আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ পরিস্থিতি। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অবিরাম বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। মঙ্গলবার রাতে গাজার একটি হাসপাতালে নৃশংসতম হামলা চায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে কমপক্ষে ৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরো বহু সংখ্যক। এছাড়াও আরো বহু সংখ্যক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা গেছে।
এদিকে, গাজার হাসপাতালে বোমা হামলার পর যখন বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় বইছে তখন ইসরায়েলের পক্ষে সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়ে দেশটিতে সফরে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
সেখানে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকের ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন।
সেই সঙ্গে আলোচিত ও ঘৃণিত হাসপাতালে বোমা হামলার ঘটনায় ইসরায়েলকে দায় মুক্তি দেওয়ার চেষ্টাও করেছেন তিনি। বাইডেন নেতানিয়াহুকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বাহিনী তাকে জানিয়েছে এই হামলায় ইসরায়েল নয়, বরং অন্য কোনো পক্ষ দায়ী।
তবে তেল আবিবে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাইডেন ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যকার দীর্ঘ দিনের চলমান সংঘাত সমাধান ও ওই অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার একটি উপায় উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, এই অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে আমি ‘দ্বি-রাষ্ট্র’ নীতিকে সমর্থন করি।
বাইডেন বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের মতো বিবেকবান দেশগুলোকে শুধুমাত্র ক্ষমতার মাপকাঠি দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। আমাদের উপমা শক্তি দ্বারা পরিমাপ করা যায়,আর সে কারণেই এটি যত কঠিনই হোক না কেন, আমাদের অবশ্যই শান্তির চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, যাতে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন উভয় ভূখণ্ডের জনগণই নিরাপদে, মর্যাদায় এবং শান্তিতে বসবাস করতে পারে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমার কাছে এর অর্থ একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান। আমাদের অবশ্যই প্রতিবেশীদের সাথে ইসরায়েলের বৃহত্তর একীভূতকরণের জন্য কাজ চালিয়ে যেতে হবে। হামাসের এই আক্রমণ ইসরায়েলের প্রতি কেবলমাত্র আমেরিকার প্রতিশ্রুতি ও দৃঢ় সমর্থনকে আরো শক্তিশালী করেছে।”
বাইডেনের দ্বি-রাষ্ট্রীয় ধারণা আসলে কী?
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ধারণাটি হলো- ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পাশে একটি ইসরায়েলি রাষ্ট্র গঠিত হবে এবং উভয় রাষ্ট্র পাশাপাশি শান্তিতে বিদ্যমান থাকবে। কয়েক দশক ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও এটিই প্রত্যাশা। ১৯৪৭ সালের জাতিসংঘের বিভাজন পরিকল্পনাও (ইউএন পার্টিশন প্ল্যান) এই বিষয়টি সমর্থন করে। সেই সঙ্গে বিশ্বের অনেক দেশ এটিকে উভয় ভূখণ্ডের দীর্ঘ সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় বলে অভিমত দিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই লক্ষ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। উভয়পক্ষ সমাধানের এই প্রধান ইস্যু নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছে।
উভয় ভূখণ্ডই রাজধানী হিসেবে পবিত্র শহর জেরুজালেমকে দাবি করে। যদি পুরোটা নাও পাওয়া যায় তবে কিছু অংশ হলে দাবি করে উভয় ভূখণ্ডই। কিন্তু এই জেরুজালেমের সীমানা কোথায় থেকে হবে তা নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত। সেই সঙ্গে তারা অধিকৃত ভূখণ্ডে ইসরায়েলি অবৈধ বসতি স্থাপন নিয়েও সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।
সেই সঙ্গে ১৯৪৮ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল থেকে বিতাড়িত ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের কী হবে সেটিও একটি বিতর্কের বিষয়। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, সারাবিশ্বে ৫৯ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী রয়েছে।
এই দ্বি-রাষ্ট্রীয় ধারণা মূলত ১৯৬৭ সালের সীমানা রেখাকে স্বীকৃতি দেবে, যা ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলি ভূমিকে বিভক্ত করার জন্য ‘গ্রিন লাইন’ নামে পরিচিত পাবে। আলোচনার ভিত্তিতে জমির অদলবদল সাপেক্ষে এবং এটি জেরুজালেমকে দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে বিভক্ত করবে। সূত্র: সিএনএন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।