অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী : আবহাওয়া অফিস থেকে কোনো সুসংবাদ নেই। ফলে আরও বেশ কিছুদিন আমাদের প্রচণ্ড গরম সহ্য করতে হবে। জীবিকার জন্য চড়া রোদ ও গরমেও কাজে বেরোতে হচ্ছে অনেককে। ফলে ‘ঘরে থাকুন’ বলে সব শেষ করে ফেলা যাচ্ছে না।
কাঠফাটা রোদে জনজীবন যখন হাঁসফাঁস করছে, এর মধ্যেই হঠাৎ চোখে অন্ধকার দেখতে পারেন কেউ কেউ, কারও মাথা করতে পারে ঝিমঝিম, কিংবা পেটে শুরু হতে পারে মোচড়। এগুলোই লক্ষণ। এমন যদি হয় বুঝবেন, আপনি কিংবা আপনার সহনাগরিক হিট স্ট্রোকের শিকার। এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
হিট স্ট্রোকে যা হয়
শ্বাস হয় ঘন ঘন
রক্তচাপ কমে যায়
ত্বক শুকনো হয়ে যায়
নাড়ির গতি কমে যায়
অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে
অনেকের শরীরে খিঁচুনি হয়
প্রলাপ বকে কেউ কেউ
মস্তিষ্ক কাজ করে না
ডায়রিয়া হয়
এমন হলে বাড়িতে কিছু না করে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
দ্রুত যা করতে হবে
প্রথমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঠান্ডা করতে হবে।
চটজলদি তাকে ছায়ায় নিতে হবে।
শরীরে বাতাস লাগাতে হবে। প্রয়োজনে পাখা কিংবা অন্য কিছু দিয়ে বাতাস করতে হবে।
সম্ভব হলে শরীরে পানি দিতে হবে।
শরীর ঠান্ডা হলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিতে হবে।
হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে
পরিমাণমতো বিশুদ্ধ পানি পান করুন। কিন্তু ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করবেন না।
বারবার শুধু পানি পানে কাজ হবে না। লবণ-চিনি কিংবা ওরস্যালাইন মিশিয়ে পানি পান করুন।
বাইরের খোলা পানি পান করবেন না। তাতে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।
হিট স্ট্রোক হলে ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই কোনোভাবেই শরীরে পানিশূন্যতা হতে দেওয়া যাবে না।
কোমল পানীয় বা সফট ড্রিংকস পান করা যাবে না। এগুলো হাইপার টনিক; অর্থাৎ এসব পানীয়ের ঘনত্ব বেশি। সফট ড্রিংকস পান করলে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে গিয়ে পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়।
যাদের সারা দিন বাড়ির বাইরে কাজ করতে হয়, তাদের সতর্ক থাকতে হবে সবচেয়ে বেশি।
রোদ যখন খুব চড়া, অর্থাৎ দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বাড়ির বাইরে না যাওয়াই ভালো। প্রয়োজনে সকাল ও বিকেল থেকে সন্ধ্যা কিংবা একটু গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করুন। দরকারি কাজে বাড়ির বাইরে যেতে হলে সঙ্গে ছাতা কিংবা টুপি নিতে হবে রোদ থেকে বাঁচতে। সম্ভব হলে সানগ্লাস ও হাতপাখা বা ব্যাটারিচালিত ফ্যান সঙ্গে রাখতে হবে। যখনই মনে হবে শরীরে কোনো সমস্যা হচ্ছে, বাতাস করতে হবে। কিংবা বাতাস আছে তেমন জায়গায় গিয়ে বিশ্রাম নিতে হবে।
সঙ্গে রাখতে হবে পানির বোতল ও গামছা। পানি পান করতে হবে আর প্রয়োজনে গামছা ভিজিয়ে গলা, ঘাড় মুছে নিতে হবে। তাতে আরাম মিলবে।
পরতে হবে হালকা রঙের সুতির ঢোলা পোশাক।
টানা শারীরিক পরিশ্রম না করে বিরতি দিয়ে কাজ করুন। তাতে ঘাম কম হবে এবং শরীরের ওপর চাপ কম পড়বে।
২০ মিনিট পর পর পানি পানের বিরতি নিন।
যখনই শরীরে সমস্যা দেখা দেবে, ঠান্ডা জায়গায় বসে বিশ্রাম নিতে হবে।
গরমে গরম চা বা কফি পান করবেন না।
ডাবের পানি পান করতে পারেন।
রঙিন শরবত, আখ ও লেবুর রস, রাস্তার ধারের বিভিন্ন জরিবুটি দেওয়া শরবত পান করবেন না। তাতে পানিবাহিত রোগে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হবে।
পুরো ফল খেতে হবে, কাটা ফল নয়। কাটা ফলে ফুড পয়জনিংয়ের আশঙ্কা থাকে।
বেশি তেল-চর্বি, ঝাল-মসলা দিয়ে রান্না করা খাবার খাবেন না। এতে হজমে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
পরামর্শ: সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।