জুমবাংলা ডেস্ক : মানবপাচার ও মুদ্রাপাচারে অভিযোগে কুয়েতে আটক লক্ষ্মীপুর-২ আসনের বিতর্কিত সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল এবার দেশটির গোয়েন্দাদের চাপে পড়ে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন। আর একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে । পাপুলের স্বীকারোক্তি মতে, তার কুয়েতি সহযোগিরা গোয়েন্দা জালে ধরা পড়ছে। এ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রের বড় দুই কর্তাকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মানব পাচার ও মুদ্রা পাচার, ঘুষ-দুর্নীতির মতো প্রতিটি অপরাধে কুয়েতে এমপি পাপুলের জেল হতে পারে সাত থেকে ১৪ বছর করে।
গতকাল এক নারীসহ পাপুলের ৪ সহযোগীর জেরা সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে কর্নেল পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তাও আছেন। প্রতিষ্ঠিত ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমসের রিপোর্ট মতে, কাকে কীভাবে ম্যানেজ করতে হবে সেই বুদ্ধি-পরামর্শ দিতেন ওই সহযোগিরা। এ জন্য তারাও নিয়মিত মোটা অংকের ফি নিতেন। তবে পাপুলকাণ্ড জনসম্মুখে প্রথম প্রকাশকারী আররি দৈনিক আল-কাবাসে সর্বশেষ রিপোর্টে তদন্ত সংস্থার ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, পাপুলের স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে তার অপকর্মের সঙ্গী নারী একজন ব্যবসায়ী।
দু’দিন আগে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে সিআইডি। ওই নারীসহ পাপুল কানেকশনের বিস্তৃত তদন্ত চলমান রয়েছে জানিয়ে রিপোর্টে বলা হয়, পাপুল ইস্যুতে দেশি-বিদেশি নতুন নতুন নামযুক্ত হচ্ছে এবং তা চাঞ্চল্য তৈরি করছে। বিশেষতঃ ‘বাঙ্গালি এমপি’র কেসটি কুয়েতের রাজনীতি ও প্রশাসনে বাড়তি উত্তাপ তৈরি করেছে। দিনে দিনে এটি যেনো কেবলই ডালপালা মেলছে।
১৪ই জুন পাপুলের রিমান্ডের শেষ দিনে রাঘব-বোয়ালদের নাম বলে গেছেন তিনি। আর এ কারণে সিআইডির কাজ সহজ হয়ে গেছে। পাপুল কাকে কত অনৈতিক সুবিধা দিয়েছেন এবং নিয়েছেন তা রিমান্ডে নিজের মুখেই বলে গেছেন। তাছাড়া ঘুষের পরিমাণ ও ডকুমেন্ট আগেই হাতে পেয়েছিল কুয়েত-সিআইডি।
আরব টাইমস বলছে, পাপুল ঘুষ বা উপহার প্রদানে উদার ছিলেন। তিনি দুহাতে অর্থ বিলিয়েছেন। অবশ্য রিটার্ন বা বিনিময়ও পেয়েছেন। কুয়েতের স্বরাষ্ট্র ও জনশক্তি বিভাগের অসাধু, ঘুষগ্রহণকারী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের মোটা অংকের মাসোহারা-ঘুষ দেয়ার পরও জালজাতি আর ভিসা বাণিজ্যে বছরে পাপুলের নেট প্রফিট ছিল ২ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার।
কুয়েত ও মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর রিপোর্টে মতে, এমপি পাপুলের অনৈতিক ও বাণিজ্য এ পর্যন্ত কুয়েতের সাবেক ও বর্তমান ৩ এমপি, স্বরাষ্ট্র ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের ৭ শীর্ষ কর্তাসহ সরাসরি তার সহযোগী হিসাবে মোট ২১ জনকে চিহ্নিত করেছে কুয়েত-সিআইডি। তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে।
পাপুলের জেল হতে পারে সাত থেকে ১৪ বছর : কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মানব পাচার ও মুদ্রা পাচার, ঘুষ-দুর্নীতির মতো প্রতিটি অপরাধে কুয়েতে এমপি পাপুলের জেল হতে পারে সাত থেকে ১৪ বছর করে। এরই মধ্যে দেশটির তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে এমপি পাপুল স্বীকার করেছেন, কুয়েতে একজন আমলাসহ তিনজনকে ২১ লাখ দিনার অর্থাৎ ৫৭ কোটি ৫৪ লাখ বাংলাদেশি টাকা ঘুষ দিয়েছেন। ঘুষ গ্রহণকারীদের নামও জানিয়েছেন এমপি কাজী শহীদ পাপুল। এরা হলেন- কুয়েতের একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, অন্যজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আমলা আর শেষজন দেশটির এক নাগরিক। আর পাপুলকে মদদ দিয়েছেন দেশটির অন্তত সাতজন বিশিষ্ট নাগরিক। ওই সাতজনের মধ্যে কুয়েতের সাবেক ও বর্তমান তিন এমপিও রয়েছেন। আরব টাইমস জানিয়েছে, কুয়েতে মানব পাচার নিয়ে বাংলাদেশের এমপির বিরুদ্ধে পাবলিক প্রসিকিউশন যে তদন্ত চালাচ্ছে, তা নিয়ে পরের ধাপের তদন্ত চালাবে দেশটির দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ।
গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরেফ আবাসিক এলাকা থেকে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পাপুলকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে দেশটিতে মানব পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর পাপুলকে আদালতে হাজির করলে জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত। কুয়েতের বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, মানব ও অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, এমন কয়েকশ ব্যক্তির তালিকা করেছে কুয়েত সরকার। সেই তালিকা ধরেই সম্প্রতি বিতর্কিত শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে দেশটির গোয়েন্দা বিভাগ। সেই অভিযানেই গ্রেপ্তার হন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের বিতর্কিত এই সাংসদ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।