আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চারিদিকে অন্ধকার, কান্না আর আতঙ্ক। শুধুই দীর্ঘশ্বাস। এ যেন এক লাশের শহর। লাশের গন্ধে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে নিউইয়র্ক। সদা ব্যস্ত এই শহরের চেহারা একেবারে বদলে গেছে। চাপা আতঙ্কের মধ্যে শুধুই শোনা যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন আর স্বজন হারানোর কান্না।
ইতিমধ্যে করোনার হানায় অনেক আগেই উৎপত্তিস্থল চীনকে ছাড়িয়ে আক্রান্তের তালিকায় লাখ ছাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের দেশে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ১১০ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেছে ৯০৮ জনের। যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।
করোনার হানায় দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত সাড়ে ২৫ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে, সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ২১৫ জনে।
দেশটিতে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী নিউইয়র্ক রাজ্য। গোটা দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ রোগীই এ অঙ্গরাজ্যের। বুধবার এ অঞ্চলে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৯১৭ জন। এ নিয়ে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৩ হাজার ৯০১ জন। এদিন সেখানে মারা গেছেন আরও ৩১৯ জন। ফলে শুধু নিউ ইয়র্কেই মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২১৯ জনে।
এ পর্যন্ত নিউইয়র্কে ৩৫ জনসহ যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনা ভাইরাসে। এরমধ্যে গত মঙ্গলবারই মারা গেছেন পাঁচ প্রবাসী বাংলাদেশি। একে একে পরিচিত মুখগুলো ছবি হয়ে যাওয়ায় ভীতসন্ত্রস্ত প্রবাসীরা। লকডাউন মেনে টানা ১০ দিন গৃহবন্দি থেকে স্বজন-পরিচিতজনদের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে অসহায়ের মত ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে তাদের। প্রিয় মানুষকে শেষ শেষ বিদায়ও জানতে পারছে না।
এছাড়া জানা গেছে, বাংলাদেশি ডজন খানের চিকিৎসক নিজেরাই করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ চিকিৎসা নিচ্ছেন ঘরে, কেউ হাসপাতালে। এর মধ্যেই সুখবর হচ্ছে, কমিউনিটির পরিচিত চিকিৎসক আতাউল ওসমানী নিজ ক্লিনিক থেকে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন।
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত আজকাল পত্রিকার সম্পাদক ও জ্যাকশন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি জাকারিয়া মাসুদ বলেন, ‘নিউইয়র্কে কয়েক লাখ বাংলাদেশির মধ্যে কমপক্ষে ৫০ হাজার আছেন যারা দৈনিক পারিশ্রমিকে কাজ করেন। অনেকে ট্যাক্সি চালান। এসব মানুষের বিপদ সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশিদের জমজমাট জ্যাকসন হাইটস এলাকার প্রায় সবকিছু বন্ধ। ট্যাক্সিচালক ও যারা ট্যাক্স দেন, তারা কিছু প্রণোদনা পাবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিউইয়র্ক পুলিশের ৫ শতাধিক সদস্য করোনায় আক্রান্ত বলে জানা গেছে। অনেক পুলিশ সদস্য সেলফ আইসোলেশনের কথা বলে ছুটিতে আছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হলেও পুলিশ স্বল্পতায় প্রশাসন উদ্বিগ্ন। যদিও প্রয়োজনে সেন্ট্রাল পুলিশ দিয়ে সহায়তার কথা বলা হয়েছে। নিউইয়র্ক পুলিশে অনেক বাংলাদেশি কাজ করেন। তাদেরও বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হয়েছি।’
‘নিউইয়র্কের প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে একাধিক বাংলাদেশি ডাক্তার আছেন। তারা সেবা দিচ্ছেন, আক্রান্তও হচ্ছেন।’
নিউইয়র্কের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গতকাল এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘নিউইয়র্কবাসীদের জন্য সবাইকে দোয়া করার অনুরোধ করছি। বাংলাদেশি আমেরিকান যারা আছেন তারা অনেকেই করোনায় আক্রান্ত। পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন।’
নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর ভাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গভর্নর বলছেন, ‘আমাদের লড়াইয়ের লক্ষ্য দুটো। একটি হাসপাতালে, অন্যটি নগরবাসীকে ঘরে রাখার।’ নিউইয়র্কে জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে যাওয়া, সমাবেশে যোগ দেওয়া, পার্টির আয়োজন করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নিউইয়র্কে করোনা ভাইরাসে মারা যাওয়া লোকজনের মরদেহ দেওয়া হয় না পরিবারকে। ফোনে সমাহিত করার স্থান জানাতে হয়। তারপর বেশ কিছু আইনি আনুষ্ঠানিকতার পর মৃতদেহকে সরাসরি কবরস্থানে পাঠানো হয়। বেশ দূরত্ব রেখে একান্ত কিছু স্বজন জানাজায় অংশ নেওয়া বা শেষ বিদায় জানানোর আয়োজনে থাকতে পারছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।