স্পোর্টস ডেস্ক : কোষাগারে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। তাই ফুটবল বিশ্বকাপের মহাযজ্ঞ আয়োজনে ভয় পায়নি কাতার। ২০১০ সালে ফিফার থেকে আয়োজক স্বত্ত্ব পাওয়ার পরই কাতার ঘোষণা দেয়, বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেবেন তারা। কথা মতো কাজ তাদের। ১২ বছরের ব্যবধানে কাতারকে পাল্টে ফেলেছে আয়োজকরা। এজন্য খরচ করেছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। সংখ্যাটা কতো? এ নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি এ যাবৎকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে যাচ্ছে। গণমাধ্যমে এসেছে, কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য ২২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। ৩২ দলের এই প্রতিযোগিতা রোববার থেকে শুরু হচ্ছে। পর্দা নামবে ১৮ ডিসেম্বর। বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য কাতারের সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে অবকাঠামো নির্মাণে। নতুন করে ছয়টি স্টেডিয়াম নির্মাণ করেছে আয়োজকরা। সংস্কার করেছে দুটি স্টেডিয়াম। খেলোয়াড়দের প্রস্তুতির জন্য বানাতে হয়েছে অনুশীলনের জায়গা। সেসব আধুনিকিকরণেও ব্যয় হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা।
ফিফার কাছে যে পরিকল্পনা কাতার দিয়েছিল তাতে বলা হয়েছে শুধু ফুটবলের অবকাঠামো নির্মাণে ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করবে তারা। কিন্তু আদতে খরচ করেছে ৬.৫ বিলিয়ন থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার। ইউএস স্পোর্টস ফাইন্যান্স কনসালটেন্সি ফ্রন্ট অফিস স্পোর্টসের মতে, বাকি প্রায় ২১০ বিলিয়ন ডলার বিমানবন্দর, নতুন রাস্তা, হোটেলসহ উদ্ভাবনী হাব এবং অত্যাধুনিক পাতাল পরিবহনের উন্নয়নে ব্যয় করেছে কাতার।
শুধুমাত্র দোহাতেই, ‘দ্য পার্ল’ নামে আবাসন কমপ্লেক্সে ১৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে এবং দোহা মেট্রোতে খরচ হয়েছে ৩৬ বিলিয়ন ডলার। রাশিয়ার নিউজ এজেন্সি টাসের মতে, কাতারের অর্থমন্ত্রী স্বীকার করছেন প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৫০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে অবকাঠামো নির্মাণে।
সব মিলিয়ে যে ২২০ বিলিয়ন ডলার খরচের কথা বলা হচ্ছে তা কতোটুকু সত্য তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অনেকেই। তবে কাতার যে এরচেয়েও বেশি খরচ করতে পারে সেই ধারণা আছে সবারই। আগের বছরগুলোর তুলনায় বিশ্বকাপ আয়োজনের খরচ বহুগুণে বাড়িয়েছে কাতার। ২০১৮ সালে সফলভাবে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য রাশিয়া ১১.৬ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল। ব্রাজিল ২০১৪ সালে করেছিল ১৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের খরচ ছিল ৩.৬ বিলিয়ন ডলার। এর আগে জার্মানি ২০০৬ সালে ৪.৩ বিলিয়ন ডলার, জাপান ২০০২ সালে ৭ বিলিয়ন ডলার, ফ্রান্স ১৯৯৮ সালে ২.৩ বিলিয়ন ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৪ সালে ৫০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল।
কাতার এমনি এমনিতেই তো কাড়ি কাড়ি ডলার খরচ করেনি। মহা আয়োজন থেকে লাভ করতে পারবে সেই হিসেব কষেই মাঠে নেমেছে তারা। আট স্টেডিয়ামে ফুটবল তারকাতের পায়ের জাদুতে বুঁদ হয়ে থাকবেন সমর্থকরা। ফিফা জানিয়েছে, আট স্টেডিয়ামে মোট তিন মিলিয়ন টিকিট তারা বিক্রি করেছে। শুধু টিকিট বিক্রি থেকেই ফিফা রেকর্ড রেভেনিউ পেতে পারে। রাশিয়া বিশ্বকাপে টিকিট বিক্রি থেকে ফিফার আয় ছিল ৫.৪ বিলিয়ন ডলার। এবার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলেই রিপোর্টে এসেছে। এর পেছনে কারণ, ম্যাচ টিকিটির দাম বৃদ্ধি।
জার্মানির ক্রীড়া ক্রোড়পত্র আউটফিটার এক গবেষণায় বলেছে, ২০১৮ সালের টিকিটের থেকে ৪০ শতাংশ বেশি দামে কাতার বিশ্বকাপের টিকিট কিনেছে দর্শকরা। ফাইনালের টিকিটের সর্বনিম্ন দাম পড়েছে ৬৮৪ পাউন্ড। সর্বোচ্চ ৫ হাজার পাউন্ড ছাড়িয়ে। এছাড়া ম্যাচপ্রতি গড় টিকিটের মূল্য ২৮৬ পাউন্ড, রাশিয়া বিশ্বকাপে যা ছিল ২১৪ পাউন্ড।
কিলার স্পোর্টসের ভাষ্যমতে, ‘শেষ ২০ বছরে সবচেয়ে বেশি টিকিটমূল্য দিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন সমর্থকরা। ফাইনালে যারা টিকিট পেয়েছেন তারা শেষ চার বছরের তুলনায় ৫৯ শতাংশ বেশি অর্থ খরচ করছে।’
ধারণা করা হচ্ছে, শুধু টিকিট থেকেই ২০ বিলিয়ন ডলার আয় করবে আয়োজকরা। এছাড়া ২ লাখ ৪০ হাজার হসপিটালিটি প্যাকেজ বিক্রি করেছে আয়োজকরা। এছাড়া ব্রডকাস্টটিং স্বত্ব, স্পন্সর স্বত্ব থেকেও বিশাল আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে কাতারের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।