নাফিজা আনজুম: আহসান হাবিব। জন্ম বরিশাল জেলার গৌরনদী থানার আশোকাঠি গ্রামে। শিক্ষক বাবা-মায়ের বড় সন্তান। মা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হওয়ায় মায়ের স্কুলেই প্রাথমিকের পাঠ শেষ করে ভর্তি হন বাবা যে হাইস্কুলে পড়াতেন সেখানে। মাধ্যমিক পরীক্ষার টেস্টে ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হলেও উত্তীর্ণ হন মূল পরীক্ষায়। এরপর পর ভর্তি হন স্থানীয় কলেজে। কিন্তু ইংরেজিতে দুর্বলতা তার থেকেই যায়। ভাগ্যগুণে উত্তীর্ণ হন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও।
স্কুল-কলেজ জীবন শেষ করে ২০০২ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। পড়াশুনা শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয় তার নতুন সংগ্রাম। মাস্টার্সের ক্লাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে শিক্ষক শিক্ষক লেকচার দিচ্ছিলেন। নিয়ম ছিল ক্লাসের সময় প্রশ্ন করা যাবে না।
কিন্তু হাবিবের মনে নানা প্রশ্ন। তিনি স্য্যারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জানতে চান Embargo শব্দের অর্থ। এই জানতে চাওয়ার কারণে অপমানিত হয়ে ক্লাস থেকে বের হতে হয় তাকে। সেই অপমানই তার জন্য ছিল আশির্বাদ। তিনি পণ করেন-যে ভাবেই হোক ইংরেজি ভাষায় তাকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
নাছোড়বান্দা হাবিব সফল হন। নিজেই হয়ে উঠেন ইংরেজি ভাষার প্রশিক্ষক। শিক্ষকতা শুরু করেন তৎকালীন সনামধন্য সাইফুর’স প্রাইভেট লিমিটেডে। তার স্বপ্ন অন্য কিছু। তাকে গড়তে হবে ভালো ক্যারিয়ার। পূরণ করতে হবে বাবা-মায়ের স্বপ্ন।
দেশে সে সময় এমবিএ ডিগ্রীর ব্যাপক চাহিদা। বেসরকারি ভালো চাকরির জন্য পাঠানো সিভিতে এমবিএ ডিগ্রী উল্লেখ থাকলে সেটাকে আলাদা চোখে দেখা হয়। হাবিবের ইচ্ছে হলো সে এমবিএ ডিগ্রী করবে। শুরু হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধান। বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া গেলেও খরচের বিষয়টা তাকে ভাবিয়ে তুলল। দেশে যেসব ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করা যায় সেটার যে খরচ তার চেয়ে আরেকটু বেশি খরচ করলেই ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় গিয়ে তা সম্পন্ন করা যায়। ইংরেজি ভাষার প্রতি ভালোবাসা এবং যুক্তরাজ্যের ইতিহাস মুখস্ত করে মনের অজান্তেই দেশটির প্রতি তার আকর্ষন তৈরি হয়।
একজন ছাত্রের অনুরোধে ঢাকায় বিট্রিশ কাউন্সিলের সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন হাবিব। সেমিনার শেষে করেই ফোন দেয় বাবাকে। জানায় ইংল্য্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার ইচ্ছের কথা। ইতিবাচক সাড়া পান বাবা-মায়ের কাছ থেকে। মা তার পেনশনের টাকা তুলে দেন ছেলের হাতে। সেই টাকায় হাবিব ভর্তি হন ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম সিটি ইউনিভার্সিটিতে (Birmingham City University)। সেখানে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসে (International Business) মাস্টার্স শেষ করেন। পোস্ট স্টাডি ওয়ার্ক শেষে পেয়ে যান Entrepreneur Visa। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
গত ১১ বছরে পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছু। Entrepreneurs Smile and Cry নামে একটি বইও লিখে ফিলেছেন হাবিব। গড়ে তুলেছেন ২৭ জনের একটি দক্ষ টিম। তার বর্তমান ৬টি অফিস, যার তিনটিই লন্ডন, বামিংহাম এবং ম্যানচেষ্টারে। গ্রামের বাড়িতে বৃষ্টির দিনে টিনের চালের ফুটো দিয়ে গড়িয়ে পড়া ঘর ভেঙ্গে গড়ে তুলেছেন অত্যাধুনিক দালান। ইংল্যান্ডেও তৈরি করেছেন নিজের বাড়ি। চালান রেন্জ রোভার।
বাবা-মা দুজনই শিক্ষক হওয়ায় টিচিংয়ের প্রতি হাবিবের ভালোবাসা ছিল শুরু থেকেই। শুরু করেন একটি আন্দোলন। আর এই আন্দোলনের নাম দেয়া হলো- ‘Speak English in 12 Days”। এই Challenge-এ হাজারো শিক্ষার্থী উপকৃত হতে লাগলো। প্রতি মাসেই ১২ দিনে ৯০ মিনিটের একটি কর্মশালা আয়োজন করে থাকেন তিনি। যেখানে অনলাইনে Live Class এর মাধ্যমে ইংরেজি শেখান। শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি এর মধ্য দিয়ে মনের খোড়াক মেটান।
বিলেতে পড়াশোনা করতে আগ্রহী শিক্ষাথীদের সঠিক পরামর্শও দেন হাবিব। শুধু সেখানেই শেষ নয়। কোনও শিক্ষার্থী Study visa পেলে তাকে এয়ারপোর্ট থেকে পিকআপ করার পাশাপাশি বাসস্থান খোঁজার ব্যাপারেও সহযোগিতা করেন।
শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘Support till Settlement’ নামে রয়েছে হাবিবের একটি সিক্রেট গ্রুপ। যারা বিনামূল্যে ইংরেজি শিখতে বিদেশে পড়তে চান তার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘Hassle Free Education’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।