জুমবাংলা ডেস্ক : জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহকে অভিযুক্ত করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডির নির্বাহী পরিচালক ও জনপ্রিয় টকশো তৃতীয় মাত্রার সঞ্চালক সাংবাদিক জিল্লুর রহমানের করা একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন বেশ প্রচার হচ্ছে।
ভিডিওতে তিনি অভিযোগ করেন, রাজধানীর একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ‘ধমক’ দিয়েছেন এবং হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দেওয়ার ‘হুমকি’ পর্যন্ত দিয়েছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাসনাতের বিরুদ্ধে সাংবাদিক জিল্লুর রহমানের এমন অভিযোগের ভিডিও বেশ সাড়া ফেলেছে। এবার সেই ঘটনার সাফাই দিলেন হাসনাত।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে তিনি ওই ঘটানার বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন:
সম্প্রতি তৃতীয় মাত্রার সঞ্চালক ও সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডির নির্বাহী পরিচালক সাংবাদিক জিল্লুর রহমানের করা একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলাওভাবে প্রচারিত হচ্ছে। ভিডিওতে তিনি দাবি করেছেন, রাজধানীর একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আমি ‘ধমকের’ সুরে কথা বলেছি এবং তাদেরকে নানাভাবে হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দেওয়ার ‘হুমকি’ পর্যন্ত দিয়েছি! অথচ বাস্তবে এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তার এই অভিযোগ পুরোপুরি অসত্য ও জঘন্য মিথ্যাচারের নামান্তর।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গতকাল সকালে। যখন ঢাকাস্থ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একটি বাচ্চা মারা যায়। মৃত্যুর আগে বাচ্চাটির চিকিৎসা বাবদ দুই লক্ষ বিশ হাজার টাকা বিল এসেছে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে এক লক্ষ টাকা পরিশোধ করে নিহতের পরিবার। বকেয়া থাকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এই টাকা বকেয়া রেখে মৃত বাচ্চাটির লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করা ব্যতীত লাশ হস্তান্তরের কোনো সুযোগ আমাদের নেই।
পরবর্তীতে শিশুটির পরিবার ফোনে আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি মৃতের পরিবারের মোবাইল থেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার চেষ্টা করি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আমি এতটুকুই বলতে চেষ্টা করি যে, টাকা কমানো বা মওকুফ করার এখতিয়ার সম্পূর্ণ আপনাদের। আমি শুধু অনুরোধ করতে পারি। উল্লেখ্য, দিশেহারা নিহতের পরিবার কর্তৃপক্ষের কাছে বিল মওকুফের ব্যাপারে অনুরোধ করার সময়ে, সেখানে হাসপাতালের একজন ডেপুটি ডিরেক্টর উপস্থিত থাকলেও, তিনি কোনোরকম সহায়তা করতে অস্বীকৃতি জানায়। উনার সাথে বার বার কথা বলতে চাইলেও উনি কথা বলতে রাজি হননি।
কুমিল্লায় অবস্থান করায় সেখানে সশরীরে গিয়ে সহযোগিতা করার সুযোগ আমার ছিল না। সেজন্য আমার পরিচিত দুইজন ভাইকে আমি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বলি। যাতে ওনারা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে লাশ হস্তান্তরের ব্যাপারে নিহতের পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারেন।
এই বিষয়টিকেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘আমার কথা না শুনলে লোক পাঠিয়ে হাসপাতাল ভাঙচুর করা হবে’ বলে উপস্থাপন করা হয়। যা স্পষ্টত অন্যায় এবং চরম মিথ্যাচার।
ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য আমি আমার পরিচিত একাধিক সংবাদকর্মীকে ওই হাসপাতালে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করি। দৈনিক মানবজমিন ও যমুনা টেলিভিশনের দুইজন প্রতিনিধিকে আমি নিজে ফোন করে এই বিষয়ে অবহিত করি। তৎক্ষণাৎ তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলে। এবং অপেক্ষার কথা বলে পরবর্তীতে আর কেউই তাদের সাথে যোগাযোগ করেনি, কথাও বলেনি!
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে একজন ব্রিগেডিয়ার আমাকে ফোন করলে আমি তাকে এভাবেই বলি যে, টাকা কমানোর ব্যাপারে আমি মানবিক জায়গা থেকে আপনাদের কাছে অনুরোধ করতে পারি কেবল। সে অনুরোধ আপনারা বিবেচনা করবেন কি করবেন না তা একান্তই আপনাদের প্রাতিষ্ঠানিক পলিসিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু আপনারা তো আমাদের অনুরোধটাই শুনছেন না। দায়িত্বরত কেউ কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না। এরকম অসহযোগিতামূলক আচরণ কি একটা নিহতের পরিবার ডিজার্ভ করে? স্রেফ টাকার জন্য একটা বাচ্চা শিশুর লাশ আপনারা আটকে রাখছেন, তার পরিবারের অনুরোধটুকু পর্যন্ত শুনছেন না, এটা কোন ধরনের পেশাদার আচরণের উদাহরণ? ফ্যাসিবাদ পরবর্তী বাংলাদেশে একজন নিহতের অসহায় পরিবারের সাথে এই ধরনের অমানবিক আচরণ আদৌ গ্রহনযোগ্য কিনা? এসব শুনে, উনি নিজে ব্যাপারটি মীমাংসা করবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন।
মূল ঘটনা এই পর্যন্তই।
কিন্তু এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক জিল্লুর রহমান তার ভিডিওতে যা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মিথ্যাচার। নিজের পূর্বপরিচিত চিকিৎসকের মনগড়া গল্প শুনে এবং আমার পক্ষ থেকে কোনো ধরনের স্টেটমেন্ট না নিয়েই তিনি যে একপাক্ষিক বয়ান তৈরি করেছেন তা কোনোভাবেই নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার সংজ্ঞায় পড়ে না।
অন্তত জিল্লুর রহমানের মত একজন নির্ভরযোগ্য সাংবাদিক যে কিনা দীর্ঘ সময় ধরে ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে সরব ও শক্ত অবস্থানে ছিলেন, যার মুখ থেকে সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে উপস্থাপিত হতে দেখে আমরা ফ্যাসিবাদি, খুনি হাসিনাকে উৎখাতের শক্তি ও সাহস পেয়েছি বছরের পর বছর; তার থেকে এমন একপাক্ষিক, ভিত্তিহীন আর বায়াসড বক্তব্য কখনোই প্রত্যাশা করি না আমরা। ওনার এমন বক্তব্য ও তার ফলাও প্রচার আমাদের ভীষণভাবে আশাহত করে।
পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে কোনোরকম সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই এই ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট বক্তব্য সাংবাদিক জিল্লুর রহমানের বস্তুনিষ্ঠতাকে অত্যন্ত বাজেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ভবিষ্যতে তার যেকোনো বক্তব্যকে নৈর্ব্যক্তিকভাবে গ্রহণ করা যাবে কিনা সেটাও এখন প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।