ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই বাংলার মাটিতে আর যেন কোনও যুদ্ধাপরাধী, বোমাবাজ, লুটতরাজ দল ক্ষমতায় আসতে না পারে। কারণ, জামায়াত ও বিএনপি ক্ষমতায় যায় দেশকে ধ্বংস করার জন্য আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে সৃষ্টি করার জন্য, দেশকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য।’
তিনি আজ চট্টগ্রামের ফলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর ও উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই কথা বলেন।
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘অঁনায়ারা ক্যান আছন, বেয়াগ্গুন গম আছননি? তোঁয়ারারলাই পেট পুড়ের, তাই চাইতাম আইসসিদি।’
তিনি বলেন, ‘ছোট বেলায় বাবা জেল থেকে বের হলেই প্রতিবছর আমাদের চট্টগ্রামে বেড়াতে নিয়ে আসতেন। চট্টগ্রামের জন্য এবং চট্টগ্রামের মানুষের জন্য তাই আমার প্রাণ কাঁদে। চট্টগ্রামের মানুষ এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বহু আন্দোলন সংগ্রামের জন্ম দিয়েছে। তাই চট্টগ্রাম হচ্ছে আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি মানে গুম, জ্বালাও-পোড়াও ও হত্যার রাজনীতি। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি লালদীঘির জনসভায় আমাকে এবং আমার নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। আমার ৩০ জন নেতাকর্মীকে সেদিন হত্যা করা হয়েছে। মানববর্ম রচনা করে চট্টগ্রামে মানুষ আমাকে রক্ষা না করলে হয়তো আমিও মারা যেতাম। আর সেদিন যে পুলিশ অফিসারের নেতৃত্বে গুলি চালানো হয়েছিল তার নাম রকিবুল হুদা। সেই রকিবুল হুদাকে পরবর্তীতে খালেদা জিয়া পদোন্নতি দিয়েছিল। এই হচ্ছে বিএনপি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী এখন জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট চলছে। আর্থিক মন্দা চলছে। সইে তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে। আমাদের কখনো খাদ্য সংকট হবে না। আমাদের বিদ্যুৎ সংকটও হবে না। কিছুদিন বিদ্যুতের জন্য কষ্ট পেয়েছেন, এখন আর কষ্ট হবে না। তবে আপনাদের সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। হিসেব করে চলতে হবে। অপচয় করা চলবে না। খাদ্য সংকটে যেন পড়তে না হয়, আমাদের প্রতিটি আবাদি জমি কাজে লাগাতে হবে।’
তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংকে টাকা নেই বলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এই গুজবের কারণে মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঘরে রাখছে। এতে চুরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমাদের ৪৮ হাজার বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রয়েছে। কাজেই যারা গুজব ছড়াচ্ছে তারা মানুষের ক্ষতি করার জন্যই করছে। আমাদের তাই সতর্ক থাকতে হবে।
গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। গুজবে কান না দিয়ে আগে কানে হাত দিয়ে দেখতে হবে কানটা আছে কিনা।’
চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিয়ে তিনি বলেন, গত ১০ বছরে চট্টগ্রামে যা উন্নয়ন হয়েছে, অতীতে তা কখনো হয়নি। চট্টগ্রামে আরো উন্নয়ন হবে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক চার লেইন হয়েছে, তা ছয় লেইনে উন্নীত হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের সম্প্রসারিত বে-টামিনালের প্রকল্প শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়ক চার লেনে উন্নীত হবে এবং কক্সবাজার পর্যন্ত লাইনের কাজ শেষের পথে। কালুরঘাট রেলপথ সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। সাবমেরিনের মাধ্যমে সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ নেওয়া হয়েছে। মহেশখালীর মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে। এভাবে আরো অনেক উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, নছরুল হামিদ এমপি, এম এ লতিফ এমপি, শামসুল হক চৌধুরী এমপি, ফজলে করিম চৌধুরী এমপি প্রমুখ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।