দুপুরের তীব্র রোদে ঘামে ভিজে, এক হাতে নষ্ট মোবাইল ফোনের স্তূপ, আরেক হাতে স্ক্রু ড্রাইভার। মেহেদীর চোখে তখনও স্বপ্ন। পাঁচ বর্গফুটের সেই ছোট দোকানই ছিল তার ‘কর্পোরেট অফিস’। আজ, দশ বছর পর, ‘মেহেদী ইলেকট্রনিক্স’ দেশের শীর্ষস্থানীয় গ্যাজেট রিপেয়ার চেইনে পরিণত হয়েছে, কর্মী ১৫০+। কিন্তু সেই পথ? কাঁটায় ভরা। উদ্যোক্তা হওয়ার চ্যালেঞ্জ নামক সেই অদৃশ্য দানবের মুখোমুখি হয়েছেন লাখো মেহেদী। ভাঙা স্বপ্ন, উজাড় ব্যাংক ব্যালেন্স, রাতজাগা উদ্বেগ – এগুলো শুধু পরিসংখ্যান নয়, জীবনের রক্তক্ষরণ। কিন্তু হ্যাঁ, জয়ের উপায় আছে! শুধু দরকার অদম্য মানসিকতা, কৌশলগত প্রস্তুতি আর সেই ‘এক ধাপ’ এগিয়ে যাওয়ার সাহস। এই গাইডে শুধু সমস্যা নয়, খুঁজে পাবেন বিজয়ের রোডম্যাপ – বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে, আপনার ভাষায়।
উদ্যোক্তা হওয়ার চ্যালেঞ্জ: বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে এক নির্মম বাস্তবতা (H2)
বাংলাদেশে উদ্যোক্তা মানে শুধু ব্যবসা শুরু করা নয়; এক অলিখিত যুদ্ধে নামা। বিশ্বব্যাংকের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন বলছে, দেশে এমএসএমই খাতে ব্যবসা বন্ধের হার প্রায় ২২% প্রথম তিন বছরে। কেন?
- অর্থায়নের দুর্গম পাহাড়:
- স্টার্ট-আপ ক্যাপিটালের দুর্ভোগ: ব্যাংক লোনের জন্য জামানতের বেড়াজাল, উচ্চ সুদ হার (১২-১৫%+), জটিল প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকের (www.bb.org.bd) এসএমই বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ৩০% ক্ষুদ্র উদ্যোগ প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়ন পায়।
- এঞ্জেল ইনভেস্টর/ভেঞ্চার ক্যাপিটালের স্বল্পতা: ঢাকা, চট্টগ্রামের বাইরে প্রায় অস্তিত্বহীন। আইডলস, লাইটক্যাস্টলের মতো ফান্ডগুলোও খুব সিলেক্টিভ।
- ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের ঝুঁকি: পরিবারের সমস্ত সঞ্চয়, জমিজমা বন্ধক রেখে নামা – ব্যর্থতায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক পতন নিশ্চিত।
- বাজার ও প্রতিযোগিতার জটিল জাল:
- স্থানীয় ও বহুজাতিক দৈত্যের মোকাবিলা: নতুন উদ্যোক্তাকে একদিকে স্থানীয় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের, অন্যদিকে গ্লোবাল জায়ান্টদের (যেমন: ই-কমার্সে ডারাজ, ফুডে ফুডপান্ডা) বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়।
- ক্রেতা বিশ্বাস অর্জন: “নতুন ব্র্যান্ড = ঝুঁকি” – এই মানসিকতা ভাঙা কঠিন। গুণগত মান, টেকসই সেবা দিয়ে ক্রমাগত প্রমাণ করতে হয়।
- ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের চ্যালেঞ্জ: অনলাইন ভিজিবিলিটি অর্জন, সোশ্যাল মিডিয়ায় এনগেজমেন্ট বাড়ানো, এসইও – এসবের জন্য দক্ষতা ও বাজেট দুটিই চাই। বাংলাদেশ ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্যাটাস রিপোর্ট ২০২৪ (e-CAB) দেখায়, ৬০% ক্ষুদ্র উদ্যোগ পর্যাপ্ত ডিজিটাল দক্ষতার অভাব বোধ করে।
- দক্ষ জনবলের সন্ধান ও ধরে রাখা:
- প্রতিভা আকর্ষণ: প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির চাকরির নিরাপত্তা ও বেতনের সাথে প্রতিযোগিতা করে ভালো ট্যালেন্ট পাওয়া কঠিন।
- প্রশিক্ষণ ও ধরে রাখা: পাওয়ার পরেও ক্রমাগত স্কিল ডেভেলপমেন্ট, আকর্ষণীয় ক্যারিয়ার পথ ও সম্মানজনক পারিশ্রমিক নিশ্চিত করা ছাড়া ট্যালেন্ট রিটেনশন অসম্ভব।
- নীতিগত ও আমলাতান্ত্রিক বাধা:
