সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : নির্বাচনী আইন অমান্য করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী বর্ধিত সভায় নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার প্রচারণার অভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জ-১ আসনের (শিবালয়-ঘিওর-দৌলতপুর) সংসদ সদস্য এএম নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারী) বিকেলে জেলার শিবালয় উপজেলার অক্সফোর্ড একাডেমীতে আয়োজিত এক নির্বাচনী বর্ধিত সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের (পিপি) সভাপতিত্বে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালান তিনি।
আগামী ৩১ জানুয়ারি এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার অক্সফোর্ড একাডেমীতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সমাবেশে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা দেন এমপি দুর্জয়। এসময় নৌকার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন তিনি।
নির্বাচনী বর্ধিত সভায় অংশ নিয়ে এমপি দুর্জয় তার বক্তব্যে বলেন, প্রার্থীদের জিজ্ঞাসা করলেই প্রার্থীরা শুধু বলে যে, বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছি। আবার আরেকটা সমস্যা আছে, শীতের দিনে মানুষ তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে, আটটার পরে দরজা খুলতে চায়না। এজন্য বলি প্রার্থীদের বলবেন, এবং আরেকটা জিনিষ হচ্ছে একা বললে কিন্ত হবেনা। আপনার সাথে দল এবং সহযোগী সংগঠনের যারা আছে, সবচেয়ে ভালো হয় আরো যারা প্রার্থী ছিল তাদের দিয়ে যদি ভোট চাওয়াতে পারেন। আপনি একবার যাবেন এবং অন্যরা যেন আরো তিন চার বার যায়। একবারের জায়গায় বার বার যেতে হবে ভোটারের কাছে। ভোটারের কাছে যত বেশি যাবেন তার দুর্বলতা তত বেশি বাড়বে প্রার্থীর প্রতি। সেই দুর্বলতার মধ্যে হিট করতে হবে। তার জন্য কিন্ত দল এবং সহযোগী সংগঠনের সবাইকে মাঠে নামতে হবে। আপনি একা ভোট চেয়ে কুলাতে পারবেন না। প্রতিটা ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাইতে হবে। মহিলারা একটা বড় ফ্যাক্টর আমাদের, বিশেষ করে আমাদের এই এলাকায় মহিলারা ধানের শীষ ছাড়া কিছু বঝতেই চায়না। মহিলাদের মাঠে নামান। সময় কিন্ত খুব বেশি নাই। আর বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে যেটা সেটা কালকের মধ্যেই করতে হবে। আপনারা যারা আছেন তারা দ্বায়িত্ব নিয়ে করেন। আপনার যারা জেলার, উপজেলার নেতৃবৃন্দ আছেন এবং ইউনিয়নের প্রার্থী সহ তারা তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। কারো যদি কোনা আশা আকাঙ্খা থাকলে প্রার্থীদের মিট করা উচিৎ। কারণ তাদেরও তো প্রার্থীতার জন্য কেন্দ্রে যথেষ্ট খরচ হয়েছে। সেই জিনিষটাও যদি আপনারা দেখেন, সেটা করে ম্যানেজ করে ফেলেন। আমার একটাই আহবান- নির্বাচনটা নির্বাচনের মত করবেন। মনে করবেন না যে নৌকা আসছে আর আমি হয়ে গেছি। নৌকা পাওয়ার আগে দেখি একেক জন সিংহের মত ঘুরে, আর নৌকা পাওয়ার পরে বিড়ালের মত ঘুরে। এইগুলি কিন্ত দেখতে ভালো লাগেনা।
এরপর তিনি সবার ক্যামেরা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, (নমিনেশনের) আগে বলেন আমার ৫০/৬০ লাখ টাকা বাজেট কোন ব্যাপার না। আর নমিনেশনের পরে দেখি কর্মীরা বলে ঠিকমত যোগান দেয়না। আমি শুধু একটা কথাই বলবো, এই নৌকা হারলে জননেত্রী শেখ হাসিনা হারবে। এই নৌকা হারলে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হারবে। এই নৌকা হারলে আমরা সবাই হারবো। সেইটা আমাদের এলাকায় যেন না হয়। কালকেও পত্রিকাদে দেখেছি সাত আটটা নিউজ হয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অনেক বড় বড় নেতা ও বড় বড় মন্ত্রীর এলাকায় নৌকার ভরাডুবি। সেইটা আমাদের এলাকায় যেন না হয়। মানিকগঞ্জ জেলার এটাই শেষ নির্বাচন। আমরা শেষটা যদি ভালো দিয়ে করতে পারি মানিকগঞ্জ জেলার ভাবমূর্তি উজ্জল হবে।
এরপর নৌকার প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নির্র্বাচনটা নির্বাচনের মত করেন। সবচাইতে বড় কথা হলো ইজ্জতের চেয়ে বড় কিছু নাই। ইজ্জতের মায়া কইরেন, টাকার মায়া কইরেন না। পরে কিন্ত আফছোস করে কুল পাবেন না। প্রার্থীদের জন্য কিছু দিক-নির্দেশনা আছে যা আমি অফ দা রেকর্ড দিব।
এ প্রসঙ্গে শিবালয় উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়ার মুঠোফোনে বার বার কল দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, কোন সংসদ সদস্য যদি নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় অংশ নিয়ে থাকেন তবে সেটা নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন। কোন সংসদ সদস্য যদি নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে থাকেন সেটা সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেখবেন।
নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য এএম নাঈমুর রহমান দুর্জয় মুঠোফোনে জানান, নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান সংবাদ সম্মেলন করে নৌকার পক্ষে মাঠে নামার কথা বলতে পারলে আমি কেন পারবোনা? আমি তো নৌকার পক্ষে ভোট চাইনি। আমি শুধু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নৌকার পক্ষে কাজ করার কথা বলেছি। আমার জানা মতে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন হয় এমন কোন কথা আমি বলিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।