জুমবাংলা ডেস্ক : ‘মেলা দিন ধইর্যা ইস্কুল বন্ধ, অহন কিতা করবাম। এর মধ্যে সরে-অ সরে-আ, এ বি সি ডি ও যোগ বিয়োগ ভুইল্যা যাইতাছি। আর ভুইল্যাও গেছি স্যার ও মেডামরার নামও। বাড়িত বইয়া থাহার চেয়ে বাবাও কইছে একটা কিছু করতাম। এর লাইগ্যাই তো বাজারে বাজারে গিয়া পান বেচি।’
করোনাকালে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া রবিন মিয়া কথাগুলো বলে। আজ বুধবার সকালে তাকে পান বিক্রি করতে দেখা যায় ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা নির্বাচন অফিসের সামনে।
একটা প্লাস্টিকের ক্র্যাক গলায় বেঁধে মধ্যে পান-সুপারি, জর্দা ও চুন নিয়ে ‘এই পান লাগবে পান’ বলতে বলতে ঘুরে বেড়াচ্ছে রবিন। প্রতি খিলি পাঁচ টাকা করে বিক্রি করছে সে।
কাছে গিয়ে জানতে চাইলে রবিন বলে, সে হচ্ছে উপজেলা জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের রায়পাশা গ্রামের মো. ওয়ারেছের ছেলে। স্থানীয় রায়পাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে বড়। বাবা একটি পানের বরজ ছাড়া স্থানীয় বাজারে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সহযোগিতা করতেন। এ থেকে যা আয় হতো তা দিয়েই সংসার চলে আসছিল। এখন এই করেনাকালে অন্য কাম কাজ বন্ধ থাকায় শুধু পানের বরজের কাজেই করছেন। তার আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাই বসে না থেকে ফেরি করে পান বিক্রি করছে রবিন। প্রতিদিন ২০০ টাকার ওপর বিক্রি হয় তার।
রবিন বলে, স্যার কি করবাম, আমরা গরিব মানুষ। আব্বার টেহায় সংসার চলে না। তাই ইস্কুলেই যহন বন্ধ এই কাজেই লাইগ্যা পড়ছি। এ সময় রবিনের পাল্টা প্রশ্ন, ‘স্যার আরেকটা কাম দিবাইন?’
রবিনের কাছে জানতে চাওয়া হয় তার স্কুলের নাম কি। অনেকক্ষণ আমতা আমতা করে কোনোমতে বিদ্যালয়ের নাম বলতে পারলেও নিজের রোল নম্বর ও বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ভুলে গেছে সে।
রবিন বলে, স্যার শরমের কথা সরে-অ সরা-আ, এ বি সি ডি ভুইল্যা গেছি। আর যোগ-বিয়োগ তো পারিই না। মনে অয় পড়া লেহা বন্ধ হওয়ায় চোখ থাকতেও অন্ধ অইয়া যাইতাছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, রবিনের মতো অনেকেই লেখাপড়া পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকেই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। এ খবর পেয়ে আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়েও বুঝাতে পারছি না। প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে অর্ধেকের ওপরে ঝরে পড়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।