- ব্যবসা শুরু ও চালানোর জটিলতা: ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন – এক জঙ্গল। বিশ্বব্যাংকের ‘ডুয়িং বিজনেস’ (বন্ধ হলেও প্রাসঙ্গিক) প্রতিবেদনে বাংলাদেশের র্যাঙ্কিং নিচের দিকেই ছিল।
- ট্যাক্স সংক্রান্ত জটিলতা: সঠিক গাইডেন্সের অভাব, ভয়। ছোট উদ্যোগের জন্য এনবিআরের সরলীকৃত কর ব্যবস্থা (‘তড়িৎ’) সম্পর্কে সচেতনতার অভাব।
- অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা: লোডশেডিং, ইন্টারনেটের গতি ও স্থিতিশীলতা, পরিবহন খরচ ও সময় – উৎপাদনশীলতায় বড় বাধা।
- ব্যক্তিগত ও মানসিক চাপ:
- ভয় ও অনিশ্চয়তার ভার: ব্যর্থতার ভয়, আর্থিক অনিশ্চয়তা, পারিবারিক চাপ – মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
- ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্সের ধ্বংসস্তূপ: ২৪/৭ কাজের চাপ, পারিবারিক সময়হানি, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা।
- সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি: “চাকরি না পেয়ে ব্যবসা করছো?” – এমন সমাজিক টানাপোড়েন অনেক প্রতিভাবানকে পিছিয়ে দেয়।
উদ্যোক্তা হওয়ার চ্যালেঞ্জ জয়ের উপায়: কৌশল, ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার সমন্বয় (H2)
চ্যালেঞ্জ আছে মানেই পরাজয় নয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রমাণিত কিছু জয়ের উপায়:
- দৃঢ় মানসিকতা: আপনার সবচেয়ে বড় অস্ত্র (H3)
- ব্যর্থতাকে ‘ফিডব্যাক’ হিসেবে দেখা: বিক্রমপুরের মৌসুমী (২৮) তার হস্তশিল্পের ব্যবসা প্রথম বছরেই লোকসান দেয়। হাল না ছেড়ে সে গ্রাহক ফিডব্যাক বিশ্লেষণ করে ডিজাইন বদলায়। আজ তার পণ্য দেশের গণ্ডি পেরিয়েছে। “ব্যর্থতা চূড়ান্ত নয়; এটি শুধু নতুনভাবে শুরু করার সুযোগ,” – কথাটি মনে রাখুন।
- ধৈর্য্য ও স্থিতিশীলতার চর্চা: রাতারাতি সাফল্য বিরল। ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন, ছোট জয়গুলো উদযাপন করুন।
- নেতিবাচকতা থেকে দূরে থাকুন: যারা বলে “হবে না”, তাদের এড়িয়ে চলুন। ইতিবাচক ও সমর্থনকারী মানুষদের সাথে নেটওয়ার্ক গড়ুন।
- নিজের যত্ন নিন: পর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম, পরিবারের সাথে সময় – এগুলোই আপনাকে দীর্ঘ পথ চলার শক্তি দেবে। মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব দিন।
- কৌশলগত পরিকল্পনা ও গবেষণা: অন্ধকারে আলোর মশাল (H3)
- গভীর মার্কেট রিসার্চ: শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম নয়, জেলা-উপজেলা স্তরেও চাহিদা আছে কি? প্রতিযোগীদের বিশ্লেষণ করুন। BBS (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো – www.bbs.gov.bd) বা SME Foundation-এর (www.smef.org.bd) ডেটা কাজে লাগাতে পারেন।
- পরিষ্কার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা (Business Plan): এটি শুধু লোনের জন্য নয়, আপনার নিজের রোডম্যাপ। মিশন, ভিশন, টার্গেট মার্কেট, মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি, ফাইন্যান্সিয়াল প্রজেকশন (আয়-ব্যয়, লাভ-ক্ষতি) – সবই থাকতে হবে।
- ন্যূনতম কার্যকরী পণ্য (MVP) দিয়ে শুরু: সব ফিচার নিয়ে শুরু নয়। বেসিক ভার্সন বাজারে ছাড়ুন, গ্রাহক ফিডব্যাক নিন, তারপর উন্নয়ন করুন। ঢাকার তানিমের ফুড ডেলিভারি অ্যাপ শুরু হয়েছিল শুধু তার ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে!
- আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা: সঠিক হিসাবরক্ষণ (এক্সেল বা সহজ সফটওয়্যার), ক্যাশ ফ্লো মনিটরিং, খরচ কমানোর উপায় খোঁজা। বাজেটিং অপরিহার্য।
- অর্থায়নের বিকল্প পথ খোঁজা: সৃজনশীল সমাধান (H3)
- বুটস্ট্র্যাপিং: নিজের সঞ্চয়, পরিবারের সহায়তা, প্রাথমিক বিক্রয় থেকে আয় পুনঃবিনিয়োগ করে ধীরে ধীরে ব্যবসা বাড়ানো। কম ঝুঁকিপূর্ণ।
- সরকারি সহায়তা প্রকল্পের সদ্ব্যবহার:
- যুব ও স্পোর্ট মন্ত্রণালয়ের ‘জাতীয় যুব উন্নয়ন তহবিল’।
- এসএমই ফাউন্ডেশনের ঋণ ও প্রশিক্ষণ প্রকল্প।
- বাংলাদেশ ব্যাংকের রিফাইন্যান্সিং স্কিম (জামানত কম, সুদ কম)।
- শিল্প মন্ত্রণালয়ের ‘হ্যাচারি’ ও ইনকিউবেশন সেন্টার (যেমন: BSCIC ইন্কুবেটর)।
- সরাসরি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার ওয়েবসাইট চেক করুন, স্থানীয় চেম্বার অব কমার্সে যোগাযোগ করুন।
- ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম: কিছু প্ল্যাটফর্ম (স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক) বাংলাদেশি উদ্যোগকে সাপোর্ট করে। একটি আকর্ষণীয় ক্যাম্পেইন তৈরি করুন।
- এঞ্জেল ইনভেস্টর/ভেঞ্চার ক্যাপিটাল: আপনার আইডিয়া যদি স্কেলেবল ও হাই-গ্রোথ পোটেনশিয়াল দেখায়, ঢাকা/চট্টগ্রামের নেটওয়ার্কিং ইভেন্টে অংশ নিন (যেমন: BASIS Softexpo, Startup Dhaka Events)।
- বাজার দখল ও গ্রাহক তৈরির কৌশল: আপনার ব্র্যান্ডকে প্রিয় করে তুলুন (H3)
- স্পষ্ট ইউএসপি (Unique Selling Proposition): আপনি কেন আলাদা? সস্তা? দ্রুত? গুণগত? সুস্বাদু? সেটা স্পষ্টভাবে যোগাযোগ করুন।
- ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের শক্তি কাজে লাগান:
- ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম: ভিজুয়াল স্টোরিফিকেশন। ছোট বাজেটে টার্গেটেড এড।
- খুব সহজে ওয়েবসাইট/ই-কমার্স স্টোর: শপিফাই, রেইভেন, দারাজ মার্চেন্টের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন।
- লোকাল এসইও: গুগল মাই বিজনেস লিস্টিং অপরিহার্য। গ্রাহক রিভিউ সংগ্রহ করুন।
- কন্টেন্ট মার্কেটিং: সমস্যার সমাধান দিয়ে গ্রাহক তৈরির কৌশল (ব্লগ, ভিডিও)।
- ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও নেটওয়ার্কিং: স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি, চেম্বার অব কমার্সে যোগ দিন। রেফারেল ব্যবসা বাড়ায়।
- অসাধারণ গ্রাহক সেবা: প্রতিক্রিয়া দ্রুত দিন। সমস্যার সমাধান করুন। একজন খুশি গ্রাহকই আপনার সেরা ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।
- দল গঠন ও দক্ষতা বিকাশ: একা নয়, দলগতভাবে (H3)
- সঠিক মানুষকে নির্বাচন: শুধু দক্ষতাই নয়, কোম্পানি কালচারের সাথে মানানসই কি না দেখুন।
- নেতৃত্বের বিকাশ: দলের সদস্যদের ক্ষমতায়ন করুন, দায়িত্ব দিন, কৃতিত্ব দিন।
- ক্রমাগত শিখন ও প্রশিক্ষণ: অনলাইন কোর্স (কুর্সেসরা, 10 Minute School), ওয়ার্কশপ, মেন্টরশিপ প্রোগ্রামে বিনিয়োগ করুন।
- আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং: যেসব কাজ আপনার মূল দক্ষতা নয় (যেমন: অ্যাকাউন্টিং, গ্রাফিক ডিজাইন), সেগুলো আউটসোর্স করুন। ফাইভার, আপওয়ার্কের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন।
বাংলাদেশি প্রেরণা: যারা পেরেছেন, আপনিও পারবেন! (H2)
