জুমবাংলা ডেস্ক : এপ্রিল মাসজুড়েই সারাদেশে তীব্র দাবদাহ বয়ে গেছে। মে মাসের শুরুতে বৃষ্টির পর তাপমাত্রা কিছুটা কমলে মাসের মাঝের দিকে এসে আবার বেড়েছে তাপমাত্রা। গতকাল (১৫ মে) দুই দিনের হিট অ্যালার্টও জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ।
তাপপ্রবাহের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে রাজধানী ঢাকায়। অল্প জায়গায় বিপুলসংখ্যক মানুষের বসবাস, গাছপালা-জলাভূমি না থাকায় এবং অতিমাত্রায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহারের কারণে ঢাকায় তীব্র তাপদাহ হচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদ ও স্থপতিরা। তারা বলছেন, শহরের বেশিরভাগ জায়গা কংক্রিটের স্থাপনা দিয়ে আচ্ছাদিত। এতে অতি উষ্ণতার ঝুঁকি বছর-বছর বাড়ছে। গাছপালা কেটে, জলাভূমি ভরাট করে এবং অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ণের কারণে ঢাকা শহর তাপীয় দ্বীপে পরিণত হয়েছে। দূষণ ঢাকা শহরে গরম বেশি হওয়ার আরেকটি কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকার ভবনগুলোর নকশাও তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে দায়ি বলে মনে করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখানে বিল্ডিংগুলোর ডিজাইন এমনভাবে করা যাতে আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা থাকে না। শুধু বাইরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
এদিকে গবেষণা বলছে, গত ২৮ বছরে রাজধানী থেকেই প্রায় ৮৫ ভাগ জলাভূমি হারিয়ে গেছে। পাশাপাশি একই সময়ে স্থাপনা নির্মাণ বেড়েছে ৭৫ ভাগ; যা গাছপালা ও জলাশয় ধ্বংস করে তৈরি করা হয়েছে। পরিবেশ অনুপযোগী বিদেশি গাছ রোপণ, কাচের ভবন নির্মাণ, বায়ুদূষণ, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে তাপপ্রবাহে ঢাকার পরিবেশ অসহনীয় হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বাসাবাড়ি, শপিং মল, হোটেল-রেস্টুরেন্ট গরমে শীতল রাখার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বসানো হচ্ছে। তবে এসব যন্ত্র আপনাকে শীতল করলেও, অন্যদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে। এমনটিই জানিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, এসি থেকে নির্গত গ্যাস পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কোনো এলাকায় অধিকসংখ্যক এসির ব্যবহার, ওই এলাকার তাপমাত্রা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। ঘরকে ঠান্ডা রাখলেও বাইরের তাপমাত্রা বাড়ায়।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সামগ্রিক বিষয়ে ‘এসি’ ক্লোরোফ্লোরো কার্বন নিঃসরণ ঘটায়। ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি বড় সোর্স হতে পারে এসি। এসির ব্যবহার সারা বছর ধরেই চলে। কিন্তু গ্রীষ্মকালে এর ব্যবহার বেড়ে যায়। এই মুহূর্তে ঢাকা শহর বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চল তিনটি কারণে গরম হচ্ছে। প্রথমত, জলবায়ুগত কারণে উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে। এটা বৈশ্বিক কারণ বলতে পারেন। দ্বিতীয়ত, আমাদের ভূমিতে সবুজায়ন কম। তাই খোলা ভূমি উষ্ণ হয়ে তাপ বাড়াচ্ছে। কারণ ওই ভূমিতে বালু, ইট তথা কংক্রিট বাড়ছে।
তাই তাপমাত্রাও বাড়ছে। তৃতীয়ত বলতে পারেন এসি বা ফ্রিজের কথা। এসি যেমন ঘরকে ঠান্ডা রাখে, তেমনি বাইরে গরম হাওয়া ছাড়ে। ধরেন ঢাকা শহরে শত শত হাজার হাজার এসি থেকে একটা তাপ নিঃসরিত হয়। এগুলো একসঙ্গে হয়ে শহরে বাতাসের মধ্যে কেন্দ্রীভূত হয়ে বাতাসকে গরম করছে। ফলে যারা এসি ছাড়া থাকেন, তারা স্বাভাবিক তাপের তুলনায় দুই থেকে তিন ডিগ্রি বেশি তাপ অনুভব করেন। একজন সুখ নিচ্ছে, বিনিময়ে আরেকজনের জন্য দুঃখ ছেড়ে দিচ্ছে। তাই এসি ব্যবহারের বাইরে থাকা মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে।
সূত্র : দেশ রূপান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।