জুমবাংলা ডেস্ক: আরও ৩২ হাজার ৯০৪টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের একটি বাড়ি পাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়েছে, কেননা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) তাদের কাছে সরকারি খরচে বাড়ি হস্তান্তর করেছেন। যার মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ১৫০,২৩৩ জন। খবর বাসস’র।
ঈদ-উল-ফিতরের আগে তাঁর উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের আওতায় উপকারভোগীদের দুই শতক জমিতে টিনশেড আধা-পাকা ঘর প্রদান করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি নবনির্মিত বাড়ির দলিল ও চাবি বিতরণ করেন।
তিনি বলেন, ‘আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৩২ হাজার ৪শ’ ৯টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মাঝে জমি ও ঘর দিয়েছি। আমি আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরের উপহার হিসেবে আজ এসব জমি ও ঘর দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার মুজিব বর্ষের কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই দফায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসিত করেছে। তিনি আরো বলেন, ‘ যারা ঘর পেয়েছে, তাদের মুখের হাসি আমি খুব পছন্দ করি’ উল্লেখ করে তিনি সবাইকে বিশেষকরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদেরকে জাতির পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি উন্নত ও সুন্দর জীবন উপহার দিয়ে জনগণের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বেদে, তৃতীয় লিঙ্গ, চা-শ্রমিক, কুষ্ট রোগি, ভিন্নভাবে সক্ষমসহ সুবিধাবঞ্চিত সকল শ্রেণির মানুষকে সুন্দর জীবন উপহার দিতে গৃহায়ণ প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চারটি জেলার চারটি স্থানের সাথে যুক্ত হয়ে সুবিধাভোগী এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতবিনিময় ও করেন।
চারটি স্থান হলো: ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার পোড়াদিয়া বালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, বরগুনা জেলার বরগুনা সদর উপজেলার খেজুরতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ জেলার সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার অধীনে খোকশাবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প।
মুজিববর্ষে সারাদেশে প্রতিটি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে গৃহায়ণের আওতায় নিয়ে আসার সরকারি অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় তিন ধাপে এ পর্যন্ত ১৫০,২৩৩টি বাড়ি বিতরণ করা হয়েছে।
২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারী, ৬৩,৯৯৯টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার প্রথম ধাপের অধীনে ঘর পেয়েছিল এবং ৫৩,৩৩০টি পরিবার। গত বছরের ২০ জুন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদের মাথার উপর একটি ছাদ পেয়েছে।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের আওতায় সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মধ্যে আরও ৬৫,৬৭৪টি ঘর বিতরণের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এর মধ্যে, প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই আজ ৩২,৯০৪টি বাড়ি হস্তান্তর করেছেন। সারা দেশের ৪৯২টি উপজেলায় এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১,১৭,৩২৯টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে এবং ২০২১-২০২২ সালের চলতি অর্থবছর পর্যন্ত ১,৮৩,০০৩টি বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন, গৃহহীন, হতদরিদ্র ও উৎপাটিত পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে জমি ও বাড়ির মালিকানা দেয়া হয়।
প্রতিটি ইউনিটে দ’ুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট এবং একটি বারান্দা রয়েছে, যার মূল্য ২৫৯,৫০০ টাকা কর ও ভ্যাট ছাড়াই। ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ এর পরিমাণ ৩৩০,০০০ টাকা।
আশ্রয়ণ-২ এর তৃতীয় পর্বে বাড়িগুলোকে আরও টেকসই এবং জলবায়ু সহনশীল করতে সরকার খরচ বাড়িয়েছে এবং নকশায় পরিবর্তন এনেছে।
বাড়িগুলিকে আরও টেকসই করতে প্রতিটি বাড়ির জন্য খরচ ১,৯১,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২,৫৯,৫০০ টাকা করা হয়েছে।
সরকার বাড়িগুলিকে আরও টেকসই করার জন্য শক্তিশালী গ্রেট-বিম, লিন্টেল এবং আরসিসি পিলার বিশিষ্ট বাড়িগুলি নির্মাণ করেছে।
চলতি অর্থবছর পর্যন্ত বাড়ি নির্মাণে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৯৭২ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
খাস জমি ছাড়াও গৃহহীন ও ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার ১৬৮ দশমিক ৩২ একর জমি কিনেছে। ইতিমধ্যেই জমি কেনার জন্য ১১৫ দশমিক ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
সরকার প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণের জন্য সারাদেশে অবৈধ দখল থেকে ২,৯৬৭ কোটি ৯ লাখ টাকা মূল্যের ৫,৫১২.০৪ একর খাস জমি উদ্ধার করেছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে, ১৯৯৭ থেকে মার্চ, ২০২২ পর্যন্ত মোট ৫,০৭,২৪৪ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে এবং পুনর্বাসিত পরিবারগুলিকে তিন মাসের জন্য ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে।
পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন উৎপাদনশীল এবং আয়বর্ধক কর্মকা-ে নিয়োজিত করার জন্য ব্যবহারিক এবং প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ক্ষুদ্রঋণ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা যেমন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, সমবায়, মহিলা ও শিশু অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে বিতরণ করা হয়।
পুনর্বাসিত পরিবারগুলোর জন্য বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে এবং প্রকল্পের জায়গায় নিরাপদ পানির জন্য নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।
কমিউনিটি সেন্টার, প্রার্থনা ঘর এবং কবরস্থান, পুকুর এবং অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য রাস্তা দিয়ে আবাসন প্রকল্পগুলোকে সহজতর করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান গনভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।