জুমবাংলা ডেস্ক : সপ্তম থেকে দশম। এই চারটি শ্রেণির ছাত্রী উপস্থিতি কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হওয়া ছাত্রীদের বেশির ভাগই এখন সংসার ধর্ম নিয়ে ব্যস্ত। ছাত্র আন্দোলনের একমাসে এক বিদ্যালয়ের অন্তত ১৯ ছাত্রী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে।
নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় শাহীদা কাশেম বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা নির্বিচারে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। বাল্যবিবাহের শিকার হওয়া ১৯ ছাত্রী আর বিদ্যালয়ে আসছে না। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অনুপস্থিত ছাত্রীদের তালিকা করার পর বাল্যবিবাহের বিষয়টি সামনে আসে।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে—দেশ জুড়ে চলা ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে খুব গোপনে সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির অপ্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রীদের বাল্যবিবাহ দিয়েছে তাদের অভিভাবকরা। দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বাল্যবিবাহ রোধে শিক্ষকেরাও তেমন কোনো ভূমিকা নিতে পারেননি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিগার সুলতানা বলেন, বেশকিছু দিন বন্ধ থাকার পর দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ে পাঠদান চালুর পর থেকে সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির ১৯ জন মেধাবী ছাত্রী বিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত রয়েছে। এসব ছাত্রীর পরিবারে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, ১৯ জনই বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। ছাত্রীদের বাল্যবিবাহর ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষকরাও।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক জালাল উদ্দিন বলেন, তার বিদ্যালয়ের যে ১৯ ছাত্রী বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে তাদের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থীও ছিল। সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে জাল জন্মসনদ তৈরির মাধ্যমে একশ্রেণির বিবাহ রেজিস্ট্রার ও নোটারি পাবলিক এসব বিয়ে পড়িয়েছেন।
তবে অভিভাবকদের দাবি, রাস্তাঘাটে বখাটেদের উত্পাতসহ নানা কারণে অপ্রাপ্ত বয়সেই তারা সন্তানদের বাল্যবিবাহ দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি-২০২৩-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাল্যবিবাহের দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম এবং এশিয়ায় প্রথম। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস) ২০২২ প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে ১৮ বছরের কম বয়সি মেয়েদের বাল্যবিবাহের হার ৫০ শতাংশ। এসএসসি পরিক্ষার্থী মেয়েরা সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে রয়েছে। ঐ জরিপ বলছে, দেশে ১৮ বছরের কম বয়সীরা বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৬ দশমিক ৯ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে রয়েছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট গাইনি বিশেষজ্ঞ নারগিস সুলতানা বলেন, বাল্যবিবাহের সবচেয়ে বড় কুফল হচ্ছে—কম বয়সে মা হওয়া। বাল্যবিবাহের শিকার নারীরা অল্প বয়সে মা হতে গিয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়ে। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে জরায়ুতে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক ক্ষেত্রে মারাও যায়। তাছাড়া সন্তান জন্ম দেওয়ার পর মা এবং শিশু উভয়েই পুষ্টিহীনতায় ভুগে।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেখামনি পারভিন বলেন, বাল্যবিবাহের খবর তাদের কেউ জানাননি। একারণে কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন, শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরানোর জন্য অভিভাবক সমাবেশসহ নানা পদক্ষেপ নেবেন তিনি।
সূত্র : ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।