জুমবাংলা ডেস্ক : সর্বজনীন পেনশন প্রকল্পে চালু করা হয়েছে ‘প্রত্যয়’ নামের একটি নতুন স্কিম। এনিয়ে এই প্রকল্পে স্কিমের সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচটিতে। আগামী ১ জুলাই ও তার পরে যারা স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে যোগদান করবেন তাদেরকে এই স্কিমের অন্তর্ভুক্ত করেছে সরকার।
গত বুধবার (২০ মার্চ) অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নতুন এই স্কিমের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন স্কিমটি ভিন্ন আঙ্গিকের। এর ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে যারা ভবিষ্যতে যোগদান করবেন তারা অবসরে গেলে যেন পেনশন পান সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে।
নতুন কী আছে প্রত্যয় স্কিমে?
গত সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৪ সালের পহেলা জুলাই থেকে স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে যারা যোগদান করবেন তাদের বাধ্যতামূলকভাবে সার্বজনীন পেনশনের সর্বশেষ প্রত্যয় স্কিমের আওতাভুক্ত করতে হবে।
কিন্তু এর ফলে বর্তমানে প্রচলিত ব্যবস্থার মতো অবসরোত্তর সুবিধা মেলবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন কিছু স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।
তবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, আগে তহবিলে সংস্থার প্রদানকৃত অর্থ ছিল কর্মচারীর ‘কন্ট্রিবিউশন’ এর চেয়ে কম কিন্তু প্রত্যয় স্কিমে প্রতিষ্ঠানকে কর্মীর সমপরিমাণ টাকা জমা দিতে হবে। এতে পেনশনার অধিক লাভবান হবেন।
সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান, ২০২২ এর তথ্য অনুযায়ী স্ব বা স্বায়ত্তশাসিতসহ অনুরূপ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় সোয়া চার লাখ।
এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের আওতায় রয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, বিআরটিসি, পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনসহ সকল রাষ্ট্রীয় করপোরেশন, সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন ইনস্টিটিউট।
অর্থ বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রত্যয় স্কিমের আওতায় এলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না এবং বিদ্যমান পেনশন/আনুতোষিক সুবিধা অক্ষুণ্ন থাকবে।
যাদের এখনো অন্তত ১০ বছর চাকরির সময়সীমা আছে তারাও চাইলে প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান বলেন, নতুন স্কিমটি ভিন্ন আঙ্গিকের। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের যৌথ কন্ট্রিবিউশনের মাধ্যমে যে টাকা মাসিক ভিত্তিতে জমা হবে তার মূল টাকা ও মুনাফার উপর অবসরে গেলে মাসিক ভিত্তিতে পেনশন দেয়া হবে।
বর্তমানে স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘প্রদেয় ভবিষ্য তহবিল’-সিপিএফ এর মাধ্যমে অবসরকালীন সুবিধা পেয়ে আসছেন।
এই ব্যবস্থায় মূল বেতন থেকে টাকা জমা রাখতে হয় তহবিলে। কর্মীরা জমা দেয় বেতনের ১০ শতাংশ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকে আট দশমিক ৩৩ শতাংশ। মোট তহবিলের বিপরীতে সরকার ১১ থেকে ১৩ শতাংশ হারে সুদ দিয়ে থাকে। এ টাকা পেনশনে যাওয়ার পর অবসরভোগীরা এককালীন অর্থ হিসেবে পেয়ে থাকেন।
অন্যদিকে, সরকারি কর্মচারীরা ‘সাধারণ ভবিষ্য তহবিল’-জিপিএফের মাধ্যমে অবসরোত্তর সুবিধা পেয়ে থাকেন। তারা এককালীন অর্থের পাশাপাশি মাসিক ভাতা সুবিধা পান। কিন্তু, কেবল সিপিএফ নির্ভর হলে এককালীন সুবিধা পেলেও মাসিক ভাতা অর্থাৎ পেনশন মেলে না।
কবিরুল ইজদানী খান বলেন, প্রত্যয় স্কিম ওই প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রয়োজন ছিল। কারণ, এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পেনশন কাঠামোর বাইরে ছিলেন। তার দাবি, পেনশনার যে পরিমাণ অর্থ জমা দিবেন তার ‘বহুগুণ’ বেশি তিনি পেনশন হিসেবে পাবেন।
বিরোধিতা কেন?
প্রজ্ঞাপন জারির পরপরই এটির বিরোধিতা করে বিবৃতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, সার্বজনীন হলে সেটি সবার জন্যই হওয়া উচিত। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাইরে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হলে এই ব্যবস্থা বৈষম্য উসকে দেবে।
তাদের শঙ্কা, এই স্কিম কার্যকর হলে আগামীতে যোগ দেবেন এমন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা কমে যাবে।
তিনি বলেন, এককালীন আর্থিক সুবিধা নতুনরা পাবেন কিনা এটা স্পষ্ট নয়। পেনশন, এককালীন সুবিধা এ সমস্ত ব্যাপারে এখানে বিশদভাবে কিছু বলা হয়নি।
অধ্যাপক ভূঁইয়া মনে করেন, অবসরকালীন নিশ্চয়তা একই রকম না থাকলে আগামীতে মেধাবীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় আসতে নিরুৎসাহিত হবেন।
এই ইস্যুতে বুধবার বৈঠকে বসে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সবাই বিবৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তীতে আন্দোলনে নামার চিন্তাভাবনাও করছেন তারা।
শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পর্যবেক্ষণের পর যদি প্রয়োজন হয় এবং সুযোগ থাকে তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম মাকসুদ কামাল।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও ‘প্রত্যয়’ নামের এই স্কিমের আওতায় পড়বে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
অবসরের পর এককালীন আর্থিক সুবিধা না মিললে এখাতের ভবিষ্যত কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনতা ব্যাংকের এক কর্মকর্তা।
পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান বলেন, এটা যে ভালো উদ্যোগ তাতে সন্দেহ নেই। যেহেতু নতুন ধারণা, মানুষকে সময় দিতে হবে বিষয়টি বুঝতে। তখন জনগণ এতে স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করবে।
এ পর্যন্ত সার্বজনীন পেনশনের জন্য প্রায় ৪০ হাজার মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেছে। সর্বজনীন পেনশন প্রকল্পে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রবাস, বেসরকারি কর্মচারী/প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রগতি, স্বকর্ম ও অ-প্রাতিষ্ঠানিক কর্মীদের জন্য সুরক্ষা এবং স্বল্প আয়ের ব্যক্তি সমতা নামের চারটি স্কিম চালু আছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।