ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন : স্বামী যদি দীর্ঘদিন বিদেশ থাকেন এবং স্ত্রী-সন্তানদের খোঁজ-খবর না নেন কিংবা ভরণপোষণ না দেন বা মনের অমিল বা অন্য কোনও কারণে স্ত্রীর উপর নানা রকম অপবাদ দিতে থাকেন, তাহলে এমন অবস্থায় স্ত্রী বিদেশে থাকা ওই স্বামীকে চাইলে তালাক দিতে পারেন।
বিয়ের কাবিননামা বা নিকাহনামার ১৮নং কলামে লেখা আছে যে স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা স্বামী অর্পণ করেছে কিনা। এ প্রশ্নের উত্তরে যদি হ্যাঁ লেখা থাকে, তাহলে স্ত্রীর পক্ষে তালাক প্রদানে কোনো সমস্যা নেই। সাধারণত নিরানব্বই ভাগ কাবিননামার এ ঘরটিতে হ্যাঁ শব্দটি লেখা থাকে। সে কারণে বিয়ের সময় নিকাহনামার ১৮নং ঘরটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পূরণ করা উচিত।
এই হ্যাঁ শব্দের বলে স্ত্রী তার বিদেশে থাকা স্বামীকে তালাক দিতে পারেন। এ তালাককে তালাক-ই-তৌফিজ বলে। কাবিননামার এ ক্ষমতাবলে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব পালনে অপারগতার কারণে স্ত্রী নিজ নফসের প্রতি তালাকের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন।
স্ত্রীর দায়িত্ব তালাক ঘোষণার পর স্বামী বিদেশে যেখানে অবস্থান করছেন সেই ঠিকানায় তালাকের নোটিশ পাঠিয়ে দেওয়া। সেই সঙ্গে স্বামীর দেশের ঠিকানাতেও নোটিশের একটি কপি পাঠিয়ে দিন। এমনকি আপনার স্বামীর দেশে থাকা পিতা-মাতা, ভাই-বোন কিংবা যিনি অভিভাবক হিসেবে আছেন তালাকের বিষয় অবগত করতে তাকেও একটি নোটিশ পাঠাতে পারেন। আর আপনার স্বামীর এলাকার চেয়ারম্যানকে নোটিশ তো দিতেই হবে। এখানে চেয়ারম্যান বলতে আপনার স্বামীর স্থায়ী ঠিকানা যদি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে হয় তাহলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট, পৌরসভা হলে পৌরসভার মেয়র এবং সিটি করপোরেশন হলে সিটি করপোরেশনের মেয়রকে নোটিশ দিতে হবে। নোটিশ পাঠানোর কাজটি ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে এডি সহযোগে পাঠাতে হবে।
চেয়ারম্যান/মেয়র নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ থেকে নব্বই দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো তালাক কার্যকর হবে না। কারণ নোটিশপ্রাপ্তির ত্রিশ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান/মেয়র দুই পক্ষের মধ্যে আপস বা সমঝোতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সালিশি পরিষদ গঠন করে থাকে। এর মধ্যে প্রতি ৩০ দিনে একটি করে মোট তিনটি নোটিশ দেবে তালাকদাতা ও তালাকগ্রহীতাকে। আপস-মীমাংসা হয়ে গেলে যিনি তালাক দিয়েছেন, তিনি তালাক নোটিশ প্রত্যাহার করলে তালাক আর কার্যকর হবে না।
নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই যদি কেউ অন্য কারও সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাহলে ওই বিয়ে অবৈধ বলে গণ্য হবে। চেয়ারম্যান/মেয়র মহোদয় কর্তৃক কোনো নোটিশ পাঠানো কিংবা সালিশি পরিষদ গঠন করুক বা না করুক, নোটিশ পাঠানো এবং ৯০ দিন অতিক্রান্ত হলেই তালাক কার্যকর হয়ে যাবে।
লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।