জুমবাংলা ডেস্ক : মৃত ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখা টাকা নমিনি পাবেন নাকি উত্তরাধিকারী– এ নিয়ে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন একাধিক মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি দীর্ঘদিনেও। এ নিয়ে হাইকোর্টের রায় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বৈপরীত্য থাকায় অনেকে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০১৮ পর্যন্ত সংশোধিত) অনুযায়ী, হিসাবধারী অথবা আমানত জমাকারী মৃত্যুবরণ করলে গচ্ছিত টাকা নমিনি পাবেন। তবে ২০১৬ সালে সঞ্চয়পত্রের নমিনি নিয়ে এক রায়ে ভিন্নমত দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ে বলা হয়, সঞ্চয়পত্রের হিসাবধারী মারা গেলে ওই টাকা নমিনির (মনোনীত ব্যক্তির) পরিবর্তে ব্যক্তির উত্তরাধিকারী পাবেন। এ নিয়ে উচ্চ আদালত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বৈত সিদ্ধান্ত থাকায় জটিলতার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি এখনও সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির জন্য ঝুলে আছে। এ ধরনের বেশ কিছু মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন থাকলেও তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, আইনগতভাবে ব্যাংকে হিসাবধারী বা আমানত জমাকারী মৃত্যুবরণ করলে তাঁর গচ্ছিত টাকা নমিনি পাবেন, এটাই রীতি।
আট বছর আগে হাইকোর্টের রায়ে আরও বলা হয়, নমিনি হবেন একজন ট্রাস্টি। উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী নমিনি টাকা উত্তোলন করে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সমভাবে বণ্টন করে দেবেন।
তবে এ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা নমিনির কাছেই হস্তান্তর করতে হবে। তবে এতে সেই টাকার মালিকানার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে এর বিরুদ্ধে আপিল (লিভ টু আপিল) আবেদন করে বিবাদীপক্ষ। এখন পর্যন্ত এর শুনানি হয়নি।
ওই মামলার বাদীপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী ও আইনজীবী নাজনীন নাহার। নাজনীন নাহার বলেন, আপিল বিভাগে রায়টা নিষ্পত্তি না হওয়ায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। কোথাও কোথাও মনগড়াভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এতে অনেকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সর্বোচ্চ আদালতে জনস্বার্থে রায়টা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া খুবই প্রয়োজন। এতে সাধারণ মানুষ পরিত্রাণ পাবেন।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আপিল বিভাগে দুটি বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। আশা করছি, এর ফলে জমে থাকা পুরোনো মামলাগুলো পর্যায়ক্রমে নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার দিয়ে উত্তরাধিকার আইনকে লঙ্ঘন করতে পারে না। এই দৃষ্টিতে হাইকোর্টের রায় যথার্থ। তিনি বলেন, উত্তরাধিকারের ইস্যুটি আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত। এখন নতুন করে আইন করতে হবে, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কেউ নমিনি রাখলে সেই টাকা কে পাবেন। কারণ, হিসাবধারীর মৃত্যুর পর টাকা ওঠাতে সবাইকে ক্ষমতা দেওয়া হয় না, একজনকে নমিনি দেওয়া হয়। কিন্তু আইন অনুযায়ী, সব উত্তরাধিকারই মৃত ব্যক্তির টাকা পাবেন।
গণমাধ্যমের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, নমিনিই পাবেন মৃত ব্যক্তির গচ্ছিত টাকা। সেভাবেই টাকা হস্তান্তর করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে সেটাই বলা আছে। তবে, উত্তরাধিকারী চাইলে নমিনির কাছ থেকে টাকা আদায় করে নিতে পারেন। কেননা, ব্যাংকের পক্ষে সব উত্তরাধিকারীর মধ্যে টাকা বণ্টন করা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ব্যাংকে হিসাব খোলার সময় বাধ্যতামূলকভাবে নমিনির নাম উল্লেখ করতে হয়। আমানতদারের অবর্তমানে কিংবা তাঁর মৃত্যুর পর গচ্ছিত অর্থসম্পদ ব্যাংক থেকে উত্তোলনের সুবিধার্থে নমিনি করে রাখা হয়। এই নমিনি হতে পারেন পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয়, স্ত্রী, স্বামী, ভাইবোনসহ বিশ্বস্ত যে কেউ। অভিযোগ আছে, অনেক সময় নমিনি উত্তরাধিকারীদের বঞ্চিত করে মৃত ব্যক্তির টাকা বা মূল্যবান জিনিস ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নিজেই আত্মসাৎ করেন।
এ বিষয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, অনেক দিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে তারা উভয় সংকটে রয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন তারা।
যে মামলার কারণে জটিলতা
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার বাসিন্দা মনজুরুল হকের বাবা মরহুম শহিদুল হকের বাংলাদেশ বাংকে ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয় রেখেছিলেন। ওই সঞ্চয়পত্রে নমিনি ছিলেন শহিদুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী। তিনি মারা যাওয়ার আগে মৌখিকভাবে তাঁর প্রথম পক্ষের সন্তানদের সমানভাবে টাকা বণ্টন করতে অছিয়ত করে যান। কিন্তু তা পালনে অস্বীকৃতি জানান দ্বিতীয় স্ত্রী।
পরে সঞ্চয়পত্রের উত্তরাধিকারী দাবি করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে সিভিল মামলা করেন মঞ্জুরুল হক। বিচারিক আদালত মামলা খারিজ করে দিলে হাইকোর্টে সিভিল আপিল দায়ের করা হয়। পরে সঞ্চয়পত্রের হিসাবধারী মারা গেলে ওই সঞ্চয়ের টাকা নমিনির পরিবর্তে উত্তরাধিকারী পাবেন বলে রায় দেন হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে বিবাদীপক্ষ। – সমকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।