করোনাভাইরাস মহামারীতে অচল গোটা বিশ্ব। হু হু করে বাড়ছে রোগী ও মৃতের সংখ্যা। বিশ্বের অন্তত ১৩১টি দেশে চলছে লকডাউন। এতে দেশগুলোর অর্ধেকের বেশি মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ইউরোপ ও আমেরিকার। বেশিরভাগ মৃত্যু হয়েছে এ দুই মহাদেশে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও স্পেনে প্রতিদিন মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হচ্ছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। শনিবার পর্যন্ত বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১১ লাখ। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ লাখ ৩৪ হাজারের বেশি। ফ্রান্সে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ শতাধিক সেনা সদস্য। চীনে দ্বিতীয় দফায় করোনা ছড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তুরস্কে ২০ বছরের কম বয়সীদের জন্য কারফিউ জারি করেছে দেশটির সরকার। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের।
বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ইতালিতে- ১৪ হাজার ৬৮১ জন। এরপরই আছে স্পেন। দেশটিতে মারা গেছেন ১১ হাজার ৭৪৪ জন। ইতালি ও স্পেনের পর বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৭ হাজার ৪০৩ জন। মৃতের সংখ্যায় এরপর যথাক্রমে রয়েছে- ফ্রান্সে ৬ হাজার ৫০৭ জন, যুক্তরাজ্যে ৩ হাজার ৬০৫ জন, ইরানে ৩ হাজার ৪৫২ জন, চীনে ৩ হাজার ৩২৬ জন।
জন হপকিনস ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড ১ হাজার ৪৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত বিশ্বের আর কোনো দেশ একদিনে এত মৃত্যু দেখিনি। দেশটিতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা নিউইয়র্ক শহরের। মোট মৃত্যুর ১ তৃতীয়াংশ এ শহরেরই। শুক্রবার নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডে ব্লাসিও বলেন, আমাদের আরও খারাপ অবস্থা মোকাবেলার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। তিনি সরকারের কাছে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য অনুরোধ জানান। ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বের অন্যান্য দেশে মারা গেছেন যথাক্রমে- ফ্রান্সে ১১২০, স্পেনে ৮৫০, ইতালিতে ৭৬৬, যুক্তরাজ্যে ৬৮৪ ও ইরানে ১৫৮ জন।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে আক্রান্ত ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫২২ জন। এরপর যথাক্রমে রয়েছে- স্পেনে ১ লাখ ২৪ হাজার ৭৩৬, ইতালি ১ লাখ ১৯ হাজার ৮২৭, জার্মানি ৯১ হাজার ১৫৯, ফ্রান্স ৮২ হাজার ৬২৩, চীন ৮১ হাজার ৬৩৯ ও ইরানে ৫৫ হাজার ৭২৬ জন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসের এক ব্রিফিংয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এ রোগের সংক্রমণ বিষয়ে আগে যা ভাবতাম তার বদল ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো লক্ষণ ছাড়াই অনেকে করোনা সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। তাই মাস্ক পরাই ভালো কাজ।’ তবে একই সঙ্গে মাস্ক পরার প্রতি নিজের অনীহার কথাও জানান তিনি। ট্রাম্পের যুক্তি, ‘অফিসে বসে মাস্ক পরে কাজ করা কার্যত অসম্ভব। তাই আমি এটা পালন করতে রাজি নই।’
মাস্কের ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলে বাজারে এর ঘাটতি দেখা দেয়ার আশঙ্কা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। এজন্য মাস্ক না পেলে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ট্রাম্পের ভাষায়, ‘কাপড়ের ঘনত্বের বিচারে স্কার্ফ মাস্কের ভালো বিকল্প।’
ফ্রান্সের ছয় শতাধিক সেনা সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লি শনিবার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি দিন দিন আরও বিস্তার লাভ করছে এবং আমরা তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। তবে আমাদের সামরিক বাহিনীর কার্যক্রমে এতে কোনো প্রভাব পড়েনি।
ভারতের মুম্বাইয়ে এশিয়ার বৃহত্তম বস্তিতে করোনা আক্রান্ত একজনের মৃত্যুর পর দেশটির শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন। করোনার ব্যাপক সংক্রমণ ঠেকাতে ভারত যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে মৃতের দিক দিয়ে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে পারে দেশটি।
দ্বিতীয় দফায় করোনার সংক্রমণ ছড়ানোর বিষয়ে চীনকে সতর্ক করলেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলেছেন, দেশটি প্রথম ধাক্কা সামলে উঠলেও এখন আবার সেখানে সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে। এছাড়া হংকং, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে প্রথম দিকে সংক্রমণ ততটা না ছড়ালেও এখন বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা ইরানের। দেশটিতে তিন সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি ৫৫ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। তবে দেশটির বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে।
তুরস্কে ২০ বছরের কম বয়সীদের জন্য কারফিউ : করোনা মোকাবেলায় আরও শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে তুরস্ক। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ২০ বছরের কম বয়সীদের জন্য কারফিউ ঘোষণা করে দেশটি। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান জনগণের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ নির্দেশ দেন। জনসমাগম এলাকায় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে ৩১ শহরের সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিন ওই শহরগুলোতে কেউ ঢুকতে পারবে না এবং সেখান থেকে কেউ বের হতে পারবেন না। তবে চিকিৎসা ও জরুরি সেবার ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। তুরস্কে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৪২৫ জনের।
আক্রান্ত সিএনএন উপস্থাপিকা : করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন মার্কিন সম্প্রচার মাধ্যম সিএনএনের উপস্থাপিকা ব্র“ক বাল্ডউইন। শুক্রবার ইনস্টাগ্রাম নিজের অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এ খবর জানান তিনি। বাল্ডউইন লেখেন, হঠাৎ করে সর্দি, মাথাব্যথা, জ্বরের উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করাই। পরে করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে। তবে আমি ঠিক আছি।
ইউরোপের ৯৫ শতাংশ মৃত ষাটোর্ধ্ব : ইউরোপে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের ৯৫ শতাংশের বয়স ষাটের বেশি। তাই বলে তরুণ প্রজন্মও বিপদমুক্ত নয়, কারণ করোনা বয়স দেখে হচ্ছে না। এমন তথ্য দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান হান্স ক্লুজ। ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে এক অনলাইন সাংবাদিক বৈঠকে ক্লুজ বলেন, করোনা শুধু বয়স্ক মানুষদের আক্রমণ করছে বলে যা ভাবা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। এ রোগ থেকে তরুণরাও নিরাপদ নন। ১০ থেকে ৫০ শতাংশ ৫০ অনূর্ধ্ব মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ১৩-১৯ বছর বয়সের মধ্যে বা যাদের বয়স ২০ বছরের মধ্যে, তাদেরও অনেকে করোনায় গুরুতর অসুস্থ। অনেকে ইনটেনসিভ কেয়ারে রয়েছেন, কয়েকজনের মৃত্যুও ঘটেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।