জামের ইংরেজি নাম জাম্বোলান, জাভা প্লাম, ব্ল্যাক প্লাম, জামুন ইত্যাদি। মির্টেসি পরিবারের এ গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Syzygium cumini। জামের জন্ম এ অঞ্চলে বলে এখানে ভুতিজাম, পাতিজাম, কাকজাম, বুটিজাম, ক্ষুদিজাম, পানিজাম, লোহাজাম ইত্যাদি নামের অনেক রকমের জাম দেখা যায়। এগুলো গ্রামের বনজঙ্গলে এমনিতেই জন্মায়।
জাম বড় বৃক্ষ, বাঁচে শত বছরের ওপরে। আর উচ্চতায় এক শ ফুটের বেশি হয়। জামের ফুল ফোটে মার্চ-এপ্রিলে। ফুল খুব ছোট ও সুগন্ধযুক্ত। ফুলের ব্যাস মাত্র পাঁচ মিলিমিটার। মে-জুন মাসে ফল হয়, জুনে পাকে। মে থেকে জুন—এই দুই মাস যদি ফলটা রোজ দেখা যায়, তাহলে এর রংবদল দেখে বিস্মিত হতে হয়।
ছোট্ট জামের ফলদানা থেকে জালের কাঠির মতো হালকা সবুজ রঙের কাঁচা ফল। কাঁচা ফল পরিপুষ্ট হওয়ার পর যখন তার আকার আর বাড়ে না, তখন তার গায়ে লালচে আভার রং ধরে। রংটা শুরু হয় বোঁটার দিক থেকে। এরপর রংটা গোলাপি হয়ে পুরো ফলের গায়ে ছড়িয়ে পড়ে। তখন জামকে গোলাপি মনে হয়। এরপর সেটা হয়ে যায় রক্তলাল বা মেরুন রং। পেকে শাঁস নরম হলে রংটা হয়ে যায় কালো, তখনই এর নাম ‘কালোজাম’ সার্থক হয়।
জাম ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে অবিশ্বাস্যভাবে কাজ করে, বিশেষ করে যাঁরা হাইপারগ্লাইসেমিয়ায় ভুগছেন। জামের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশ কম। এ কারণে তা রক্তে চিনির পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। অনেক গবেষক গবেষণা করে দেখেছেন, জামের রস খাওয়ার পর মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই রক্তের সুগার লেভেল বা চিনির মাত্রা কমে যায়। আর জাম বিচির ক্ষেত্রে কমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। কয়েক সপ্তাহ জামরস খেলে ইনসুলিন গ্রহণকারীদের ইনসুলিন গ্রহণ কমাতে তা সাহায্য করে।
জামে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। তাই জামের রস রক্তশোধক হিসেবে কাজ করে এবং রক্তাল্পতা দূর করে। জামের রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি থাকায় তা চোখ ও ত্বক ভালো রাখে। ভিটামিন সি থাকায় জাম খেলে মুখ ও গলার ক্ষত সেরে যায়। জাম খেলে বাড়ে ত্বকের মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা।
একবার ১০ থেকে ২০ মিলিলিটারের বেশি পাকা জামের রস না খাওয়া উচিত। তেমনি জামের গুঁড়া ডায়াবেটিসের ওষুধ হিসেবে খেলে তা দিনে ১ থেকে ৩ গ্রাম, মানে আধা চা-চামচের বেশি খাওয়া ঠিক নয়।
জাম শুধু মানুষের জন্যই উপকারী নয়, অনেক প্রাণীর রোগও ভালো করে। বিশেষ করে মহিষ ও ছাগলের ভাইরাসজনিত বসন্ত বা পক্স রোগের ওপর জামের কার্যকারিতা গবেষণা করে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গেছে, জামপাতা ব্যবহার করে ৯৮ দশমিক ৫২ শতাংশ ভাইরাস জীবাণু প্রতিরোধ করা যায়।
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel