গাজীপুর প্রতিনিধি: আজ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯। ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহবায়ক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজ সেবক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মদানকারী জাতীয় বীর শহীদ ময়েজউদ্দিনের ৩৫তম শাহাদাৎ বার্ষিকী।
১৯৮৪ সালের ২৭ শে সেপ্টেম্বর তৎকালীন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সারাদেশে ২২ দল আহুত হরতালের আহবান করে। ওইদিন গাজীপুরের কালীগঞ্জে গণতন্ত্র প্র্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মিছিলে শহীদ ময়েজউদ্দিন নেতৃত্ব দেন। ওই সময় কালীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন এলাকায় কতিপয় সন্ত্রাসী তাঁর ওপর হামলা চালালে ঘটনাস্থালেই তিনি শাহাদাৎ বরণ করেন।
২৭ সেপ্টেম্বর শহীদ ময়েজউদ্দিন আহমেদের ৩৫তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে কালীগঞ্জ উপজেলা আ’লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে উপজেলার সকল ইউনিয়ন এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে শুক্রবার সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে শহীদ ময়েজউদ্দিনের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, বেলা ১১টায় কালীগঞ্জ উপজেলা আ’লীগ কার্যালয়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, দুপুর ১২টায় উপজেলা পরিষদের চত্ত্বরে ময়েজউদ্দিন স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন, বিকেল ৪টায় দেওপাড়া শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতু সংলগ্ন মেহের আফরোজ চুমকি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে দোয়া মাহফিল ও দরিদ্র ভোজ, তাছাড়া কালীগঞ্জ উপজেলার সকল ইউনিয়েনে আ’লীগের আয়োজনে দোয়া মাহফিল ও দরিদ্র ভোজ অনুষ্ঠিত হবে। ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টায় শহীদ ময়েজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
শহীদ ময়েজউদ্দিন ১৯৩০ সালে ১৭ মার্চ বর্তমান গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়হরা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছুরত আলী, মাতার নাম শহরবানু। তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি এমপির পিতা। তিনি ঐতিসাহিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা করার জন্য গঠিত ‘মুজিব তহবিলের’ আহবায়ক ছিলেন। একজন বিচক্ষণ আইনজীবী ও রাজনীতিক হিসেবে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে ওই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন। ময়েজউদ্দিন উল্লেখযোগ্য সময় ধরে বৃহত্তর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ এবং ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে গাজীপুর-কালীগঞ্জ নির্বাচনী এলাকা থেকে যথাক্রমে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ছিলেন।
রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কাজে জড়িত ছিলেন। ১৯৭৭ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ রেডক্রস (বর্তমানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট) সোসাইটির নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। একাধারে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি (এফপিএবি)’র মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শহীদ ময়েজউদ্দিনের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে গড়ে উঠা প্রবল গণআন্দোলনে অবশেষে সামরিক শাসক ও শাসনের পতন ঘটে। গণতন্ত্রের জয় হয়। শহীদ ময়েজউদ্দিন একজন দেশপ্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, প্রজ্ঞাবান রাজনীতিক, বিশিষ্ট সমাজসেবী ও সাধারণ জনকল্যাণে নিবেদিত প্রাণ মানুষ হিসেবে ইতিহাসে এবং মানুষের হৃদয়পটে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গৌরবময় ভূমিকা পালন করায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সব্বোর্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান “স্বাধীনতা পদক”-এ ভূষিত করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।