আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের জায়গায় মহাসমারোহে রামমন্দির তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এবার জন্মভূমির অধিকার চেয়ে ঈদগাহ-মসজদি সরিয়ে জমি ফেরাতে আদালতে ‘শ্রীকৃষ্ণ’র পক্ষে মামলা করা হয়েছে।
আশির দশকের শেষে রামমন্দির আন্দোলনের সময় বিজেপি-সঙ্ঘ পরিবার স্লোগান দিয়েছিল, ‘অযোধ্যা তো সির্ফ ঝাঁকি হ্যায়, কাশী-মথুরা বাকি হ্যায়।’ ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার পরেও সেই স্লোগান ওঠে। সেই সূত্র মেনেই শনিবার মথুরার আদালতে ‘শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমান’ এর নামে মামলা হয়েছে। দাবি, মথুরায় ‘শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি’র ১৩.৩৭ একরের অধিকার এবং শাহি ঈদগাহ মসজিদ সরানো।
শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমানের হয়ে মামলা করেছেন রঞ্জনা অগ্নিহোত্রী ও ছ’জন ভক্ত। তাদের আইনজীবী হরিশঙ্কর জৈন ও বিষ্ণু জৈনদের বক্তব্য, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের সম্মতিতে ঈদগাহের পরিচালন কমিটি বেআইনি ভাবে মসজিদের কাঠামো খাড়া করেছে। মথুরার কাটরা কেশব দেবের ওই জমি আসলে শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমানের। এখন মথুরায় শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের পাশেই শাহি ঈদগাহ মসজিদ অবস্থিত।
রাজনৈতিক ও আইনজীবী মহলে প্রশ্ন, বিজেপি, সঙ্ঘপরিবার, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কি এবার শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি আন্দোলনে নামবে? সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরির নির্দেশ দেওয়ার পরে কি মথুরা থেকে ঈদগাহ সরানোর দাবি জোরালো হল?
আইনজীবীরা বলছেন, এক্ষেত্রে ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল (বিশেষ ব্যবস্থা) আইনের বাধা রয়েছে। ওই আইন অনুযায়ী, কোনো মন্দির-মসজিদ বা গির্জার চরিত্র বদলানো যাবে না। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় যেখানে যা ছিল, তেমনটাই রেখে দিতে হবে। কোনো আদালত এই বিষয়ে আর্জি শুনতেও পারবে না। ওই আইন আসার আগেই অযোধ্যার মামলা দায়ের হয়ে যাওয়ায় সেখানে এই শর্ত খাটেনি। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টও তার রায়ে এই আইনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। তাৎপর্যপূর্ণ হল, মথুরার আদালতের শনিবারের মামলা দায়ের হওয়ার অনেক আগেই সুপ্রিম কোর্টে ১৯৯১ এর ওই আইনকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলাটি মথুরা নিয়ে শনিবারের মামলার আইনজীবী বিষ্ণু জৈনের মাধ্যমেই দায়ের হয়েছে।
মথুরা আদালতে জমা হওয়া আর্জিতে ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকারকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ১৬৬৯-৭০-এ মথুরায় কাটরা কেশব দেবে শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমিতে তার মন্দির ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন আওরঙ্গজেব। একশো বছর পরে মারাঠারা যুদ্ধে জিতে আগরা-মথুরার দখল নিলে মন্দির ফের তৈরি হয়। ব্রিটিশ আমলে ওই জমি বারাণসীর রাজা পাটনিমল নিলামে কিনে নেন। পরে তা পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য ও অন্যদের হাতে যায়। সেই জমি কেনার জন্য ১৩,৪০০ টাকা দিয়েছিলেন যুগলকিশোর বিড়লা। তারা একটি ট্রাস্ট তৈরি করে মন্দির তৈরির ঘোষণা করেন। কিন্তু ১৯৬৮ সালে শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থান সেবা সঙ্ঘের সঙ্গে শাহি মসজিদ ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির বোঝাপড়া হয়। সেবা সঙ্ঘ মসজিদ কমিটির কিছু দাবি মেনে নেয়। মামলাকারীদের দাবি, ওই বোঝাপড়া বেআইনি ছিল। শ্রীকৃষ্ণের জমিতে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড বা মসজিদ কমিটির অধিকার থাকতে পারে না।
অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিবাদেও মূল মামলাকারী ছিলেন রামলালা বিরাজমান। হিন্দু দেবতাদের ‘জুরিস্টিক পার্সন’ বা আইনের চোখে ব্যক্তি হয়ে ওঠার সূত্রপাত ব্রিটিশ আমলে, ‘ইংলিশ কমন ল’ থেকে। আইনের চোখে ব্যক্তি হিসেবে দেবতার সব আইনি অধিকার রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, তিনিও মামলা করতে পারেন। তবে তার সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার নেই।
শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমানের আইনজীবীরাও সেই যুক্তি দিয়ে বলেছেন, শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমান বালক। তার সেবায়েতদের মাধ্যমে বা সেবায়েতদের অনুপস্থিতিতে প্রতিনিধির মাধ্যমে নিজের সম্পত্তি রক্ষা ও উদ্ধার করার অধিকার রয়েছে। সূত্র: আনন্দবাজার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।