স্পোর্টস ডেস্ক : বর্তমানে নতুন আর পুরনো খেলোয়াড়দের মিশেলে ইংল্যান্ডের যে ক্রিকেট দল তার ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন কাশ্মীর বংশোদ্ভূত মঈন আলী।
সম্প্রতি মঈন আলীর সতীর্থ বেন স্টোকসের ফর্মটা ভালো যাচ্ছে না, বিশেষতঃ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে।
ব্যাটে রান নেই, বল হাতে খুব আহামরি কিছু করেননি। মঈন আলী এখানে বেন স্টোকসের ত্রাতা হয়ে এসেছেন, ‘বেন রান করবেই।’
ইংল্যান্ডের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান মঈন আলীর উদৃতি দিয়ে এ ওই বাক্যটিই দিয়ে হেডলাইন করে।
মঈন আলী যখন ঘোষণা দিলেন, বেন স্টোকসের পাশে পুরো দল আছে, তখন মনেই হয়েছে মঈন আলী যেন দলটার একজন মেন্টর, যিনি ধরে রেখেছেন পুরাতন ও নতুনকে।
গত এক বছরে ইংল্যান্ডের টেস্ট দলে এসেছে নানা পরিবর্তন, টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে থেকে বিদায় নিয়েছেন ইয়ন মরগান। জেসন রয় এখন আর ব্যাটে আগের মতো রান পাচ্ছেন না।
আগের মতো আছেন কেবল মঈন আলী। যিনি সম্প্রতি ইংল্যান্ডের একটি টি-টোয়েন্টি দল নিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে ৭ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে অধিনায়ক হিসেবে জিতে এসেছেন।
পাকিস্তানের মাটিতে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে জিতেই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি, ‘আমরা বিপদজনক।’
ইংল্যান্ড দলটা আক্ষরিক অর্থেই বিপদ বয়ে আনতে পারে প্রতিপক্ষের জন্য। দুই একটা ম্যাচে তার ইঙ্গিত দেখা গেছে ইতোমধ্যে।
যেমন লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ইংল্যান্ড ১৭০ রান তাড়া করেছে ১৪ ওভার তিন বলে। আবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১১ ওভারেই ১৩২ রানের জুটি গড়েন জস বাটলার ও অ্যালেক্স হেইলস।
মঈন আলী এই দলটারই একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, নেতা ও অভিজ্ঞ একজন ক্যাম্পেইনার। যিনি ইংল্যান্ডের আপাতকালীন অধিনায়কত্ব করতে পেরে ‘গর্বিত’।
চলতি বছরের জুলাই মাসে মঈন আলী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৮ বলে ৫২ রানের একটি ইনিংস খেলেন।
জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে ৩৫ বলে ১০৬ রানের একটি জুটি গড়েন- যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রেকর্ড।
জুলাই মাস থেকে বিশ্বকাপের শুরু পর্যন্ত ১৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে ইংল্যান্ড। এই সময়ের মধ্যে ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যান মঈন আলী।
১৩ ম্যাচে ২৭৯ রান তুলেছেন তিনি ১৭১ স্ট্রাইক রেটে। তার চেয়ে বেশি রান করেছেন ডাউইড মালান কিন্তু গড় ও স্ট্রাইক রেটে অনেক পিছিয়ে।
এই সময়ের মধ্যে ইংল্যান্ডর হয়ে মঈন আলীর চেয়ে বেশি ছক্কা কেউ মারেনি।
এই ১৩ ম্যাচেই মঈন আলী তিনটি ফিফটি হাঁকিয়েছেন, এর বাইরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটি ২৭ বলে ৪৪ রানের ইনিংসও আছে।
পাকিস্তান সিরিজের আগে মঈন আলী বছরের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেও একটি টি-টোয়েন্টি সিরিজে অধিনায়কত্ব করেছিলেন।
ব্রিজটাউনে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে ২৮ বলে ৬৩ রান ও ২ উইকেট নিয়ে প্রায় একাই ম্যাচ জিতিয়ে এনেছিলেন।
ইনিংসের শেষ দিকের ওভারগুলোতে যখন দ্রুত রানের প্রয়োজন হয় তখন মঈন আলী অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন, ব্রিজটাউনে সেদিন তিনি এক ওভারে ২৮ রান নিয়েছিলেন।
একটি বিশ্লেষণে উঠে এসেছিল, কেন মঈন আলী এতো প্রভাবশালী টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার।
২০১৯-২০ মৌসুমের ২৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের পরিসংখ্যান দেখে তিনি দেখেছেন আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিন কিংবা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলদের সাথে মঈন আলীও আছেন প্রভাবশালী এবং ধারাবাহিকভাবে ভালো করা ক্রিকেটারদের তালিকায়।
৩৪ বছর বয়সে ২০২১ সালে টেস্ট ক্রিকেট ছাড়ার পর তিনি আবুধাবি টি-টেন খেলতে গিয়ে ২৩ বলে ৭৭ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন।
তখন তিনি বলেছিলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেট ছাড়ার পর শেকলমুক্ত লাগছে’। মঈন আলী মনে করেন এই সময়টায় সব ক্রিকেটারেরই বেছে খেলা প্রয়োজন।
বিশেষত তিন ফরম্যাটে ক্রিকেট চালিয়ে নেওয়াটাকে তিনি বোঝা মনে করেন।
বেন স্টোকস ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে বিদায় নেয়ার পর মঈন আলী মত দিয়েছিলেন, ‘দ্রুতই ওয়ানডে ক্রিকেটের গুরুত্ব কমতে থাকবে ক্রিকেটারদের কাছে’।
ইএসপিএনক্রিকইনফোর লেখক জর্জ ডোবেলের কলামে তিনি মঈন আলীর নিঃস্বার্থ মনোভাবের প্রশংসা করেছেন।
দলের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে এসেছেন তিনি। চলতি বছরের জুন মাসে মঈন আলী ‘অর্ডার অফ ব্রিটিশ এম্পায়ার’- ওবিই উপাধি পেয়েছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্মদিনে।
ইংল্যান্ডের সাদা বলের ক্রিকেটে অবদানের কারণে তিনি এই উপাধি পান তখন।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মঈন আলী বলেছিলেন তখন, তার এই স্বীকৃতি ব্রিটিশ এশিয়ান সম্প্রদায়ের জন্য একটা বড় পাওয়া, ‘যারা এখনও সেভাবে ইংল্যান্ডর মূল স্রোতে জায়গা করে নিতে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন’।
মঈন আলীর দাদা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই কাশ্মীর থেকে ইংল্যান্ডে চলে গিয়েছিলেন, সেখানেই তার মায়ের জন্ম হয়।
মঈন আলী মনে করেন, এটা আমার যাত্রার একটা স্বীকৃতি। আমার উঠে আসা, আমার অতীত এবং আমি যেখানে এসেছি এসবের মূল্য বুঝে পাচ্ছি এখন।
জন্ম ইংল্যান্ডে হলেও পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত মঈন আলী বিয়ে করেছেন বাংলাদেশের সিলেটের মেয়ে ফিরোজা হোসেনকে।
আর বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খেলতে এসে প্রথমবার শ্বশুরবাড়ি গেলেন মঈন আলী। স্ত্রীর জন্মস্থানে গিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ৩৪ বছর বয়সি অলরাউন্ডার।
সিলেট গিয়ে উচ্ছ্বসিত মঈন বলেছিলেন- ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে নিজের বাড়ি মনে করি আমি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।