আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কুকুর পোষাকে পুঁজিবাদী অবক্ষয় আখ্যা দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। বাসা-বাড়িতে থাকা পোষা কুকুর জব্দেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সর্বোচ্চ নেতার এমন ঘোষণায় নিজেদের প্রিয় পোষা কুকুরকে জাতীয় খাদ্য সংকটে খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হবে-এমন আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা।
জুলাইতে কিম জন উন বলেন, কুকুর লালন-পালন এখন আইনবিরোধী কাজ। বাড়িতে কুকুর পোষাকে বুর্জোয়া আদর্শদের কলঙ্কিত ধারা বলে নিন্দা জানান তিনি।
এক প্রতিবেদনে দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যম ছোসুন ইলবো জানায়, পোষা কুকুর থাকা বাসা-বাড়ি ইতোমধ্যে চিহ্নিত করেছে উত্তর কোরিয়া কর্তৃপক্ষ। এখন জোরপূর্বক মালিকের কাছ থেকে তার কুকুরকে ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে। বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে কুকুরের মালিকানা। সেগুলোকে নিজের কব্জায় নিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। পরে কিছু কুকুরকে চিড়িয়াখানায় বন্দি করা হচ্ছে। বাকিগুলোকে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে কুকুরের মাংস বিক্রির রেস্তোরাঁয়।
কোরীয় উপত্যকার বাসিন্দাদের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই কুকুরের মাংস রুচিকর একটি খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কিন্তু সেই ঐতিহ্য দক্ষিণ কোরিয়ায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। তারপরও ভোক্তাদের চাহিদা পূরণে বছরে দেশটিতে ১০ লাখ কুকুর লালনপালন করে স্থানীয় ফার্মগুলো।
উত্তর কোরিয়ায় শুধু কুকুরের গোশত পাওয়া যায় এমন অনেক রেস্তোরাঁ রয়েছে। উত্তরের মানুষজন এখনো তার প্রিয় বন্ধুটিকে আপ্যায়নে খাবারের তালিকায় শুরুতেই রাখে কুকুরের মাংস।
দেশগুলোতে গ্রীষ্ম এবং শীত মৌসুমে স্থানীয়রা কুকুরের মাংসে খেয়ে থাকে। তাদের ধারণা এ খাবার তাদের শারীরিক এবং মানসিক শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। মাঝে মাঝে মশলাদার স্যুপ এবং সিদ্ধকরা সব্জীর সঙ্গে কুকুরের মাংস পরিবেশন করা হয়। অনেকের ধারণা শীত মৌসুমে এটি তাদের শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
ছোসুন ইলবোর প্রতিবেদনে বলা হয়, পোষা কুকুরের মালিকরা কিম জং উনকে তার অগোচরে অভিশাপ দেন। কিন্তু সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশের বাইরে গিয়ে প্রতিবাদ করার কোনো ক্ষমতা তাদের নেই।
১৯৮৯ সালে ওয়ার্ল্ড ফেস্টিভাল অব ইয়ুথ অ্যান্ড স্টুডেন্টস নামের বৈশ্বিক আয়োজনের পর থেকে নিজেদের সম্মান বাড়ানোর জন্য কুকুর পোষা শুরু করে উত্তর কোরীয়রা। হঠাৎ কুকুর পোষা নিষিদ্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত বিস্মিত করেছে তাদের।
আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে দেশটির ধনী ব্যক্তিরা কুকুর পোষেন। কুকুর নিয়ে রাস্তাঘাটেও চলাফেরা করেন তারা। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনেও একসময় কুকুর পালনকে ঐতিহ্য হিসেবে প্রচার করা হয়।
২০১৮ সালে কিম জং উন নিজে এক জোড়া দক্ষ শিকারি কুকুর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-েইনকে উপহার দিয়েছিলেন। চির বৈরি দু’রাষ্ট্রের মধ্যেকার আস্থা প্রতিষ্ঠার স্বারক হিসেবে।
উত্তর কোরিয়ায় আড়াই কোটির বেশি মানুষের বসবাস। যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই ব্যাপক খাদ্য সংকটে আছে বলে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে জাতিসংঘ। উত্তর কোরিয়ার দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম এবং পরমাণু কর্মসূচির কারণে দেশটির উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বর্তমান পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলছে।
উত্তর কোরিয়ার ঘনিষ্ঠ সমর্থক চীন। বেইজিং থেকে অধিকাংশ খাদ্যপণ্য আমদানি করে পিয়ংইয়ং। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে চীনের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছে উত্তর কোরিয়া। সীমান্ত বন্ধে থাকার কারণে বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।
এছাড়া, গেলো বছর বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয় উত্তর কোরিয়া। যা দেশটির কৃষিখাতকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর মধ্যেই চলতি মাসে বন্যার কবলে পড়ে কিমের দেশ। যাতে খাদ্য-শস্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এ পরিস্থিতিতে কিম জানান, সংকট মোকাবিলয়ায় তার দেশের জনগণ এবং সরকার দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞ। বৃহস্পতিবার পলিটব্যুরোর এক সম্মেলনে তিনি বলেন, বন্যার কারণে দেশের জনগণ সংকটে পড়লেও করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন শঙ্কায় তিনি বিদেশি কারো থেকে সহায়তা নেবেন না।
বন্যায় প্রায় ১০ লাখ একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বংস হয়ে গেছে ১৭ হাজার ঘরবাড়ি। নিজের তহবিল থেকে ত্রাণ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন কিম। রিজার্ভ ফান্ড থেকে সহায়তা দেয়ার বিষয়টি কিছু কূটনীতিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তারা এটিকে চীন থেকে সহায়তা চাওয়ার উপায় হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
এদিকে, উত্তর কোরিয়ার সাধারণ মানুষের কাছে গরু এবং শুকুরের মাংস খাওয়ার চিন্তা বিলাসিতার মতো। আগামী দিনগুলোতে ক্ষুধা নিবারণের জন্য পোষা কুকুরের মাংসকেই বেচে নিতে পারে সাধারণ মানুষ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।