জুমবাংলা ডেস্ক : ইলিশের জন্য ব্র্যান্ডি জেলা চাঁদপুরে এ সময় ইলিশের আমদানি বাড়লেও তার দাম দেশের অন্য স্থানের তুলনায় এখানে অনেক বেশি। এই মাছ এখন পুরোদমে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কঠিন সিন্ডিকেট থাকায় ইলিশ আহরণকারী, জেলে, ফরিয়ারা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ইলিশ কমদামে বিক্রি করতে পারছেন না। বাজার তদারকি না থাকায় এখানকার ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো ইলিশের দাম নির্ধারণ করে তাদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট বজায় রেখেছেন বলে অভিযোগ সাধারণ ক্রেতাদের।
কিন্তু চাঁদপুরে ইলিশ ব্যবসা সিন্ডিকেট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এমনটি মানতে নারাজ এখানকার মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল বারী জমাদার মানিক। তিনি বলেন, এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই। মূলত মাছ আমদানি কম তাই দাম বেশি। সিন্ডিকেট করে লাভ তো নেই, কারণ ইলিশের দাম বেশি হলে ক্রেতা কমে যায়, সেজন্য খুচরা বিক্রেতারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তিনি বলেন, বিগত বছরে এখানে এ সময় প্রায় তিন-চার হাজার মণ ইলিশ আমদানি হতো কিন্ত এবার গড়ে ১৫-১৬শ মণ ইলিশ আসছে। জ্বালানি হতে শুরু করে ফিশিং বোট, জেলে ও ট্রলারের খরচ তিনগুণ বেড়েছে। সেজন্য মাছের দামতো বাড়বেই।
তিনি আরও বলেন, কয়েক দিন ধরে ইলিশ আসতে শুরু করলেও পরিমাণে অন্যান্য বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। বিগত কয়েক বছরই আমাদের চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশের উৎপাদন অনেক কমে গেছে। এর কারণ বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, নদীতে অসংখ্য চর জেগেছে, নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে এবং সাগর থেকে যখন মেঘনায় মাছ আসবে সেখানে বরিশাল, হাতিয়া ও ভোলায় অসংখ্য জেলে একসঙ্গে ইলিশ আহরণ করেন। এত পরিমাণ জেলে ও জাল পেরিয়ে মেঘনায় ইলিশ আসা খুবই দুরূহ ব্যাপার।
বর্তমানে ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। অক্টোবর পর্যন্ত থাকবে এই মৌসুম।
চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সাগর উপকূলীয় এলাকা থেকে চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আসছে বড় বড় সাইজের ইলিশ। জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার ট্রলারে করে ইলিশ আসছে খুবই কম। যেসব ইলিশ এখানে আসছে বেশিরভাগই আসছে ট্রাকযোগে। এখানকার অর্থাৎ পদ্মা-মেঘনার ইলিশের চাহিদা বেশি থাকায় আড়তগুলোতে বেড়েছে ক্রেতার সংখ্যা।
জেলা সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সভাপতি ডা. পীযূষ কান্তি বড়ুয়া বলেন, ইলিশ উৎপাদন খরচ নেই, আহরণই খরচ হয়। আসলে সব কিছুর দাম বাড়ার হিড়িকের সঙ্গে এখানকার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ইলিশের দাম বাড়িয়েছে। মূলত ইলিশের দাম পরিমাণ কম-বেশির ওপর নির্ভর করে না।
তিনি বলেন, চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে ইলিশের জোগান কম হওয়ার সম্পর্ক থাকার কথা নয়। কেননা ইলিশের জোগান কম হলেও তাদের উৎপাদন ও আহরণ ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
ঢাকা থেকে ইলিশ কিনতে আসা আবদুল জব্বার বলেন, শুনেছি চাঁদপুরে ইলিশের দাম কম; কিন্তু এখানে এসে দেখি ঢাকার চাইতে বেশি দাম। তারপরও কিনেছি। খেয়ে বুঝতে পারব, চাঁদপুরের নাকি সাগরের ইলিশ।
শনিবার লঞ্চে করে ঢাকা থেকে চাঁদপুর ইলিশ কিনতে এবং ঘুরতে এসেছেন বেশ কয়েকজন যুবক। এর মধ্যে মুশফিক নামে একজন জানান, ইলিশ নিয়ে চাঁদপুর ব্র্যান্ডি হয়েছে। ইলিশের জন্য চাঁদপুর দেশ ও বিদেশে পরিচিত। তাই ইলিশের আসল স্বাদ নেওয়ার জন্য এসেছি। দাম ভালো হলে ইলিশ কিনে নিয়ে যাব।
মাছ ঘাট সূত্রে জানা যায়, এখানে প্রায় অর্ধ শতাধিক মৎস্য আড়তের অধীনে প্রায় দেড় শতাধিক ব্যবসায়ী আছেন। খুচরা বিক্রেতা আছেন কমপক্ষে অর্ধশত। প্রায় ২০টির মতো অনলাইনেও অনেকে ইলিশ বিক্রি করেন। তবে বেশ কয়েকজন খুচরা ইলিশ বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে দামের ক্ষেত্রে বেশ তারতম্য পাওয়া গেছে। একই ইলিশ প্রতি কেজি ২০০-৩০০ টাকা কম-বেশি দরে বিক্রি করছেন।
চাঁদপুর মাছ ঘাটে মাছ কিনতে শহরের ঢালিরঘাট থেকে আসা শফিক ভূঁইয়া জানান জেলা সদরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিংবা প্রশাসনের বাজার তদারকি অভিযান থাকলেও মাছঘাটে কোনো অভিযান নেই। যে কারণে এখানে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো মাছের দাম নির্ধারণ করে বিক্রি করে আসছেন।
রোববার মাছঘাটে কেজি সাইজের ইলিশ ১৫০০ থেকে সাড়ে ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। দেড়-দুই কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী শবেবরাত সরকার বলেন, আমাদের চাঁদপুরে সাগরের ইলিশ আসে না। হাতিয়া, রামগতি ও আলেকজান্ডার থেকে ইলিশ আসে। সাইজ অনুসারে দাম কম বেশি হয়। প্রতিদিনই ইলিশের দাম উঠানামা করে। প্রকাশ্যে ডাক দিয়ে মাছ বেচা-কেনা হচ্ছে।
এদিকে অতিরিক্ত মূল্যে ইলিশ বিক্রি না করা, ইলিশের ক্রয় ভাউচার সংগ্রহ রাখা ইত্যাদি বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে গত শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নুর হোসেন রুবেল কিন্তু এরপর বাজার তদারকিতে কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয়নি।
এ বিষয়ে নুর হোসেন রুবেল জানান, ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত তদারকি অভিযান হয়নি। তবে শিগগিরই করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।