অধ্যাপক ডা. খাজা নাজিম উদ্দিন : মানুষের রক্তচাপ ১৩০/৮০ স্বাভাবিক। এরচেয়ে বেশি হলে সেটা বেশি। ১৪০/৯০-এর বেশি হলে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা দরকার। কারও যদি ১৩৫/৮৫ হয় সেটা বেশি কিন্তু ওষুধ লাগবে না। তার সতর্কতা হিসেবে পাতে লবণ বাদ দিতে হবে। ওজন বেশি থাকলে কমাতে হবে। স্ট্রেস কমাতে হবে। ৪৫ বছরোর্ধ হলে সবার ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল পরীক্ষা করতে হবে। অন্যদের বেলায় বিশোর্ধ হলে, স্থূলকায় হলে, বংশে স্ট্রোক, হার্ট এটাকের ইতিহাস থাকলে, ব্লাড প্রেশার বেশি থাকলে এগুলো পরীক্ষা করতে হবে।
* এসেন্সিয়াল হাইপারটেনশন : উচ্চরক্তচাপের ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এজন্য এগুলোকে বলে এসেন্সিয়াল হাইপারটেনশন।
* সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন : ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে কারণ পাওয়া যায় তাদের বলে সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন। ৩০ বছরের কম বয়সিদের ক্ষেত্রে বেশি প্রেশারের কারণ খুঁজতে হবে। এদের অনেকেরই কারণ পাওয়া যায় অর্থাৎ সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন হয়। কারণের চিকিৎসা করলে সম্পূর্ণ ভালো হওয়া সম্ভব। প্রথমবার পরীক্ষায় যদি বেশি পাওয়া যায় সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ দেওয়া উচিত নয়। তবে যদি ১৮০/১১০ এবং স্ট্রোক করে সে ক্ষেত্রে দিতে হবে। চেম্বারে বা বাসায় ২-৩ বার ১-৪ সপ্তাহ পর পর মেপে যদি বেশি হয় তবেই সেটা চিকিৎসা করতে হবে। রক্তচাপ পরীক্ষা করার টেকনিক এবং পারিপার্শ্বিকতাও গুরুত্বপূর্ণ। চেয়ারে পিঠ সোজা করে বসতে হবে। হাত টেবিলের উপর সটান রেখে মাটিতে পা রেখে আরামে বসতে হবে, কথা বলা যাবে না।
* হোয়াইট কোট হাইপারটেনশন : অনেকেরই ডাক্তারের ঘরে মাপলে প্রেশার বেশি পাওয়া যায়; চেম্বারের বাইরে মেপে নিশ্চিত করতে হবে।
* উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা : জীবনযাত্রা পরিবর্তন করতে হবে। খাওয়া দাওয়া, ওজন কমানো, বিশ্রাম, শারীরিক পরিশ্রম পরিমিত করতেই হবে। ধূমপান করলে সেটা ত্যাগ করতে হবে। খাবারে কাঁচা লবণ বাদ দিতে হবে।
* ওষুধ : নিয়ম হলো-১৪০/৯০ হলেই ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। ১৬০/১০০ হলেই দুটি ওষুধ দিয়ে শুরু করতে হবে। নীতি হবে প্রেশার নামাতে হবে অর্থাৎ ১৩০/৮০ বা তার নিচে আনতে হবে, যত ওষুধ লাগে লাগুক। তবে ১২০/৭০-এর নিচে রাখা যাবে না। ওষুধ পরিবর্তন বা বাদ দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। এক ওষুধে সেট করে গেলে বদল করা খুবই কঠিন। অনেক ওষুধ বাজারে আছে, যেটায় কাজ হয় সেটাই ভালো। বিটা ব্লকার এসিই-ইনহিবিটর, এআরবি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো, পছন্দনীয়; কারণ প্রেশার কমানোর পাশাপাশি এরা প্রোটিনুরিয়া কমায়। ৫৫ বছর বয়সের বেশি রোগীদের এ দুটা ওষুধ এত কার্যকরী নয়। এ বয়সে ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার (এন্টিসিসিবি-এমলডিপিন, সিলনিডিপি) এবং থায়াজাইড লাইকডাইউরেটিক (ক্লোরথায়জাইড) শ্রেষ্ঠতর। উপরের (সিস্টলিক) প্রেশার বেশি হলে ও এন্টিসিসিবি এবং থাইয়াজাইড লাইক ডাইরেটিক উত্তম। এসিই ইনহিবিটর (ACEI) খেলে অনেকের কাশি হয় (১০ শতাংশ)। ওষুধ বন্ধ করলে ৩/৪ দিনে কাশি চলে যায়; কাশি বন্ধ করতে হলে (ACEI) ওষুধ বন্ধ করতে হবে; পরিবর্তন করে (ARB) এআরবি দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। দুটা ওষুধই গ্লোমারিউলার ফিলট্রেশন কমায় ও রক্তে পটাশিয়াম বাড়ায়। কিডনি দুর্বল হতে থাকলে এ দুটা ওষুধ বাতিল করে কার্যকরী বিকল্প ওষুধ যোগ করতে হবে। ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার ব্যবহারে অনেকের (অধিকাংশেরই) পা ফুলে, কিডনি, লিভার, হার্টের অসুখের পা ফোলার মতো প্রস্রাব হওয়ার ওষুধ দিলে এ ফোলায় কাজ হয় না। সকালে উঠে দেখা যায় পা চিকন, গতিময় দিন শেষে ফোলা পা, আঙুল বসে যায়। এ ফোলা খারাপ কিছু নয় বরং রক্তনালির প্রসারণ হয় বলে এ ফোলা উপকারী। সিসিবি আর বিটা ব্লকার কম্বিনেশন প্রেশারের ওষুধ দিলে অনেকের উপকার হয়। ACEI ও ARB একই রোগীকে দেওয়া যাবে না। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস সাধারণ রোগীর চেয়ে দিগুণ, কোলেস্টেরল বেশি, কিডনি রোগ, হার্টের রোগ, স্ট্রোক বেশি। প্রেশার স্বাভাবিক রাখতে পারলে সমস্যা কম; নিয়মিত ডাক্তারের ফলোআপে থাকতে হবে এবং পরামর্শানুযায়ী পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে হবে।
ডায়াবেটিসের ওষুধ গ্লিফলোজেন অথবা গ্লুটাইডস দীর্ঘ সময় খেলে কিডনি, রক্তনালির অসুখ স্ট্রোক (ব্রেইন অ্যাটাক), হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে। রোগীর বয়স, রোগের বয়স যত বাড়বে স্ট্রোক/ব্রেন অ্যাটাকের ঝুঁকি তত বাড়বে। বংশে স্ট্রোকের ঘটনা থাকলে, ওজনাধিক্য থাকলে, ধূমপায়ী হলে, দীর্ঘসূত্রি কিডনির অসুখ থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে কোলেস্টেরেলাধিক্য, পূর্বে ঘটে যাওয়া স্ট্রোক পরবর্তীতে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকা এসব রোগী নিয়মিত স্টাটিন খেলে উপকার হবে।
লেখক : মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, বারডেম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।