বিনোদন ডেস্ক : গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ – ফুটবল বিশ্বকাপকে এই উপাধি দেওয়াই যায়। লিভারপুলের কিংবদন্তি কোচ বিল শ্যাঙ্কলি বলেছিলেন, ‘অনেকেই মনে করেন, ফুটবল জীবন-মৃত্যুর বিষয়। তবে আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, এটা তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে ফুটবলের মহাযজ্ঞ ‘বিশ্বকাপ’ কতটা উন্মাদনার বিষয় ভেবে দেখুন। বল নিয়ে কয়েকজনকে ছিটকে ফেলে গোল করা অনেকের চোখেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দৃশ্যের একটি। আর সে গোল যদি হয় বিশ্বকাপের মঞ্চে, তবে উত্তেজনার মাত্রা একবার কল্পনা করে নিন।
বলা হয়ে থাকে গোলের খেলা ফুটবল। জয় পরাজয় নির্ধারণের মাপকাঠিই হচ্ছে গোল। যে দল বেশি গোল করবে তারাই বিজয়ী হয় খেলায়। তাই যারা খেলার মাঠে গোল করার দায়িত্বে থাকেন, নজরটা তাদের উপরই বেশি থাকে। চার বছর পর পর যে বিশ্বকাপের আসর বসে সেখানে মানুষ খুঁজতে থাকেন ধুরন্ধর গোল স্কোরারদের। খেলাটার ইতিহাসে পেলে, ম্যারাডোনা, রোনালদোরা অমরত্ব পেয়েছে বিশ্বকাপের মঞ্চে তাদের অবস্মরনীয় গোলের জন্যই।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোল কার? – প্রশ্নের উত্তর বেশিরভাগ মানুষেরই জানা থাকার কথা। না জানলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই জেনে যাবেন একটু ধৈর্য নিয়ে পড়লেই।
১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে বসে বিশ্বকাপের প্রথম আসর। সে আসরের ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপের প্রথম আসরের শিরোপা জিতে নেয় স্বাগতিক দেশটি। সে আসরে ৮ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন গুইলিয়ার্মো স্তাবিল। এরপর বিশ্বকাপের আরও ২০টি আসর মাঠে গড়িয়েছে। পাঁচ আসরে শিরোপা জিতে সর্বোচ্চ শিরোপার মালিক হয়েছে ব্রাজিল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিরোপার মালিক জার্মানি ও ইতালি জিতেছে চারটি করে বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকাতেও ব্রাজিল ও জার্মানির তারকাদের প্রাধান্য।
বিশ্বকাপে কার কত গোল :
বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ গোলের মালিক ফ্রান্সের জাস্ট ফন্তেইন । ১৯৫৮ বিশ্বকাপ যদিও পেলের আগমনের বিশ্বকাপ হিসেবে বিখ্যাত। ১৭ বছরের পেলে সে বিশ্বকাপে বেঞ্চ থেকে এসে পরিণত হয়েছিলেন বিশ্বকাপ জেতানো তারকায়, তবে সে আসরটা মাতিয়েছিলেন ফন্তেইন। এক আসরেই ১৩টি গোল করেছিলেন এই ফরাসি। তবে সেমিফাইনালে ১৭ বছর বয়সী পেলের সামনে ম্লান ছিলেন এই তারকা। সেদিন পেলের হ্যাটট্রিকে ৫-২ গোলে ফ্রান্সকে বিধ্বস্ত করেছিল সেলেকাওরা। ফ্রান্সের দুই গোলের একটা ছিল ফন্তেইনের করা। তৃতীয় স্থান নির্ধারনি ম্যাচে আরও চার গোল করেন তিনি।
তবে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটা ফন্তেইনের দখলে নেই। চারটি বিশ্বকাপ খেলে ১৬ গোল নিয়ে রেকর্ডটির মালিক জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী স্ট্রাইকার মিরোস্লাভ ক্লোসার। এই গোল করতে তাকে খেলতে হয়েছে ২৬ ম্যাচ।
