জুমবাংলা ডেস্ক : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে আরও দুটি আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর রায় কার্যকর করতে আর বাধা থাকবে না।
এর আগে একই অপরাধে যাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল আপিল বিভাগের রায়ের পর তাদের ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ আজহারের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। তবে ট্রাইব্যুনালে চারটি অভিযোগে তাকে দণ্ড দেওয়া হলেও আপিলের রায়ে একটি অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন জামায়াতের সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল।
ট্রাইব্যুনালের রায় আপিলেও বহাল থাকায় এই রায় কার্যকর করতে আর মাত্র দুটি ধাপ রয়েছে।
বিধান অনুযায়ী আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পাওয়ার পর সেটি দেখে রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) করার সুযোগ পাবেন আসামি। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ করার সুযোগ পাবেন আজহার।
রিভিউ খারিজ হলে মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচতে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের সুযোগ পাবেন আজহার। রাষ্ট্রপতি দণ্ডবিধির ৫৫ (ক) ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ক্ষমা করতে পারেন। আর ক্ষমা না করলে তার ফাঁসি কার্যকরে ব্যবস্থা নেবে সরকার। এরপর ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে।
সকালে আপিলের রায় ঘোষণার পর জামায়াত নেতার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মৃত্যদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে (রিভিউ) আবেদন করা হবে। আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আমরা সেটি দেখে ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ করব। রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আজহারের ফাঁসির রায় কার্যকর করা যাবে না।’
তবে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এ পর্যন্ত যারাই রিভিউ করেছিলেন তাদের কেউ ফাঁসি থেকে রেহাই পাননি।
রিভিউয়ে সাজা কমার নজির নেই এমন দাবি করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘রিভিউ শুনানির পর কারও ফাঁসি বা মৃত্যুদণ্ড কমেছে, আমার জানা নেই। ইতিহাসে এমন নজির আছে বলেও আমার জানা নেই।’
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এ পর্যন্ত ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এর মধ্যে পাঁচজন জামায়াত নেতা আর একজন বিএনপি নেতা। তাদের মধ্যে জামায়াত নেতারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার জন্য সময় নিয়েছিলেন। তবে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রাণভিক্ষা চাননি বলে তার পরিবার দাবি করেছিল।
একাত্তরে যুদ্ধপরাধের দায়ে করা মামলায় প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার। ২০১২ সালের ১১ ডিসেম্বর রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পরদিন তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
দ্বিতীয় ফাঁসি কার্যকর হয় জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের। ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। রিভিউ খারিজের তিন দিন পর তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
কামারুজ্জামানের পর ২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর ফাঁসি কার্যকর করা হয় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর। ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর রিভিউ আবেদন খারিজের তিন দিন পর পাশাপাশি মঞ্চে দুজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
২০১৬ সালের ১০মে দিবাগত রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি কার্যকর হয় জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর।
সর্বশেষ ফাঁসি কার্যকর করা হয় জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর। ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
জামায়াতের নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা পেয়ে কারাগারে আছেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।