- সাদাত রহমান (উপকূল): নীলফামারীর ছেলে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের জটিলতায় হতাশ গ্রামীণ মানুষকে দেখে তৈরি করলেন ‘উপকূল’ অ্যাপ। শুরুতে তীব্র প্রতিবন্ধকতা, এখন ৫০ লক্ষ+ ইউজার। তার জয়ের উপায়? স্থানীয় সমস্যা বুঝে সঠিক টেকসলিউশন।
- আরিফিন রুমি (ডাকঘর): কুরিয়ার সার্ভিসে বিশ্বাসযোগ্যতার সংকট দেখে শুরু। আজ দেশজুড়ে হাজার পিক-আপ পয়েন্ট। তার জয়ের উপায়? টেকনোলজির ব্যবহার ও অসম্ভব গ্রাহকসেবা।
- জেসমিন ইসলাম (ঋষি): দেশীয় সুপারফুডের গুণাগুণ বিশ্বাস করে অর্গানিক পণ্যের ব্র্যান্ড শুরু। এখন বিদেশেও রপ্তানি। তার জয়ের উপায়? নেশা ও গুণগত মানের প্রতি অটল থাকা।
প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা: আপনি একা নন (H2)
- এসএমই ফাউন্ডেশন (www.smef.org.bd): প্রশিক্ষণ, বাজার সংযোগ, ঋণ সুবিধা, এক্সিবিশন সাপোর্ট।
- বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভ (BIC): স্টার্টআপদের জন্য ইনকিউবেশন, মেন্টরশিপ, ফান্ডিং কানেক্ট।
- বেসিস (www.basis.org.bd): আইটি/সফটওয়্যার স্টার্টআপদের জন্য নেটওয়ার্কিং, রিসোর্স, এডভোকেসি।
- বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ প্রোগ্রাম: ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, নারী উদ্যোক্তা, গ্রিন ফাইন্যান্সিংয়ের জন্য বিশেষ সুবিধা।
- বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনকিউবেটর: যেমন IUB, NSU, BUP – স্টুডেন্ট/এলামনাই স্টার্টআপদের জন্য রিসোর্স।
- বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটি: টেক-ভিত্তিক উদ্যোগের জন্য অবকাঠামোগত সহায়তা।
ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি: টেকসই সাফল্যের জন্য (H2)
- টেকনোলজি অভিযোজন: আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), অটোমেশন, ডেটা অ্যানালিটিক্সকে ব্যবসার কার্যক্রমে একীভূত করুন। দক্ষতায় বিনিয়োগ করুন।
- টেকসই ও সামাজিক দায়িত্বশীল ব্যবসা (CSR): পরিবেশবান্ধব প্র্যাকটিস, সামাজিক সমস্যা সমাধানে ভূমিকা – এগুলো শুধু ভালো নয়, বর্তমান সময়ের চাহিদা।
- বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি: নারী উদ্যোক্তা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুযোগ তৈরি করুন। ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি উদ্ভাবন বাড়ায়।
- স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলা: অর্থনৈতিক মন্দা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো অনিশ্চয়তার জন্য পরিকল্পনা রাখুন (ইমারজেন্সি ফান্ড, বিকল্প সাপ্লাই চেইন)।
- নিরবচ্ছিন্ন শিখন: বাজারের পরিবর্তন, নতুন ট্রেন্ড সম্পর্কে সর্বদা আপডেট থাকুন। অনলাইন কোর্স, ইন্ডাস্ট্রি রিপোর্ট পড়ুন।
উদ্যোক্তা হওয়ার চ্যালেঞ্জ কখনও সহজ ছিল না, আর হবেও না। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জই তো আপনার গল্পকে মহিমান্বিত করে। মেহেদী, মৌসুমী, সাদাত, জেসমিনেরা প্রমাণ করেছেন – জয়ের উপায় আছে। সেটা হলো অদম্য ইচ্ছাশক্তি, সঠিক কৌশল, অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার সেই এক ধাপ নেওয়ার সাহস। আপনার স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থাকবে না, একদিন তা লাখো মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলবে – এই বিশ্বাস নিয়ে আজই শুরু করুন। আপনার যাত্রায় শুভকামনা!
জেনে রাখুন (FAQs – H2)
প্রশ্ন: বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় উদ্যোক্তা হওয়ার চ্যালেঞ্জ কী?
