জুমবাংলা ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় `আম্পান’ যতই খুলনার মোংলা বন্দরের কাছাকাছি এগিয়ে আসছে ততই উপকূলের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হচ্ছে। খবর ইউএনবি’র।
মঙ্গলবার সকালে কড়া রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়া শুরু করে এবং দুপুর দেড়টার দিকে শুরু হয় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি।
বৃষ্টির কারণে গুমট ভ্যাপসা গরম কমে পরিবেশ কিছুটা ঠাণ্ডা হওয়ায় রোজার মাসে গরমে অতিষ্ঠ হওয়া সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি বোধ করলেও আকাশ অন্ধকার হয়ে আসায় স্থানীয়দের মাঝে ঘূর্ণিঝড়ের ভীতি দেখা দিয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ে কারণে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হলেও তেমন কেউ এখনও কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করেননি।
স্থানীয়রা বলছেন , ‘এখন যেয়ে কী করব, ঝড় তো শুরু হয়নি, ঝড় আসুক দেখি কী হয়, তারপর যাব আশ্রয়কেন্দ্রে।’
আবার কেউ কেউ বলছেন, ‘এ মুহূর্তে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ভয় লাগছে, কারণ করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে। আশ্রয়কেন্দ্রে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আসবে, কার ভেতরে কী আছে তা তো কেউ জানে না। ঝড়ে যা হয় হোক, করোনা থেকে তো বাঁচা যাবে।’
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার বিষয়ে বলেন, ‘সাত নম্বর বিপদ সংকেত জারির পর বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব এলার্ট থ্রি জারি করা হয়েছে। বন্দরে যে ১০টি বিদেশি জাহাজের অবস্থান রয়েছে সেগুলোর কাজ বন্ধ রেখে নিরাপদে সরিয়ে রাখা হয়েছে।’
‘বন্দরের নিজস্ব নৌযানগুলো নিরাপদে রাখার পাশাপাশি পশুর চ্যানেলের সকল নৌযানকে অন্যত্র নিরাপদে থাকার জন্য বলা হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
এছাড়া বন্দর জেটিতে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের ৮টি যুদ্ধ জাহাজ অবস্থান নিয়েছে। সব মিলিয়ে সকল প্রস্তুতি ও ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাহাত মান্নান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. নাহিদুজ্জামান জানান, এখানকার ৮৪টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ বহুতল বিশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ১০৩টি।
এছাড়া জনসাধারণকে সচেতন ও আশ্রয়কেন্দ্রমুখী করতে ১১ শ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে বলেও জানান তারা।
আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনদের জন্য শুকনো খাবার সংগ্রহ করা হয়েছে এবং রাতে সেহরিরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. নাহিদুজ্জামান।
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে মোংলার সবচেয়ে দুর্গম এলাকা হিসেবে চিহ্নিত চিলা-জয়মনি এলাকার এক থেকে দেড় শ নারী, শিশু ও বৃদ্ধ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে।’
এদিকে, পৌর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে চালানো হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের সর্তকবার্তার ব্যাপক প্রচারণা। বন্দর কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসন পৃথক কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি ও প্রচারণা চালাচ্ছেন।
পৌর মেয়র মো. জুলফিকার আলী বলেন, পৌরসভার ডিজিটাল কেন্দ্র হতে প্রতিনিয়ত প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এছাড়া পৌর এলাকার মধ্যকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে রাখা হয়েছে।
‘আশ্রয়কেন্দ্রে আগতরা যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।
মঙ্গলবার দুপুরের আবহাওয়ার বুলেটিন অনুসারে, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে থাকা ঘূর্ণিঝড় আম্পান আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে আজ শেষরাত হতে বুধবার বিকাল বা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলেও বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।