জুমবাংলা ডেস্ক: ‘পানিরও তো একটা দাম আছে। কিন্তু তরমুজের তার চেয়ে দাম কম।আমি ১০ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম। মোটেও বিক্রি হয়নি। ক্ষেতেই পড়ে রয়েছে তরমুজ।’ কান্নারত কণ্ঠে মঙ্গলবার (১০ মে) বিকেলে কাছে এভাবে নিজের অভিযোগ করছিলেন খুলনার দাকোপের আনন্দনগর গ্রামের তরমুজ চাষি শেখ আবু সাঈদ। বাংলানিউজ-এর প্রতিবেদক মাহবুবুর রহমান মুন্না’র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
এ সময় তিনি বলেন, ৫-১০ কেজি ওজনের একটি তরমুজ ক্ষেত থেকে ১০-২০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। সেই তরমুজ বাজারে ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাষির কাছ থেকে কম দামে তরমুজ কিনে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
একই গ্রামের চাষি কামরুল বলেন, ১০ বিঘা তরমুজ কেটে বসে আছি। কোথায় যাবো, কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। এখন হতাশ হয়ে পড়েছি। ঢাকা নিয়ে যেতে ২৫-৩০ হাজার টাকা পরিবহন খরচ। তরমুজের কোনো দাম নেই। যা খরচ করেছি তার চার ভাগের একভাগও দাম পাচ্ছি না।
ছোট চালনার চাষি বাবুল শেখ বলেন, আমি পাঁচ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম। তরমুজ বিক্রি করতে পারিনি। কেউ দামই বলে না। বাজারে তরমুজের দাম হলেও ক্ষেত থেকে তরমুজ নিতে কোনো ব্যাপারি আসেননি। আমার দুই ভাইয়ের ক্ষেতেই পড়ে রয়েছে তরমুজ। ক্ষেতেই তরমুজ পচে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। খরচ ওঠাতে পারব কিনা সে দুশ্চিন্তায় আছি।
বটিয়াঘাটার গঙ্গারামপুরের চাষি আরুণী সরকারের মেয়ে বীথি সরকার বলেন, আমার বাবা ৮ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলেন। এখন তরমুজ ক্ষেতেই পড়ে রয়েছে। কেউ কিনতে আসছে না।
পাইকগাছার উপজেলার গড়ইখালী এলাকার তরমুজ চাষি শাফায়াত হোসেন বলেন, এখন এই অঞ্চলের এক ‘মহাবিপদের’ নাম তরমুজ। তরমুজের মৌসুমেও বিক্রি করতে না পেরে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়ছে কৃষক। মাঠে তরমুজের ঢল, বাজারমূল্য একেবারেই নেই। দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে তরমুজ। আড়তে নিয়েও দাম পাচ্ছে না কৃষক। মহা এক কালোবাজারি সিন্ডিকেটে আবদ্ধ কৃষকরা। দেখার কেউ নেই। ক্ষেত থেকে ট্রাকে আড়তে পৌঁছাতে ১৫/২০/২৫ হাজার টাকা, আড়তদারি ১০ শতাংশ লেবার খরচ, আড়তে বিক্রির পর ভাড়া মেটাতে পারছে না কৃষক। আড়ত থেকে পালিয়ে আসছে কৃষক। নিজেও হচ্ছে সর্বশান্ত। সুদে মহাজন এবং এনজিওর চাপে হচ্ছে এলাকা ছাড়া। সাংসারিক বিপর্যয়, সবমিলে এক মহা বিপর্যয়ের নাম তরমুজ।
তরমুজ চাষিরা বলছেন, পানির দরে তরমুজ, নীরবে চোখের পানি ফেলছেন দরিদ্র কৃষকরা। এ বছর বাম্পার ফলন হওয়ার পরও বিক্রি করতে না পেরে এখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন কৃষকরা। রোজার পরে তরমুজের দাম পড়ে গেছে। ক্ষেতে তরমুজের কোনো ক্রেতা নেই। তাই বেচা-বিক্রিও বন্ধ। ক্ষেতে বিক্রি করতে না পারায় কৃষকরা তরমুজ নিয়ে ঢাকায় ও খুলনায় আসছেন। কিন্তু সেখানেও কাঙ্ক্ষিত দাম মিলছে না। খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে তরমুজের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও তরমুজের কোন মূল্যই বলছে না ব্যাপারিরা।
আড়তে নিয়ে ৪/৫ দিন শত শত ক্ষেত মালিক আড়ত মালিকদের সঙ্গে ধর্না দিয়ে সম্পূর্ণ লস করে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরছে। দাকোপ, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটার কৃষক সর্বশান্ত হতে চলেছে। গত বছর তরমুজের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর অনেকে বেশি জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন যারা তারা আরও বেশি ক্ষতিতে পড়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলায় এবার সাড়ে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য মতে, এবছর জেলায় ১৩ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দাকোপে সাত হাজার ৬২৫ হেক্টরে। এছাড়া বটিয়াঘাটায় তিন হাজার ৬০০, পাইকগাছায় এক হাজার ৫১০, কয়রায় ৮৯৫, ডুমুরিয়ায় ৩৫০, রূপসায় পাঁচ, তেরখাদায় তিন ও ফুলতলা উপজেলায় এক ও মেট্রো থানায় আরও এক হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে।
সিনিয়র খুলনা জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহরিয়ার আকুঞ্জী বলেন, চাষিরা তরমুজ মাঠ থেকে বিক্রি করতে না পেরে মোকামে নিলে পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় তারা কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না। দাকোপ ও বটিয়াঘাটার কিছু কৃষকের তালিকা নিয়েছি। আমাদের কিছু উদ্যোক্তা রয়েছে তাদের মাধ্যমে সরাসরি ক্ষেত থেকে তরমুজ কেনার ব্যবস্থা করছি। গত বছর এভাবে বিক্রির মাধ্যমে কৃষকদের কিছু লাভ হয়েছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।