গ্রুপটি লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা এবং গাজায় হামাসকে সমর্থন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। হাউছিরা ইতোমধ্যেই তাদের শক্তির বিষয়টি জানান দিয়েছে।
লড়াইয়ে হেলিকপ্টার ছাড়াও হাউছিরা তাদের সাম্প্রতিক হামলাগুলোতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।
বিশেষ করে বাণিজ্যিক জাহাজে মনুষ্যবিহীন উড়ন্ত যান বা কথিত ‘কামিকাজে ড্রোন’ ব্যবহার করে হামলা করেছে তারা।
এর আগে তারা কাসেফ ড্রোন ব্যবহার করত। এছাড়া ভি-আকৃতির এয়ারক্রাফটের সাথে দূরপাল্লার সামাদ।
হাউছিরা বেশিরভাগ অস্ত্রশস্ত্রই পেয়েছে সৌদি আরবের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে চলা সংঘাতের সময়।
যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্ররা মনে করে, হাউছিরা ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ও ড্রোনসহ এসব অস্ত্র ও উপকরণ পেয়েছে ইরানের কাছ থেকে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র জানায় তাদের নৌবাহিনী আরব সাগরে ক্রুজ মিসাইল বহনকারী একটি নৌযানকে আটকে দিয়েছে, যেটি ইরান থেকে হাউছি বিদ্রোহীদের কাছে যাচ্ছিলো।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার প্রথম দিনের হামলায় তারা রাতভর ষোলটি হুথি অবস্থানকে লক্ষ্য করে বিমান ও নৌ আক্রমন চালিয়েছে। যেসব স্থানে হামলা চালানো হয়েছে তার মধ্যে আছে হাউছিদের কমান্ড সেন্টার, অস্ত্রাগার এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রবাহকে সুরক্ষা দিবে। তিনি জানিয়েছেন নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও বাহরাইন হাউছিদের ওপর হামলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছে।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, ‘এই হামলা ছিল সীমিত, প্রয়োজনীয় এবং আত্মরক্ষায় ন্যায্য পদক্ষেপ’।
তবে ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের হামলার নিন্দা জানিয়ে এই হামলাকে ‘অবৈধ’ আখ্যায়িত করেছে রাশিয়া।
হাউছিদের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে হুঁশিয়ার করে বলেছে, এই ‘নির্মম আগ্রাসনের’ জন্য তাদেরকে ‘চড়া মূল্য দিতে হবে।’
হামলা কোথায় কোথায় হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা ইরান-সমর্থিত হাউছিদের ষোলটি অবস্থানে ৬০টি লক্ষ্যবস্তুতে টার্গেট করে হামলা চালিয়েছে।
পেন্টাগন বলেছে, এই টার্গেটের মধ্যে ছিল রাডার সিস্টেম, ড্রোন স্টোরেজ এবং উৎক্ষেপণ কেন্দ্র, ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ রাখার জায়গা ও উৎক্ষেপণ এলাকা এবং হাউছি কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার।
হাউছি-নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের রাজধানী সানায় হামলার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া হাউছিরা নিয়ন্ত্রণ করছে এমন কিছু এলাকায় হামলা হয়েছে যার মধ্যে আছে হোদেইদা বন্দর, ধামার এবং হুথিদের শক্ত ঘাঁটি সাদা।
হাউছিরা জানিয়েছে, হামলায় তাদের পাঁচজন মারা গেছে এবং ছয়জন আহত হয়েছে।
পেন্টাগন বলেছে, সামরিক স্থাপনায় হামলা হয়েছে এবং কোনো বেসামরিক স্থাপনায় হামলা করেনি তারা।
এটি ইসরাইল-হামাস সংঘাতের অংশ নয়, বলছে পেন্টাগন
পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি মেজর জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হাউছিদের সুনির্দিষ্ট স্থাপনায় হামলার পর তারা কোনো পাল্টা পদক্ষেপ দেখেননি।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা অবশ্যই যথাযথ জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।’
বিবিসির যুক্তরাষ্ট্রের পার্টনার সিবিএসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, লোহিত সাগর এলাকায় যা ঘটছে তার সাথে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের বিষয়টি পার্থক্য করাটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
রাইডা বলেন, ‘হুথি বিদ্রোহীরা আন্তর্জাতিক জাহাজে হামলা করছে। পঞ্চাশটির বেশি দেশ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সুতরাং এটি ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের অংশ নয়।’
হাউছিরা হামাসের প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণা করেছে। গত নভেম্বর থেকে তারা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে কমপক্ষে বিশটি হামলা করেছে। এসব হামলায় ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, দ্রুতগামী নৌকা ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছে।
তারা দাবি করেছে, এসব জাহাজ ইসরাইলের সাথে সম্পৃক্ত।
তেলের দাম ৪ শতাংশ বেড়ে গেছে
হাউছি বিদ্রোহীদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের হামলার পর শুক্রবার সকালের তেলের দাম ৪ শতাংশ বেড়েছে।
ওই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যার মধ্যে ওই অঞ্চল থেকে তেলের সরবরাহকে হুমকিতে ফেলতে পারে।
হাউছিদের হামলা সীমাবদ্ধ ছিল লোহিত সাগরে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছে, এই উত্তেজনা যদি হরমুজ প্রণালী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তেলের সরবরাহে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
হরমুজ প্রণালী ব্যবহার করে প্রতিদিন দুই কোটি ব্যারেল তেল পরিবহন হয়ে থাকে, যা বৈশ্বিক তেল চাহিদার ২০ শতাংশ।
উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা কতটা
ইরান কখনোই ইয়েমেনে হাউছিদের সহায়তায় সরাসরি সামরিক অভিযানে জড়ায়নি। যদিও হাউছিদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন সরবরাহ করে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব লঙ্ঘনের অভিযোগ আছে দেশটির বিরুদ্ধে।
ইরান সবসময়ই এ ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তারপরেও হাউছিদের সামরিক সক্ষমতা গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
গত সপ্তাহে যখন যুক্তরাজ্য সম্ভাব্য সামরিক হামলার বিষয়টি প্রকাশ করে তখনই লোহিত সাগর অঞ্চলে ইরানের যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের খবর পাওয়া যায়।
তবে একে সামরিক হুমকি মনে না করে প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবেই ব্যাখ্যা করেছে অনেকে।
এখন গাজায় চলমান সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে ইরানের অবস্থান হলো ইসরাইলকে জবাব দেয়ার জন্য যেকোনো উদ্যোগকে সহায়তা করা।
কিন্তু তা সত্ত্বেও লোহিত সাগর এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য জোট ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা কম।
অপ্রচলিত গেরিলা যুদ্ধের জন্য ইরানের আল কুদস ফোর্স পরিচিত হলেও সেটি পাল্টে তাদের সীমিত সক্ষমতাকে সরাসরি সংঘাতে রূপান্তর দেশটির জন্য কঠিন।
সূত্র : বিবিসি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।