জুমবাংলা ডেস্ক: আগে প্রায় দুই ঘণ্টা পায়ে হেঁটে স্থানীয় বাসিন্দাদের পৌঁছাতে হতো গন্তব্যে। ভারী মালামাল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিতে ভোগান্তির শেষ ছিল না তাদের। কিন্তু, একটি সড়ক বদলে দিয়েছে মানুষের জীবনযাপনের মান। রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া-বর্মাছড়ি-লক্ষীছড়ি সড়ক তৈরি হওয়ার ফলে দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা গাড়িতে বেতবুনিয়ার চায়েরি বাজার থেকে উপজেলা সদরে পৌঁছাতে পারছেন অল্প সময়ের মধ্যে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই সড়কটি তৈরি হওয়ায় তারা নিজেদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য শহরে নিয়ে বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছেন। নির্ধারিত সময়ে পণ্য বিক্রি করতে পারায় হচ্ছেন আর্থিকভাবে লাভবান।
এলাকাবাসীরা জানান, দৃষ্টিনন্দন এই সড়কটির কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। এই সড়কটিতে প্রতিদিন শত শত মানুষ মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশায় করে ঘুরতে আসেন। তারা প্রকৃতির মধ্যে সময় উপভোগ করেন।
রাঙামাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কাউখালীর বেতবুনিয়ার চায়েরী বাজার-বর্মাছড়ি- খাগাছড়ির লক্ষীছড়ি পর্যন্ত সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ৩১ কিলোমিটার। সড়কটির ১০.৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত উন্নয়ন্ন করা হয়েছে। সড়ক উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে ১৬ কোটি টাকা। এই সড়কটির ৩১ কিলোমিটার পর্যন্ত নির্মিত করা গেলে খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি হয়ে মীরসরাইয়ের বারইয়ার হাট দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবেন পর্যটকরা খুব সহজে।
বেতবুনিয়া-বর্মাছড়ি সড়কে চট্টগ্রাম থেকে মোটরসাইকেলে ঘুরতে আসা পর্যটক পংকজ বলেন, সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে প্রকৃতির যে সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে এই সড়কে এসে তারই প্রমাণ পেলাম। একপাশে সবুজ পাহাড় অন্যপাশে নীল আকাশে মেঘের খেলা দেখতে খুবই ভালো লেগেছে।
রাঙামাটি থেকে ঘুরতে যাওয়া পর্যটক মো. সাইফুল বলেন, সড়কটিতে ঘুরতে এসে আমার খুবই ভালো লাগছে। এই সড়কটির সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। রাঙামাটি শহর এবং দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই জেলায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের অনুরোধ করবো, আপনারা একবারের জন্য হলেও এই সড়কে এসে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করে যাবেন।
বেতবুনিয়ার এলাকার বাসিন্দা মো. মনির হোসেন বলেন, এই এলাকায় ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এই সড়কটি হওয়ার আগে এখানকার শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করে উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতে পারতো না রাস্তা না থাকার কারণে। বর্তমানে সড়কটি হওয়ায় এখানকার মানুষ অত্যন্ত উপকৃত হয়েছে। প্রাথমিক শেষ করে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে যাচ্ছে।
বেতবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা পাইসা মরমা বলেন, এই সড়কটি হওয়ায় অনগ্রসর মানুষদের অনেক উপকার হয়েছে। রাস্তাটির কারণে ছেলে-মেয়েরা স্কুল ও কলেজে যাতায়াতে সুবিধা হয়েছে। এখানকার মানুষদের আর পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হচ্ছে না । সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও চাঁদের গাড়িতে করে সহজে যাওয়া আসা করতে পারেন। কৃষকরা জুমের ফসল বাজারে নিয়ে বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
বেতবুনিয়া-বর্মাছড়ি সড়কের চৌধুরী পাড়া এলাকার বাসিন্দা ও রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী থুইমাচিং মারমা বলেন, রাস্তাটি কাঁচা থাকা অবস্থায় আমাদের কলেজে যাতায়াত করতে খুবই কষ্ট হতো। এখান থেকে পায়ে হেঁটে বেতবুনিয়ার চায়েরী বাজার পর্যন্ত যেতে হতো। আর এখন অটোরিকশায় ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে বেতবুনিয়ায় যাতায়াত করতে পারছি।
চৌধুরীপাড়া এলাকার অপর বাসিন্দা সাচিং প্রু বলেন, এই রাস্তাটি হয়ে যাওয়ায় আমরা দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেয়েছি। আমরা আমাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য খুব সহজে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারছি। ফলে আমরা শাক-সবজির ভালো দাম পাচ্ছি।
রাঙামাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি বলেন, বেতবুনিয়া-বর্মাছড়ি-লক্ষীছড়ি সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ৩১ কিলোমিটার। এর মধ্যে সাড়ে ১০ কিলোমিটার সড়ক আমরা পাকা করেছি। খুবই দুর্গম একটা জায়গায় রাস্তাটি পাকা করেছি। আগে সেখানকার বাসিন্দাদের চলাচল করতে অনেক কষ্ট হতো।
তিনি আরও বলেন, এই সড়কটিতে বর্তমানে প্রচুর পর্যটক ভ্রমণে আসেন। বিশেষ করে রাউজান থেকে। এই সড়কটি সম্পূর্ণ করতে পারলে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা ও খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।