লাইফস্টাইল ডেস্ক : বর্তমান যুগে যেখানে প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের জীবনের প্রতিটি দিক intertwined, সেখানে আকস্মিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে করোনা মহামারী। লকডাউনের ফলে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ (WFH) আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে যেসব চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কাজের সময় ফোকাস বজায় রাখা। অনেকেই এই নতুন পদ্ধতিতে কাজ করার সময় মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। তবে যতই কঠিন মনে হোক, ফোকাস বাড়ানোর জন্য কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে যেগুলো আমাদের জীবনে গতি আনতে পারে।
Table of Contents
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাড়িতে কাজ করার সময় 30% বেশি সময় নষ্ট হয়। এর কারণ মনে করা হচ্ছে আমাদের চারপাশের পরিবেশ। কর্মক্ষেত্রের তুলনায় বাড়ির পরিবেশ অত্যন্ত আরামদায়ক হওয়ায় মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য কি কিছু করা সম্ভব? অবশ্যই।
ওয়ার্ক ফ্রম হোমে ফোকাস বাড়ানোর উপায়
আজকের এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করবো কীভাবে বাড়িতে বসে কাজ করার সময় আপনার ফোকাস বাড়ানো যায়। সহজ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত করতে পারেন যে আপনি প্রতিটি কাজের জন্য সর্বাধিক মনোযোগ দিচ্ছেন।
১. ন্যূনতম বাধা সৃষ্টি করুন
বাড়ির পরিবেশে কাজ করার সময় আমাদের অনেক বিচ্ছিন্নতার মধ্যে পড়তে হয়। মোবাইল ফোন, টিভি অথবা অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিতি ফোকাস নষ্ট করার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সুতরাং, প্রথমে আমাদের উচিত এই বাধাগুলোকে কমিয়ে আনা।
-
ফোন সাইলেন্টে রাখা: মোবাইল ফোনের নোটিফিকেশন চেক করার বদলে আপনি কিছু সময়ের জন্য ফোনটিকে সাইলেন্টে রাখতে পারেন। যদি প্রয়োজন হয় তবে ‘Do Not Disturb’ মোড ব্যবহার করতে পারেন।
- একটি নির্দিষ্ট স্থান তৈরি করুন: বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট স্থান তৈরি করুন যেখানে শুধুমাত্র কাজ করবেন। এটি আপনার মনে কাজের পরিবেশ তৈরি করবে এবং ফোকাস বাড়াবে।
২. সময়সূচী তৈরি করুন
আপনার কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনাকে একটি লাইন তৈরি করে দেয়, যা অনুসরণ করে আপনাকে আপনার কাজ সুনিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
-
দৈনিক পরিকল্পনা: প্রতিদিন সকালে একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন। কোন কাজগুলো আগে করতে হবে এবং কিভাবে সময় নেবেন, সে সম্পর্কে চিন্তা করুন।
- বিরতি নিন: প্রতি ৫০ মিনিট পরে ১০ মিনিটের বিরতি নিন। এই বিরতিগুলো আপনার মস্তিষ্ককে রিফ্রেশ করতে সহায়ক হবে এবং আপনার পরবর্তী কাজের সময়কে আরো ফলপ্রসূ করবে।
৩. প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করুন
প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এখন অনেক অ্যাপ্লিকেশন ও সফটওয়্যার আছে যা আপনাকে আপনার কাজের উপর ফোকাস রাখতে সাহায্য করতে পারে।
-
ফোকাস অ্যাপ্লিকেশন: যেমন হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে যারা ফোকাস হারাচ্ছেন তাঁদের জন্য অপারেটিং সিস্টেমে বিভিন্ন ধরনের ফোকাস অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের জন্য উপলব্ধ।
- অনলাইন কাজের প্ল্যাটফর্ম: অ্যাসাইনমেন্ট অনুযায়ী নির্দিষ্ট কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য এর মাধ্যমে সময় নির্ধারণ করতে পারেন।
৪. সুস্থ জীবনযাপন
শারীরিক সুস্থতা মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। তাই, সঠিক খাদ্যাভাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
-
সঠিক খাদ্যাভাস: শাকসবজি, ফলমূল এবং প্রোটিন-পূর্ণ খাবার খান। এসব খাবার আপনাকে উপযুক্ত শক্তি এবং মনোযোগ দেবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম: বাড়িতে কিছু সময় ব্যায়াম করার জন্য নির্ধারণ করুন। এটি আপনার মনোযোগকে বাড়িয়ে তুলবে এবং মানসিক চাপ কমাবে।
৫. কম্টিং ধারনা
ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সময় অনেকেই কাজের চাপ অনুভব করেন। তাই মনোযোগ বজায় রাখতে আমাদের প্রয়োজন সঠিক মানসিকতা তৈরি করা।
