জুমবাংলা ডেস্ক : তুমুল বিতর্কের মুখেও ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বহাল রাখল সরকার। সেইসঙ্গে ধনীদের আয়ের ওপর কমানো হয়েছে করভার। এর আগে ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হলেও, শেষ পর্যন্ত তা আগের মতো ২৫ শতাংশেই অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন কোম্পানির কাজে ব্যবহৃত গাড়ির পরিবেশ সারচার্জ তুলে দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে বহাল রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে রিটার্নে আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি আয় দেখানো হলে সেই ফাইল নিরীক্ষার আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।
এসব বিধান যুক্ত করে গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের কর-সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রস্তাব সংবলিত ‘অর্থবিল ২০২৪’ পাস হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিলটির ওপর মোট ২৭টি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। এর মধ্যে ১৬টি কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়। বাকি ১১টি প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়।
আজ রোববার সংসদে ‘নির্দিষ্টকরণ বিল ২০২৪’ পাসের মধ্য দিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। গত ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।
বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যক্তি পর্যায়ে আয়করের অন্যান্য স্তর অপরিবর্তিত রেখে ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি আয়ের ক্ষেত্রে করহার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ প্রস্তাব করেছিলেন। ধনীদের আয়কে চাপমুক্ত রাখতে গিয়ে আপাতত সেখান থেকে পিছু হটেছেন তিনি। অবশ্য আগামী অর্থবছরে ২৫ শতাংশ করহার অপরিবর্তিত থাকলেও পরবর্তী (২০২৫-২৬) অর্থবছর থেকে ৩০ শতাংশ করহার কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
যদিও মূল্যস্ফীতির চাপ আর অর্থনীতির বাস্তবতায় বিভিন্ন মহল থেকে প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে আরও বাড়ানোর দাবি ওঠে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সেইসব দাবি উপেক্ষা করেন।
সংসদে পাস হওয়া অর্থবিল ২০২৪ অনুযায়ী, আগের মতোই শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করতে পারবেন সংসদ সদস্যরা। প্রস্তাবিত বাজেটে এ ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছিল।
এ ছাড়া অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদদের প্রবল সমালোচনার মুখেও কালো টাকা সাদা করার বিধান শেষ পর্যন্ত বহালই রাখা হয়েছে। এর ফলে আগামী ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ কর প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাই ছাড়াই কালো টাকা সাদা করতে পারবেন। সরকারি কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্ন করতে পারবে না। নতুন বিধান অনুযায়ী, কোনো করদাতা ফ্ল্যাট ও জমির মতো স্থাবর সম্পত্তির জন্য নির্ধারিত হারে কর প্রদান করলে এবং নগদ, সিকিউরিটিজ, ব্যাংক আমানত ও সঞ্চয় স্কিমসহ অন্যান্য সম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
এ ছাড়া ইপিজেডে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ১ শতাংশ হারে শুল্কারোপের প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। এই প্রস্তাবের সংশোধনী আনা হয়েছে পাস হওয়া অর্থবিলে। এতে বলা হয়েছে, আগের মতো ইপিজেডের ব্যবসায়ীরা এই শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবেন। আর কর অব্যাহতি বাতিলের প্রস্তাবেও সংশোধনী আনা হয়েছে। এতেও কর ছাড় থাকছে। এ ছাড়া সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় পেনশন বাবদ যে কোনো আয় এবং পেনশন স্কিমে প্রদত্ত যে কোনো পরিমাণ চাঁদা করের আওতামুক্ত থাকবে। তবে কোম্পানি, তহবিল ও ট্রাস্ট কর্তৃক অর্জিত মূলধনি আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর বসছে। এর আগে প্রস্তাবিত বাজেটে শুধু ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই বিধান রাখা হয়েছিল।
অন্যদিকে একাধিক গাড়ির ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে পরিবেশ সারচার্জ দিতে হবে, কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির জন্য এই বিধান প্রযোজ্য হবে না বলে অর্থবিলে সংশোধন আনা হয়েছে।
নতুন অর্থবিল অনুযায়ী, গত করবর্ষের তুলনায় অন্যূন ১৫ শতাংশ অধিক আয় কেউ যদি রিটার্নে প্রদর্শন করেন, তাহলে তাকে অডিটের আওতামুক্ত রাখা হবে। এ ছাড়া শুধু সিটি করপোরেশনে অবস্থিত কোনো কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল ভাড়া নিলে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এটি সব স্থানের কমিউনিটি সেন্টার বা কনভেনশন হল ভাড়ার ক্ষেত্রে করা হয়েছিল।
কোম্পানির মতো তহবিল ও ট্রাস্টের মূলধনি আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স বসানো হয়েছে।
বাজেট প্রস্তাবে জমি-প্লট-ফ্ল্যাটসহ স্থাবর সম্পত্তি দান বা হেবা দলিলের ওপর উৎসে কর আরোপ করা হয়েছিল। এতে সাধারণ বেচাকেনার মতো হেবা দলিলে সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় এলাকা, জমির শ্রেণি অনুযায়ী হস্তান্তরকারীকে নির্দিষ্ট হারে আয়কর দিতে হতো। সমালোচনার মুখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। অর্থাৎ আগের নিয়মেই উৎসে কর পরিশোধ ছাড়াই আপন ভাইবোন, পিতা-মাতা, ছেলেমেয়ে, স্বামী-স্ত্রী, দাদা-দাদি, নানা-নানি ও নাতি-নাতনির সম্পর্কের মধ্যে সম্পত্তি হস্তান্তরে হেবা দলিল করা যাবে।
এদিকে বাজেট আলোচনার সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য সংকটসহ বৈশ্বিক নানা সংকটের কারণে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও মূল্যস্ফীতিসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এ সময়েই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে। বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।