জুমবাংলা ডেস্ক : অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল): মানুষের লিভারে স্বাভাবিক নিয়মেই চর্বি থাকে। লিভারের মোট ওজনের ৫ শতাংশ চর্বি লিভারে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। লিভারে চর্বি থাকার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম ফ্যাটি লিভার, যা আমাদের শরীরের জন্য শক্তি সঞ্চয় করে রাখে।
যদি আমরা কোনো কারণে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই যেমন রোজা রাখা ও খাওয়ার অনিয়ম হলে এবং অন্য কোনো কারণে অসুস্থ হয়ে গেলে তখন আমাদের শরীরে খাওয়ার চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তখন লিভারে সঞ্চিত শক্তি থেকে আমাদের শরীরে সরবরাহ করে। কিন্তু যখন শরীরে চর্বির পরিমাণ ৫ শতাংশের বেশি থাকে, তখন তাকে বলা হয় ফ্যাটি লিভার। যাদের লিভারে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে, চর্বির কারণে তাদের কারও কারও ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে ক্রনিক হেপাটাইটিস দেখা দেয়, যা ডাক্তারদের ভাষায় বলা হয়, ন্যাস।
যাদের ন্যাস থাকে তাদের হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস, হেপাটাইটিস-সি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার মতোই একসময় লিভার ডেমেজ হয়ে যাওয়া। এমনকি লিভার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও থাকে। তার মানে, এই নয় যে লিভারে চর্বি থাকলেই এই রোগগুলোতে কেউ আক্রান্ত হবে, তা নয়। তবে যাদের লিভারে চর্বি আছে তাদের মধ্যে অনেকের ন্যাস থাকে, তাদের ঝুঁকি বেশি থাকে। এখন প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে কাদের ফ্যাটি লিভার হওয়ার বেশি ঝুঁকি থাকে? যাদের শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে। রক্তে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে। এগুলোর বাইরেও যাদের ডায়াবেটিস থাকে তাদের ফ্যাটি লিভার হতে পারে। যারা মদ খান বা বিভিন্ন এলকোহল সেবন করার অভ্যাস আছে, যাদের লিভারে-সি ভাইরাস ইনফেকশন আছে, তাদের লিভারে চর্বি থাকতে পারে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের ফ্যাটি লিভার হতে পারে। ফ্যাটি লিভারকে বলা যায়, রোগের সমাহার। ফ্যাটি লিভার হচ্ছে টাইটানিক জাহাজের ক্যাপ্টেনের অভিজ্ঞতার মতো।
তিনি ভেবেছিলেন বরফের ধাক্কায় টাইটানিকের কিছু হবে না। কিন্তু জাহাজটি ডুবে গিয়েছিল। কারণ ছিলো পানির উপরে যতটুকু বরফ দেখা যাচ্ছিল, কিন্তু পানির নিচে গভীরে, তার চেয়ে বেশি বরফ ছিল। ফ্যাটি লিভারও অনেকটা তাই। লিভারে চর্বি দেখে আমরা মনে করি লিভারে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, যদি লিভারে চর্বি থাকে তাহলে সেই চর্বি লিভারের বাইরে ব্রেনে জমতে পারে। হার্টে জমতে পারে। কিডনিতে সমস্যা করতে পারে। এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। আমরা দেখি যাদের ফ্যাটি লিভার রয়েছে, তাদের হার্টে সমস্যা দেখা দেয়, কারও কারও স্টোক হয়। কিডনি ফেইলিউর হয়। যাদের ফ্যাটি লিভার রয়েছে তারা হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি আক্রান্ত রোগীদেরও আগে মারা যান। ফ্যাটি লিভারের রোগীরা অসচেতন হলে তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে এবং যারা খুব সচেতন তারা দীর্ঘদিন ভালো থাকেন।
বিশ্বজুড়ে দুর্নীতিবাজ বিদেশি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
ফ্যাটি লিভার হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ফ্যাটি লিভার হলে অনেকের ন্যাস থাকে, সেজন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। ফ্যাটি লিভার থেকে বাঁচতে হলে লাইফ মোডিফিকেশন দরকার। বদ অভ্যাসগুলো পরিবর্তনের মাধ্যমে পরির্বতন করা সম্ভব। আমরা রাতের খাবারে অনেকই অনিয়ম করে খেয়ে ঘুমাতে যাই। কিন্তু উচিত হচ্ছে ঘুমানোর অন্তত ২/৩ ঘণ্টা আগে খেতে হবে। সপ্তাহে ৫ দিন নিয়মিত আধা ঘণ্টা করে হাঁটতে হবে। অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবার যাতে না খাইÑ সে বিষয়টি নজর দিতে হবে। অস্বাভাবিক ডায়েটে গিয়ে শরীরের ওজন কমানোর দরকার নেই। প্রচলিত খাদ্যাভাসেই থাকতে হবে। সহনশীলভাবে ফাস্টিং করতে হবে। পরিচিতি : ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।