জুমবাংলা ডেস্ক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ‘প্রতিবন্ধী প্রজন্ম’ উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার। এ ঘটনায় ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন।
গতকাল বুধবার বিকেলে আদেশের কপি পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোবাশ্বের হোসেন।
এর আগে রোববার (২০ অক্টোবর) দিনভর লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের গেটে ওই অধ্যক্ষকে চূড়ান্ত বরখাস্ত ও গ্রেপ্তার দাবিতে অনশন করেন একই কলেজের প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না। পরে জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে অনশন ভাঙেন তিনি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত জুলাই-আগস্ট মাসে শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটায়। এ আন্দোলনকে প্রতিবন্ধী প্রজন্ম উল্লেখ করে গত ১৮ জুলাই নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে করেন অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ। এ ঘটনার পর অধ্যক্ষ আব্দুর রউফকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে গত ২০ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না।
আব্দুর রউফ সরকার উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর যোগদান করেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি যোগদানের পর থেকে শিক্ষক কর্মচারীদের ওপর অন্যায়, অনৈতিক আচরণ করে নানাভাবে হয়রানি করছেন। তাঁর অনিয়মের প্রতিবাদ করলে হয়রানি বেড়ে যেত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অধ্যক্ষের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্নাকে ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ সাময়িক বরখাস্ত করেন এবং একই সালের ৮ এপ্রিল রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। পরবর্তীকালে শিক্ষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত রিট পিটিশন করলে হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং চলতি বছরের ২১ মার্চ বরখাস্তের স্থগিত আদেশ দেন আদালত।
একই সঙ্গে শিক্ষক তাবাসসুম রায়হান ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকেও তদন্ত করে অনিয়ম দুর্নীতির সত্যতা পেয়ে অধ্যক্ষ আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেন। অপর দিকে শিক্ষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্নাকে কলেজে প্রবেশেও বাধা দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ ওই প্রভাষকের।
এর মধ্যেই ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার ঘটনায় ২০ অক্টোবর দিনভর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের গেটে অনশন শুরু করেন তিনি। জেলা প্রশাসক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে অনশন ভঙ্গ করেন ওই প্রভাষক।
প্রভাষকের করা অভিযোগ তদন্ত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিবন্ধী প্রজন্ম বলে প্রচার করার সত্যতা পায় জেলা প্রশাসন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কটাক্ষ করায় অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকারের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মামলা করতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দিয়ে ২১ অক্টোবর পত্র জারি করেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (শিক্ষা) এস এম শাফায়াত আখতার নুর।
প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না বলেন, ‘মামলা ও বরখাস্তের আদেশ দিলেই হবে না। আগামী রোববারের মধ্যে গ্রেপ্তার করা না হলে পুনরায় অনশন করব।’
কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আদেশের কপি পেয়েছি। জেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।