স্বাস্থ্যকর সবজির মধ্যে অন্যতম হলো বিট। সালাদের সঙ্গে বিট খাওয়া খুব ভালো। অনেকে আবার মিহি করে কুচিয়ে রান্না করে খেতে ভালোবাসেন। ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে নানা ডায়েটে চলার অভ্যাস করছে মানুষ। এই ডায়েটে একটি ভালো উপাদান বিট।
বিটরুটের রস ভিটামিন, আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিডের চমৎকার উৎস, যা লাল রক্তকণিকার উৎপাদন বাড়ায়, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ও কোষে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়। বিটে আয়রন থাকায় চিকিৎসকেরা শরীরে রক্তের অভাব মেটাতে বিট খাওয়ার পরামর্শ দেন। অনেকে বিটের জুস করে খান।
অতিরিক্ত বিটরুটের রস পান করা শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিটের অনেক উপকারিতা থাকলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, যার জন্য অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। পরিমিত খেতে হবে এবং কিছু ক্ষেত্রে পরিহার করতে হবে। এটা জেনে নেওয়া ভালো, কাদের জন্য বিট খারাপ।
খাবারে বিট বা বিটযুক্ত রঙিন খাবার খাওয়ার পরে অনেকের লাল বা গোলাপি রঙের প্রস্রাব হয়ে থাকে, এমন প্রস্রাব হওয়াকে বলা হয় বিটুরিয়া। যাঁদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে, তাঁদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা গিয়েছে। তাই আয়রনঘাটতির সমস্যা থাকলে বিট খাওয়ার পরে যদি প্রস্রাবের রং লাল বা গোলাপি হয়, তাহলে বিট খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে বিট অক্সালেটসমৃদ্ধ এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। বিট ইউরিনারি অক্সালেট নিঃসরণ বাড়ায়, যা শরীরে ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথরের বিকাশ ঘটাতে পারে। তাই যাঁরা কিডনিতে পাথরের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের বিট বা বিটের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
অতিরিক্ত বিটরুট খাওয়ার ফলে অ্যানাফিল্যাক্সিস হতে পারে। যার ফলে শরীরে তীব্র অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। ত্বকে লাল র্যাশ, চুলকানি, ফুলে যাওয়া, হাঁপানি, আমবাত, গলা শক্ত হওয়া এবং ব্রঙ্কোস্পাজম হতে পারে। তাই যাঁদের অতিরিক্ত অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে, তাঁরা বিট পরিহার করতে পারেন, পরিমিত বিট খেয়ে দেখতে পারেন।
বিট খেলে মলের রং পরিবর্তন হতে পারে, এটা স্বাভাবিক বিষয়। অনেকের বিট খাওয়ার পরে কালো ও ট্যারি মলও বিটুরিয়ার লক্ষণ হতে পারে। অনেকের পেট খারাপ হয়ে যায়। পেট খারাপ হওয়ার কারণ বিটরুটে নাইট্রেট থাকে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেসের একটি প্রকাশনা অনুসারে, শরীরে উচ্চমাত্রার নাইট্রেটের কারণে পেটে ব্যথা হতে পারে। তা ছাড়া, বিটের জুসপানের ফলে কেউ কেউ পেটের রোগে ভুগতে পারেন।
বিটে নাইট্রেট থাকে। এ উপাদান গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক হতে পারে। গর্ভাবস্থায় অত্যধিক নাইট্রেট গ্রহণের ফলে এনার্জির অভাব দেখা দিতে পারে, সেই সঙ্গে মাথাব্যথা ও মাথাঘোরাতে পারে এবং অনেকের চোখ, মুখ, ঠোঁট, হাত ও পায়ের চারপাশের ত্বকের রং নীল বা ধূসর হয়ে যেতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় বিট না খাওয়া উত্তম।
যাঁরা ভোজনরসিক, লিভার দুর্বল করে ফেলেছেন, যার দরুন সমস্যা দেখা দিয়েছে, তাঁদের পরিমিত বিট খেতে হবে। গবেষকদের মতে, অত্যধিক বিটরুট ভোজনের ফলে লিভারে ধাতব আয়রন জমা হতে পারে, যা লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। অথচ লিভারের জন্য বিট ভালো কিছু, যদি পরিমাণ ঠিক থাকে।
ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত গবেষণার রিপোর্ট অনুসারে, অত্যধিক বিটরুটের রস শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা হ্রাস করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব মহিলার শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কম থাকে, তাঁদের অত্যধিক বিটরুটের রস বা বিট না খাওয়া ভালো।
ভালো খাবারের পরিমাণগত বিষয়টি না মানা হলে ক্ষতির কারণ হতে পারে। এসব বিষয় জানা থাকলে শরীরের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। মানুষ অনেক সময় বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। ফলে সচেতনতা জরুরি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।