-
ধ্যান করুন: কিছু সময় গভীর শ্বাস নিন অথবা মেডিটেশন করুন। এটি আপনার মনের চাপ কমতে সাহায্য করবে।
- পজিটিভ চিন্তা: নিজেকে স্থানীয় কিছু অর্জনের প্রতি মনোনিবেশ করুন। আপনার কাজের পরিবেশের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টি রাখুন।
এই পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করে, আপনি আপনার বাড়িতে কাজ করার সময় ফোকাস বাড়াতে সক্ষম হবেন। তবে মনে রাখবেন, প্রতিটি মানুষের জন্য কার্যকরী উপায় আলাদা হতে পারে। তাই আপনার কাজের ধরন অনুযায়ী সঠিক পদক্ষেপ চয়ন করুন।
শুধু ফোকাস বাড়ানোর জন্য নয়, বরং একটি সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ মানসিক জীবন ধারণ করার জন্য এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা জরুরি। আর দয়া করে মনে রাখবেন, সময়ই সবচেয়ে বড় সম্পদ।
আরও কিছু পদ্ধতি
৬. বাচ্চাদের জন্য পরিকল্পনা করুন
যদি আপনি পরিবারের সাথে থাকেন, বিশেষ করে বাচ্চাদের, তাহলে তাদের অভিভাবকত্ব এবং আপনার কাজের সময় সমন্বয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- বাচ্চাদের জন্য কার্যকলাপ নির্ধারণ করুন: আপনার কাজের সময় তাদের জন্য কিছু কার্যকলাপ নির্ধারণ করুন। এটি তাদের সময় কাটাতে সাহায্য করবে এবং আপনি শান্তিতে কাজ করতে পারবেন।
৭. সাদৃশ্য বজায় রাখুন
অফিসের পরিবেশকে বাড়িতে সৃষ্টির চেষ্টা করুন। একটি নিয়মিত সময়সূচী বজায় রাখা এবং অফিসের মতো অনুভূতি তৈরি করা আপনাকে কাজে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করবে।
- অফিসের পোশাক পরিধান করুন: বাড়িতে অফিসীয় পোশাক পরা মানসিকতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং কাজের প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করে।
৮. নিজের জন্য সময় বের করুন
কে বলতে পারে ঠিক কি কাজ কোনও দিন হতে পারে? তবে দিনের শেষে নিজের জন্য কিছু সময় বের করুন।
- বই পড়ুন বা সিনেমা দেখুন: প্রিয় বই পড়া বা সিনেমা দেখা আপনার মনের জন্য একটি আরামদায়ক অনুভূতি নিয়ে আসবে।
উল্লেখিত উপায়গুলো যদি আমরা নিয়মিতভাবে অনুসরণ করি, তবে বাড়িতে কাজ করার সময় আমাদের ফোকাস বাড়ানো সম্ভব হবে। সতর্কতা ও সঠিক পরিকল্পনায় আপনার কাজের গতি বৃদ্ধি হতে পারে, যা আপনার ব্যক্তিগত জীবনে ও পেশাগত ক্যারিয়ারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে।
বাড়িতে কাজের সময় ফোকাস বাড়ানোর জন্য এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলি নিয়মিত অনুসরণের মাধ্যমে আপনি বিশেষ কিছুর মুখোমুখি হতে পারেন। আজই চেষ্টা করুন আর দেখুন আপনার কাজের গতি কেমন বাড়ে!
জানেন কি
বাড়িতে কাজ করার সময় ফোকাস বাড়ানোর জন্য কি পদ্ধতিগুলি কার্যকর?
বাড়িতে কাজ করার সময় ফোকাস বাড়ানোর জন্য একটি পরিকল্পনা, কিছু কার্যকরী অ্যাপে নির্ভরশীলতা, এবং শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করা জরুরী। সবকিছু মিলিয়ে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলা এবং মনোভাব বজায় রাখা প্রধান বিষয়।
আমি কি ঘরের পরিবেশ পরিবর্তন করে আমার কাজের গতিও বাড়াতে পারি?
অবশ্যই। বাড়ির পরিবেশকে অফিসের মতো সাজিয়ে এবং নিজের জন্য স্থান তৈরি করে, আপনি কাজের গতি ও ফোকাস বাড়াতে পারেন।
কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করলে আমার কাজের ফোকাস বাড়ে?
অপনার কাজের জন্য অন্যান্য ফোকাস অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করুন, যা ব্যবহার করে আপনি কাজের সময় নষ্ট না করে সঠিকভাবে মনোযোগ দিতে পারবেন।
ধ্যান করলে কি কাজে ফোকাস বাড়ানো সম্ভব?
জি, ধ্যান এবং সচেতন শরীরচর্চা আপনার মস্তিষ্ককে রিফ্রেশ করে এবং কাজে ফোকাস করা সহজ করে।
কিভাবে আমি আমার দৈনিক কাজের পরিকল্পনা করতে পারি?
প্রতিদিন সকালে একটি সহজ কিন্তু কার্যকরী পরিকল্পনা তৈরি করুন, যাতে আপনার দৈনিক কাজগুলো সহজেই সম্পন্ন করা যায়।
বাড়িতে কাজ করার সময় বাচ্চাদের জন্য কি ব্যবস্থা নেব?
বাচ্চাদের জন্য কিছু সময় নির্ধারণে তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য কার্যকলাপগুলি তাদের জন্য নির্ধারণ করুন, যাতে তারা আপনার কাজের সময় ব্যস্ত থাকে।
এই সোজা পদ্ধতিগুলো চেষ্টা করে দেখুন এবং আপনার ফোকাস আরো গভীর করুন। আপনার সময়ের ব্যবহারকে সঠিকভাবে কাজে লাগান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।