জুমবাংলা ডেস্ক: গাজীপুরের মকস বিল। বর্ষা মৌসুমে ঐতিহ্যবাহী এই বিলের বিস্তৃত জলরাশি মনকাড়ে পর্যটকদের। পাশাপাশি জেলেদের মাছ শিকার আর পর্যটকদের নৌকা ভ্রমণে শতাধিক পরিবারের রুটি-রুজির মাধ্যম হয়ে ওঠে এই বিল।
তবে এবার বিস্তৃত জলরাশির সিংহভাগ ভরে আছে কচুরিপানায় । এতে হতাশ বিলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, মাঝি, জেলে ও ঘুরতে আসা পর্যটক।
বিলটির অবস্থান গাজীপুর কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ও মধ্যপাড়া ইউনিয়নে। মকস বিলের তিনটি পয়েন্ট শোলহাটি, তালতলী, হাটুরিয়াচালা এলাকা ও তুরাগ নদী হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে শতশত নৌকা, ইঞ্জিন চালিত নৌকা, মিনি বোট চলাচল করে পর্যটক নিয়ে।
বৃহত্তম এই বিলের বুকে রঙ-বেরঙের নৌকায় ভরপুর থাকে বর্ষাকাল। দূর-দূরান্ত থেকে আগত হাজার হাজার পর্যটকদের উপস্থিতিতে এ বিলের কয়েকটি এলাকায় চাঙ্গা হয়ে উঠে ব্যবসা বাণিজ্য। তবে কচুরিপানা থাকায় এবার সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
প্রতিবছর জুন থেকে অক্টোবর পর্যম্ত মকসবিলে থাকে পর্যটকদের ব্যাপক আনাগোনা। এসব পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে বিলের বিভিন্ন পাশে অন্তত অর্ধশত জলকুটির, মাঠার দোকান, রেস্তোরাঁ ও ভাসমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব দোকান হতে এই বর্ষা মৌসুমে কোটি টাকার ব্যবসা করতেন ব্যবসায়ীরা। তবে এবার কচুরিপানা থাকায় ব্যবসা বিঘ্ন তৈরি হওয়ায় হতাশ দোকান মালিকরা।
এছাড়াও বর্ষা ও ঈদ মৌসুমে এসব এলাকার মাঝিরা সারা বছরের আয়ের আশায় প্রস্তুত করেছিলেন ছোট বড় নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা। এখন কচুরিপানার স্তুপের কারণে বিলে নৌকা চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে হতাশা ও বিষন্নতায় কাটছে তাদের সময়। বর্ষা মৌসুমে এই বিল থেকে মাছ ধরেও জীবিকা নির্বাহ করেন আশপাশের জেলে সম্প্রদায়। এ বিলের বিভিন্ন ধরনের মাছের স্থানীয় বাজারে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। তবে কচুরিপানা থাকায় তারাও মাছ ধরতে পারছেন না৷
গ্রিন ক্যাফে রেস্টুরেন্টের মালিক রাজু আহমেদ বলেন, বিলে কচুরিপানা থাকায় নৌকা চলাচল করতে পারছে না। ফলে পর্যটকও আসতে পারে না। এতে আমাদের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। বিল যদি পরিস্কার থাকতো তাহলে বর্তমান যে কাস্টমার রয়েছে তার থেকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেতো।
মকস বিলের ধারে মাঠা বিক্রেতা জুলহাজ বলেন, প্রতিবছর এই সময়ে মাঠা সরবরাহ করে ক্লান্ত হয়ে যেতাম অথচ এ বছর অলস সময় কাটছে। কচুরিপানা না থাকলে বেশি মাঠা বিক্রি করা যেতো। স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও প্রশাসন যদি কোনো পদক্ষেপ নিতেন তাহলে সবার জন্যেই উপকার হতো।
জেলে অবিলাশ চন্দ্র বলেন, আমাদের ২/৩ মাস মাছ ধরা নিষেধ থাকে, ওই সময় আমরা ছোট মাছ ধরি না। যখন সময় আসে তখন মাছ ধরি। কিন্তু এবার কচুরিপানা এতো পরিমাণ যে, এখান হতে মাছ ধরা অসম্ভব।
কৌচাকুড়ি এলাকার নৌকাচালক আসরাফ আলী বলেন, প্রতিবছর এই সময় বিলের যেদিকে যেতাম মানুষ আর মানুষ। প্রতিদিন ২/৩ হাজার টাকা আয় হতো অথচ এবার মাত্র ৫০০/৬০০ টাকা আয় হচ্ছে। সব দোষ এই কচুরিপানার৷ আমার মতো অনেকেই এই তিনমাস নৌকা চালিয়ে কিছু আয় করি কিন্তু এবার আমরা খুব কষ্টে আছি। আপনারা দেখেন কাউকে বলে এটা সরানোর কোন ব্যবস্থা করা যায় কিনা।
সিনাবহ এলাকার বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, মকস বিল গাজীপুরের ঐতিহ্য। বর্ষা মৌসুমে গাজীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা আসেন। পরিবার নিয়ে এটি একটি সুস্থ বিনোদনের মাধ্যম হয়ে উঠে৷ তবে কচুরিপানা থাকায় সেই সৌন্দর্য উপভোগ করা যাচ্ছে না৷ বর্ষার পানিতে যদি সড়ক তলিয়ে যায় তাহলে এই কচুরিপানা ভেসে চলে যাবে, তাছাড়া এটা সরানো কষ্টকর।
মৌচাক ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আরিফুল ইসলাম বলেন, মকস বিল আমাদের ঐতিহ্য। শুষ্ক মৌসুমে ধান চাষ আর বর্ষায় থইথই পানি। এই বিলকে কেন্দ্র করে অনেকেরই জীবিকার অন্বেষণ হয়। এবার কচুরিপানায় একাংশ ঢেকে গেছে এটা সবার জন্যই দুঃখের বিষয়। আমরা এলাকাবাসি ও ইউনিয়নে বিষয়ে নিয়ে কথা বলছি। কিভাবে এটি অপসারণ করা যায় কিংবা সমাধান কি বের করার চেষ্টা করছি।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, বর্ষায় পানি এখন কম, পানি আরও বৃদ্ধি পেলে এটির সমাধান হতে পারে। যদি তাও না হয় তবে এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ দিলে কোন একটা প্রজেক্ট দিয়ে সরানোর ব্যবস্থা করবো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।