উত্তর: আর্থিক সংস্থান জোগাড় করা প্রায়শই প্রধান বাধা। ব্যাংক ঋণের জটিলতা, উচ্চ সুদ, এবং স্টার্ট-আপ ক্যাপিটালের স্বল্পতা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ। এছাড়া বাজার প্রতিযোগিতা, দক্ষ জনবল নিয়োগ ও ধরে রাখা, এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও উল্লেখযোগ্য। মানসিক চাপ ও ব্যর্থতার ভয়ও অনেক প্রতিভাকে পিছিয়ে দেয়।
প্রশ্ন: খুব অল্প টাকা দিয়ে কি ব্যবসা শুরু করা সম্ভব?
উত্তর: হ্যাঁ, অবশ্যই সম্ভব! জয়ের উপায় হলো ‘বুটস্ট্র্যাপিং’। ছোট স্কেলে শুরু করুন, নিজের দক্ষতাকে পুঁজি করুন (যেমন: ফ্রিল্যান্সিং, কনসাল্টেন্সি, হোমমেইড প্রোডাক্ট), ন্যূনতম কার্যকরী পণ্য (MVP) দিয়ে বাজারে যান। প্রাথমিক আয় পুনঃবিনিয়োগ করে ধীরে ধীরে ব্যবসা সম্প্রসারণ করুন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো কম বিনিয়োগে শুরু করার সুযোগ দেয়।
প্রশ্ন: উদ্যোক্তা হতে কোন কোন দক্ষতা অপরিহার্য?
উত্তর: পেশাদার দক্ষতার পাশাপাশি কিছু সফট স্কিল অপরিহার্য:
- দৃঢ় মানসিকতা ও স্থিতিশীলতা (চাপ সামলানো, ব্যর্থতা থেকে শেখা)
- সমস্যা সমাধানের দক্ষতা
- সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা
- যোগাযোগ দক্ষতা (দল, গ্রাহক, বিনিয়োগকারীর সাথে)
- আর্থিক সাক্ষরতা (বাজেটিং, ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্ট)
- অভিযোজন ক্ষমতা ও নিরবচ্ছিন্ন শিখনের মনোভাব
প্রশ্ন: সরকারি সাহায্য পাব কোথায়?
উত্তর: বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সাহায্য করে:
- এসএমই ফাউন্ডেশন (smef.org.bd): ঋণ, প্রশিক্ষণ, বাজার সংযোগ।
- বাংলাদেশ ব্যাংক: রিফাইন্যান্সিং স্কিম, নারী উদ্যোক্তা, গ্রিন ফাইন্যান্সিং সুবিধা।
- যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর/জাতীয় যুব তহবিল।
- বিসিক (BSCIC): শিল্প এস্টেট, ইনকিউবেশন সেন্টার।
- বেসিস (BASIS): আইটি স্টার্টআপদের জন্য। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ডিটেলস পাবেন।
প্রশ্ন: ব্যবসায় ব্যর্থ হলে কী করব?
উত্তর: ব্যর্থতা চূড়ান্ত নয়, শেখার অংশ।
- কারণ বিশ্লেষণ করুন: কেন ব্যর্থ হলো? অর্থায়ন? বাজার? ব্যবস্থাপনা?
- অভিজ্ঞতা থেকে শিখুন: কী করলে ভালো হতো?
- মানসিকভাবে পুনরুদ্ধার করুন: বিশ্রাম নিন, ইতিবাচক থাকুন।
- পরামর্শ নিন: মেন্টর বা অভিজ্ঞজনের পরামর্শ নিন।
- পুনরায় পরিকল্পনা করুন: প্রাপ্ত জ্ঞান নিয়ে নতুন কৌশলে আবার শুরু করুন বা নতুন আইডিয়া নিয়ে এগুতে পারেন। অনেক সফল উদ্যোক্তার পেছনেই ব্যর্থতার ইতিহাস আছে!
প্রশ্ন: সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ কী?
উত্তর: শুরু করুন এবং ধৈর্য ধরে লেগে থাকুন। নিখুঁত পরিস্থিতি বা নিখুঁত পরিকল্পনার জন্য অপেক্ষা করলে কখনও শুরু করা হবে না। ছোট করে শুরু করুন, বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শিখুন, নিজের এবং ব্যবসার সাথে খাপ খাইয়ে নিন। উদ্যোক্তা হওয়ার চ্যালেঞ্জ অনেক, কিন্তু ক্রমাগত শিখতে থাকা, অ্যাডাপ্ট করা এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছাই জয়ের উপায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।