তিন বিশ্বকাপে ১৫ গোল নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ব্রাজিলের কিংবদন্তি রোনালদো নাজারিও। ‘বড় রোনালদো’ বা ‘দ্য ফেনোমেনন’ নামে খ্যাত ইতিহাসের সেরা নাম্বার নাইন ১৯ ম্যাচ খেলে এই গোলগুলো করেছেন। এর মধ্যে ২০০২ এর আসরে ৮ গোল করে ব্রাজিলকে চ্যাম্পিয়ন করতে বড় ভূমিকা রাখেন।
রোনালদোর আগেও এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন আরেক জার্মান। তাকে আবার ইতিহাসের সেরা স্ট্রাইকারের বিতর্কে রোনালদোর প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা হয়ে থাকে। ১৯৭৪ এর বিশ্বকাপজয়ী গার্ড মুলার ১৩ ম্যাচ খেলেই করেছেন ১৪ গোল।
চতুর্থ স্থানে যিনি তার কথা আগেই বলা হয়েছে। ফ্রান্সের জাস্ট ফন্তেইনের দূর্ভাগ্য যে, ইনজুরিতে তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে দ্রুতই। তাই ওই আসরের পর আর বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখা যায়নি তাকে। তবে এক আসরেই ৬ ম্যাচে ১৩ গোল করে বিশ্বকাপের চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলের মালিক বোনে গেছেন তিনি।
পঞ্চম স্থানে রয়েছেন তিনটি বিশ্বকাপজয়ী একমাত্র খেলোয়াড় পেলে। ১৯৫৮ এর বিশ্বকাপে ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপ জয় করা পেলে তার পরের আসরেও শিরোপার স্বাদ পান। যদিও ইনজুরিতে সেই বিশ্বকাপে নিয়মিত একাদশে ছিলেন না। এর পরের বিশ্বকাপে ব্রাজিল বাদ পড়ে যায় গ্রুপ পর্বে। তবে ১৯৭০ সালে নিজের শেষ বিশ্বকাপে তৃতীয় শিরোপার স্বাদ পান ‘ফুটবলের রাজা’ খ্যাত এই কিংবদন্তি। চার বিশ্বকাপে ১৩ ম্যাচ খেলে ১২ গোল করেছেন পেলে।
দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের মালিক কিন্তু ম্যারাডোনা বা হালের মেসি নন। এই রেকর্ডের মালিক গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা। ১২ ম্যাচ খেলে ১০ গোল নিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে অষ্টম সর্বোচ্চ গোলদাতা ‘বাতিগোল’।
বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকা :
১. মিরোস্লাভ ক্লোসা (জার্মানি) -১৬ গোল
২. রোনালদো নাজারিও (ব্রাজিল) -১৫ গোল
৩. গার্ড মুলার (পশ্চিম জার্মানি) -১৪ গোল
৪. ফন্তেইন (ফ্রান্স) -১৩ গোল
৫. পেলে (ব্রাজিল) -১২গোল
৬. সান্দর ককসিস (হাঙ্গেরি) -১১ গোল
৭. ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান (জার্মানি) -১১ গোল
৮. গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা (আর্জেন্টিনা) -১০ গোল
৯. তিওফিলো কুবিলাস (পেরু) -১০ গোল
১০. গ্যারি লিনেকার (ইংল্যান্ড) -১০ গোল
এছাড়াও ১০ টি করে গোল করেছেন পোল্যান্ডের গ্রেজেগোজ লাতো, জার্মানির থমাস মুলার ও হেলমুট রান। ১৯৮৬ এর বিশ্বকাপ জয়ী ডিয়েগো ম্যারাডোনার বিশ্বকাপে গোল রয়েছে ৮টি। বর্তমানের সেরা দুই তারকা লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো চারটি করে বিশ্বকাপ খেলেছেন। ১৭ ম্যাচে ৭ গোল করেছেন করেছেন পর্তুগিজ রোনালদো। অন্যদিকে ১৯ ম্যাচ খেলা মেসির বিশ্বকাপ গোল সংখ্যা ৬। ব্রাজিলের বর্তমান কাণ্ডারি নেইমার বিশ্বকাপের দুই আসরে ১০ ম্যাচ খেলে করেছেন ৬ গোল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।